জুন
প্র: জয়লাভের পর কি চাপমুক্ত?
উ: জয়লাভের পরে অবশ্যই একটা থ্রিল ফ্যাক্টর কাজ করে। আমার সিটটা তো খুব সহজ ছিল না। রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে সেটা জিততে হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে ওই সিটটা (মেদিনীপুর) খুব প্রেস্টিজিয়াস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে সিটটা জিতে দিদিকে উপহার দিতে পেরে আমি খুব খুশি।
প্র: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বললেন?
উ: দিদি কম কথার মানুষ। অ্যাসেম্বলিতে বললেন যে, তিনি কতটা খুশি হয়েছেন। দিদি বারবার বলেছেন যে, আমরা যেন আমাদের কেন্দ্রের মানুষের পাশে থাকি। মানুষ আমাদের পক্ষে যে রায় দিয়েছেন, তার মর্যাদা যেন রাখতে পারি। বাংলার মা-বোনদের সুরক্ষিত ও ভাল রাখাটাও আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য।
প্র: আপনার কেন্দ্র তো অনেকটা দূর! যাতায়াত করছেন রোজ?
উ: এটা আর আমার দূরত্ব বলে মনেই হচ্ছে না। আমার কলকাতার বাড়ি থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাই। ওখানে একটা বাড়ি ভাড়া নেব ঠিক করেছি। কারণ কাজ করার জন্য সপ্তাহে কয়েকদিন ওখানে থাকতেই হবে।
প্র: তা হলে শুটিং করবেন কী ভাবে?
উ: শুটিং আপাতত স্থগিত রাখব। কারণ আগে আমার কাজ সামলাতে হবে। দিদি আমার উপরে যে ভরসা রেখেছেন, মানুষ আমায় যে বিশ্বাস করেছেন, সেই ভরসা তো রাখতেই হবে। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা সকলেই জানেন আমি যে কাজটা করি, মন দিয়ে করি। ‘সাঁঝের বাতি’র শুটিং কিছুদিন বন্ধ রাখব, চ্যানেল ও প্রোডাকশন টিমও মানিয়ে চলার চেষ্টা করছে। আবার ধীরে ধীরে হয়তো ব্যালান্স করব। এখন বেশির ভাগ সময়টাই আমার নির্বাচনী এলাকায় থাকব, কারণ আমাকে ওখানে এখন বেশি দরকার। কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলা করা, ওখানকার মানুষকে দেখাই আমার প্রাথমিক কর্তব্য। এটা তো আমার পেশা নয়। রাজনীতি কারও পেশা হতে পারে না। তাই এখন আমার পেশাকে ব্যাকসিটে রেখে মানুষের কাজকে সামনে রাখলাম।
প্র: রাজনৈতিক রং নির্বিশেষে ইন্ডাস্ট্রির কে কে আপনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন?
উ: কাঞ্চনা মৈত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকে। আমাকে যখন প্রার্থী ঘোষণা করা হল, তখন রুদ্রনীল ঘোষও আমাকে মেসেজ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমার এই পঁচিশ বছরের জার্নিতে কারও সঙ্গে তো কোনও দিন ঝগড়া হয়নি, সকলেই মন থেকে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাজনীতির ক্ষেত্রটা আলাদা। তার জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনও জায়গা নেই।
প্র: জয়লাভের পরে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শমিত দাসের বাড়িতেও তো গিয়েছিলেন...
উ: আমি ঠিকই করেছিলাম যে, জয়লাভ করি বা পরাজিত হই— ফুল-মিষ্টি নিয়ে ওঁর বাড়িতে যাব। আমাদের দলের সদস্যদেরও বলে রেখেছিলাম। জয়লাভের পরে গিয়ে মিষ্টি খাইয়ে এসেছি। উনি বিরোধী পক্ষের নেতা হতে পারেন, কিন্তু উনিও তো একজন মানুষ। তবে এটা কোনও প্রচার পাওয়ার জন্য করিনি, সৌজন্যবোধ থেকেই করেছি।
প্র: তা হলে আপনার কাজে বিরোধীপক্ষ পাশে থাকবে? কী মনে হয়?
উ: আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। ভায়োলেন্স একদম পছন্দ করি না। ভাগ্য খুব ভাল যে, আমার কেন্দ্রে প্রচারের সময়ে বা ভোট চলাকালীন কোনও হিংসা দেখা যায়নি। বারবার আমার দলের সদস্যদের বলেছিলাম যে, ‘প্ররোচিত হবেন না। কেউ প্ররোচিত করার চেষ্টা করলে আপনারা সেখান থেকে হেসে বেরিয়ে যাবেন। কারও ফাঁদে পা দেবেন না।’ ওঁরা সেটা বজায় রেখেছেন। জয়ের পরেও দলীয় সমর্থকদের বারবার বলে দিয়েছিলাম যে, আমাদের তরফ থেকে যেন কোনও ভায়োলেন্স না হয়। ওঁরা সেটা মেনে চলেছেন। কিন্তু সকলেই মানুষ। কিছু স্ট্রেঞ্জ কেস শুরু হয়েছিল। তখনই আমি গিয়ে সেগুলো থামিয়ে দিই। শমিতদাকেও বলে এসেছিলাম যে, ‘আপনিও দেখবেন যাতে আপনার ছেলেরা আমার ছেলেদের ইনস্টিগেট না করে।’ তিনি কথা দিয়েছিলেন। এখন গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমার কেন্দ্রে কোনও ভায়োলেন্স নেই।
প্র: কিন্তু ভোট-পরবর্তী বাংলায় হিংসার ছবিও তো দেখা গিয়েছে...
উ: এটা করানো হচ্ছে, একটা আলাদা মেশিনারি কাজ করছে। যেগুলো ফেক, সেগুলো তো রিপোর্ট করাও হচ্ছে। কিছু মানুষ তো দায়িত্বই নিয়ে নিয়েছেন এটা করার। এঁরা যদি পরাজয় মেনে নিতে না পারেন, তা হলে তো কিছু করার নেই। সবেতেই হার-জিত আছে। সেটা মেনে নিতে হয়। এত ভোট তো ম্যানিপুলেট করে পাওয়া যায় না, এটা ভালবাসার জয়।
প্র: অতিমারি মোকাবিলায় কোনও পদক্ষেপ করছেন?
উ: সত্যি কথা বলতে, আমার এলাকায় এখনও পরিস্থিতি অতটা সঙ্কটজনক নয়। তাই মাস্ক বিতরণ ও মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা এখন মূল লক্ষ্য। তা ছাড়া ওখানকার ডিএমের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এই সপ্তাহেই আমি মেদিনীপুরে চলে যাব, ওখানে গিয়ে ক্যাম্প শুরু করার ইচ্ছেও আছে।