নীরজ
প্র: (কলকাতার সাংবাদিক শুনে ফোনে প্রথম কথা ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন) বাংলা কি বলতে পারেন?
উ: বাংলা বুঝতে পুরোটাই পারি। তবে বলতে পারি অল্প অল্প। আমার রক্তে পারসি আর ওড়িয়া দুটো কমিউনিটি রয়েছে। বড় হওয়ার সময়ে কলকাতায় বছর চারেক ছিলাম। আমার পিসি ও আই (ঠাকুমা) ভাল মতো বাংলা সাহিত্য পড়তেন। তাই ছোটবেলায় শোনা অনেক গল্পই বাংলার সাহিত্যিকদের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ছবি দেখেই সিনেমা দেখার বোধ তৈরি হয়েছিল।
প্র: এখনকার বাংলা ছবি দেখেন?
উ: ‘ময়ূরাক্ষী’ দেখেছি। খুব ভাল লেগেছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো লেজেন্ড। প্রসেনজিৎও (চট্টোপাধ্যায়) খুব ভাল কাজ করেছেন।
প্র: মিলেনিয়াল প্রজন্মের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম কি আপনাকে নতুন করে আবিষ্কার করল?
উ: আমার ছবির দর্শক বরাবরই একটি শ্রেণিতে আবদ্ধ ছিল। একটা সময় অবধিও আমজনতা কিন্তু আমার দর্শক ছিলেন না। ‘শিপ অব থিসিয়াস’-এর সময়ে আমি দেশ-বিদেশে অনেক প্রশংসা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা সব স্তরের মানুষের কাছ থেকে নয়। ওয়েবের দৌলতে বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছেছি। তাই ওয়েবের অবদানকে অস্বীকার করব না।
প্র: কেরিয়ারের সেরা সময় কি এটাকেই বলবেন?
উ: না। দ্য বেস্ট ইজ় ইয়েট টু কাম। কেরিয়ারের জন্য এটা খুব ভাল সময়। তবে কনটেন্ট, কোয়ালিটি এবং চরিত্রের গভীরতার নিরিখে বিচার করলে এখনও অনেক কিছু আমার দেওয়া বাকি। তার মানে আমার মাথায় যে নির্দিষ্ট কোনও চরিত্র ভাবা রয়েছে, তা কিন্তু নয়।
প্র: ‘তলওয়ার’, ‘হিচকি’... এই ছবিগুলোর পরে আপনি অনেক বেশি মেনস্ট্রিম ছবির ধারায় চলে এসেছেন। ইন্ডিপেন্ডেট ছবি থেকে এই ধারায় আসার জার্নি কতটা উপভোগ করেন?
উ: এখন অনেক বেশি হ্যাপেনিং স্পেসে রয়েছি। আমার ‘শিপ অব থিসিয়াস’ যে সংখ্যক দর্শক দেখেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ দেখেছিলেন ‘তলওয়ার’। দর্শকের সংখ্যা বাড়ার ফলে নানা ধরনের চরিত্রও আমার কাছে এসেছে। তবে দু’টি ঘরানার তুলনা করলে বলব, এর মধ্যে একটি ভারসাম্য রয়েছে। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফ্রিডম’-এ কাজ করলাম, যা বছরের শেষে মুক্তি পাওয়ার কথা। ওয়েবে তো করছিই।
প্র: লকডাউনের কারণে ওয়েব প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়েছে। আবার বড় পর্দার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে। কী ভাবছেন?
উ: লকডাউন উঠলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, সিনেমা আবার তার জায়গা ফিরে পাবে। ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে এই অন্তর্বর্তী সময়টুকু ওয়েব উপভোগ করছে।
প্র: ‘পাতাল লোক’-এ আপনি সাংবাদিক সঞ্জীব মেহরার চরিত্রে। সাংবাদিকতা নিয়ে অনেকের মনে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। চরিত্রটা করতে গিয়ে সেই ধারণার আঁচ কতটা পেলেন?
উ: সঞ্জীব ওল্ড স্কুল অব জার্নালিজ়মের ছাত্র। সে তার সময়ের পোস্টার বয়। সাহসিকতা আর শক্ত শিরদাঁড়াই তার জোরের জায়গা। কিন্তু পরিস্থিতি বদলালে, তার চ্যানেল তাকে সরিয়ে দিতে চায়। সঞ্জীব এ বারও ক্ষমতায় ফেরে কিন্তু শিরদাঁড়া সোজা রেখে নয়। চরিত্রটার সঙ্গে ‘ম্যাকবেথ’-এর উত্থান-পতনের তুলনা আসতে পারে। এখনকার সাংবাদিকতার সঙ্গে আগেকার সাংবাদিকতার অনেক ফারাক। টিআরপির জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিনোদনের মাত্রা বেড়ে যায় সাংবাদিকতায়। তবে অন্য সব পেশার মতোই এখানেও দুর্নীতি রয়েছে। এক দল শুধু সেটার কথাই বলে। অন্য দল আবার সংবাদমাধ্যমের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে।
প্র: কলকাতার স্মৃতি বলতে কী মনে পড়ে আপনার?
উ: মুম্বইয়ে আমার স্ট্রং ফ্যানবেস রয়েছে। কিন্তু কলকাতার মানুষ মনের খুব কাছের। নন্দনে গৌতম ঘোষের ‘রাহগির’-এর প্রিমিয়ারে যে ভাবে হাউসফুল হল হাততালি ও সিটি দিচ্ছিল, এমন ভালবাসা আমি আগে পাইনি। অনেক বছর আগে ঠাকুরবাড়িতে নন্দিতা দাশের সঙ্গে একটি নাটকে পারফর্ম করেছিলাম। কলকাতার দর্শক বরাবরই বুদ্ধিদীপ্ত, সংস্কৃতিমনস্ক। আর ছোটবেলা থেকেই বাঙালি কালচারের আবহে বড় হওয়ায়, বাঙালি শুক্তো-ঘণ্ট-ডালনা সবই আমার প্রিয়। লোখন্ডওয়ালায় প্রায়ই বাঙালি রেস্তরাঁয় আমি খাই (হাসি)।