Kanchan Mullick

মেয়ে সাজতে অনেক কিছু ভেতরে পরতে হয়, সব নিজে কিনে দিয়েছে পিঙ্কি: কাঞ্চন

সদ্য ‘পিসি’ অবতার তাঁর। স্ত্রী পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেকআপ কিটে সেজে এতটাই নিখুঁত ‘কাঞ্চনা’ যে, প্রতিযোগীও ভুল করে তাঁর কোমর জড়িয়ে ধরেন! ফোনে খোদ শ্বশুরমশাইয়ের কমপ্লিমেন্ট, ‘‘তোমায় ভীষণ সুইট দেখাছে!’’ আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ফাঁস করলেন কাঞ্চন মল্লিক। সদ্য ‘পিসি’ অবতার তাঁর। স্ত্রী পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেকআপ কিটে সেজে এতটাই নিখুঁত ‘কাঞ্চনা’ যে, প্রতিযোগীও ভুল করে তাঁর কোমর জড়িয়ে ধরেন! ফোনে খোদ শ্বশুরমশাইয়ের কমপ্লিমেন্ট, ‘‘তোমায় ভীষণ সুইট দেখাছে!’’ আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ফাঁস করলেন কাঞ্চন মল্লিক।

Advertisement

উপালি মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২০ ১৮:০১
Share:

অন্য অবতারে কাঞ্চন মল্লিক।

রচনার পাশে কাঞ্চনা!

লাল শিফন, লিপস্টিক, শ্যাডো, হাত খোঁপা থেকে নাকে পাথরের নাকছাবি। হাঁটাতেও লাস্য! জি বাংলার ‘দিদি নম্বর ১’-এ এই সুন্দরীই নাকি শোয়ের উত্তেজনা বাড়িয়েছেন। কে তিনি? আট টু আশি বলছে, কাঞ্চন মল্লিক! তাই কি? না কি রচনার পাশে ‘কাঞ্চনা’! উত্তর এল: ‘‘ধুর! রচনার পাশে কাঞ্চনা কখনও হওয়া যায়! ১০ বছর ধরে ৮টি সিজন তাঁর জোরেই জনপ্রিয়।’’ তা হলে এই নয়া সংযোজন? কাঞ্চনের উদাহরণ কপিল শর্মার শো, ‘‘কপিলের পাশে নভজ্যোৎ সিং সিধু, অর্চনা পূরণ সিংহ যেমন থাকেন আমিও তাই-ই।’’ সিফন, হেয়ার ডু, মেকআপে স্লিম-ট্রিম রচনা নিত্য দিন রঙিন। তাঁর পাশে ‘পিএনপিসি’-র ‘পিসি’ সাজ
ক্যারি করা চাপের? ‘‘আমি তো ‘রচনা বনাম’ হওয়ার চেষ্টা করছি না! ওঁর সঙ্গে বহু কাজ করেছি। ফলে, স্বাচ্ছন্দ আছে। এর আগেও মেয়ে সেজেছি। তাই, ক্যারি করতে কোনও অসুবিধে নেই’’, উত্তর কাঞ্চনের।



কোমরে হাত দেবেন না... প্লিজ

পয়লা দর্শনেই নাকি ‘পিসি’ হিট? হাড়ে হাড়ে সেটা টের পাচ্ছেন, জানালেন কাঞ্চন। বিশদে বলতে গিয়ে হাসি সামলানো দায়, ‘‘ভাই বোন’ পর্বে র‌্যাম্পে হাঁটা ছিল। এক প্রতিযোগী ‘ভাই’ আমার কোমর জড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেছিলেন! বাধ্য হয়ে আস্তে বললাম, মেয়ে সাজতে অনেক কিছু পরতে হয়েছে। কোমরে হাত দেবেন না, প্লিজ!’’ এর থেকেও বড় পাওনা শ্বশুরমশাইয়ের কমপ্লিমেন্ট। ফোনে বাবাজীবনকে তাঁর মন্তব্য, ‘‘তোমায় ভীষণ সুইট দেখাছে!’’

প্রশংসা পেতে ১০০ পর্ব হাতে কাঞ্চনের। রবিবারের স্পেশাল এপিসোডে তিনি এক এক অবতারে। ইতিমধ্যেই কার্তিক, কৃষ্ণ— কত কি সেজে ফেলেছেন! রোজ ‘কার দৌড় কত দূর’-এ ‘পিসি’ হয়ে আসছেন খেলায় অংশ নিতে।



শোলে-র ৪৫, ৫০০ পর্বে কাঞ্চন গব্বর

Advertisement


শোয়ের ৫০০তম পর্বে তিনি ‘শোলে’র গব্বর সিং! ‘শোলে’ বললেই কী মনে হয়?

নস্টালজিক কাঞ্চন, “৪৫ বছর ধরে একটা ছবি এন্টারটেনমেন্টের টোটাল প্যাকেজ! গান, অভিনয়, মারামারি, রোম্যান্স, বন্ধুত্ব, মুখ্য অভিনেতারা ছাড়াও এ কে হাঙ্গল, জগদীপ, আসরানির মতো চরিত্রাভিনেতারাও সুপারহিট একটা সিনেমার জোরে। কুর্নিশ ‘শোলে।’’ নিজেই ৯-১০ বার ‘গব্বর’ সেজেছেন নানা শোয়ে, গর্বের সঙ্গে জানালেন অভিনেতা।

আরও পড়ুন: মুম্বই মাফিয়াদের চাপে সুশান্তের গভীর প্রেম থেকে সরে আসতে বাধ্য হন সারা, বিস্ফোরক স্যামুয়েল

Advertisement

লোকে দেখছেন, প্রশংসা করছেন, ভাল লাগছে। এটুকুতেই খুশি কাঞ্চন।


‘লোক হাসানো’য় রেটিং বাড়ল?

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো স্টারের পাশে ‘নারী’ চরিত্র কি ‘লোক হাসানো’য় রেটিং বাড়াল? লোকে দেখছেন, প্রশংসা করছেন, ভাল লাগছে। এটুকুতেই খুশি কাঞ্চন। রেটিং নিয়ে কোনও দিনই মাথা ঘামাননি, আজও ঘামাচ্ছেন না।



ভাল অভিনেতা, তবু দিনের শেষে কাঞ্চন ‘ভাঁড়’!

পাল্টা প্রশ্ন অভিনেতার, ‘‘২৪ বছর অভিনয়ের পরে এ সব ভেবে অবসাদে ডোবার কোনও মানে হয়?’’ এখন আফসোস হলেই তাই মনে করেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনি’, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’, সায়ন্তন ঘোষালের ‘টেনিদা’, বা নাটক ‘ম্যাকবেথ’, ‘মীরজাফর’, ‘একদিন আলাদিন’, ‘থানা থেকে আসছি’ বা ওয়েব সিরিজ ‘মন্টু পাইলট’-এর ‘তৌফিক’-কে। আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠেন।

যত হাসি তত কান্না...

এটাই নাকি কমেডিয়ানের জীবনের মোক্ষম সত্য? ‘‘খাঁটি কথা বলেছেন’’, মেনে নিলেন কাঞ্চন। উদাহরণ, মায়ের মৃত্যুর পরের দিনে কান্না চেপে কমেডি দৃশ্যে অভিনয়। ‘‘অসুস্থ মা নার্সিংহোম থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। ৪ জুলাই, মঙ্গলবার ঘুমের মধ্যে শেষ। জানেন, সে দিন আমার গ্যাপ ছিল ওয়েব সিরিজের শুটিংয়ে। মা যেন আমার মুখ চেয়ে বেছে বেছে ওই দিন চলে গেলেন! যাতে কাজের অসুবিধে না হয়। দাহ করে পরের দিন আবার ডায়মন্ড হারবার।’’

পারলেন কী করে?
অভিনয়ের প্রতি কমিটমেন্ট থেকে, উত্তর কাঞ্চনের। ওই দিনের পর আর লোকেশন পাওয়া যেত না। না গেলে প্রচুর ক্ষতি হত ইউনিটের।



ওটিটি থেকে ফিডব্যাক বেশি পাচ্ছি

ছবি, সিরিজ মুক্তির অন্যতম মাধ্যম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বিনোদনের সাড়ে সর্বনাশ করছে, না উপকারী বন্ধু? ‘‘আমায় তো সিনেমার থেকেও বেশি দিয়েছে ওটিটি। ‘মন্টু পাইলট’ সিরিজের ‘তৌফিক’ চরিত্রে হাড়হিম ভিলেনি করার সুযোগ পেলাম ওটিটি-র দৌলতেই। কী করে বলি, খারাপ করছে? অ্যাডাল্টরি হয়তো থাকছে বেশি, কিন্তু এ দেশ, ও দেশ, এক সঙ্গে এক ছাদের নীচে সিনেমা, সিরিজ দেখছে। আমি নিজে প্রচুর ফিডব্যাক পেয়েছি। নইলে হাতেগোনা কিছু পরিচালকের ছবি
ছাড়া হলে সিনেমা দেখতে এখন ক’জন আসেন?’’ যুক্তি কাঞ্চনের।

ওটিটি-তে নতুন কী করছেন? ‘রহস্য রোমাঞ্চ ২’, নাম ঠিক না হওয়া আরও একটি সিরিজ, জানালেন অভিনেতা।

আরও পড়ুন: ‘চরিত্র বোঝাতে অন্তর্বাস দেখানো জরুরি?’ ট্রোলড স্বস্তিকা

‘দিদি নম্বর ১’-এ রচনা ও কাঞ্চন।


সিরিয়ালে অরুচি?

কাঞ্চন মল্লিককে রিয়্যালিটি শো বা অ্যাওয়ার্ড শো সঞ্চালনায় যত দেখা যায় ধারাবাহিকে তত নয়। ‘‘এ মা, এ কী বলছেন? সে সব কিছুই না। একটা সময় মেগার কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না। সকাল থেকে শুরু হয়ে মাঝ রাত পেরিয়ে যেত। শুটিং চলত। আমি আর অন্য কোনও কাজ করতে পারতাম না। তাতে পাগল পাগল দশা! তখনই ঠিক করলাম, সব করব। সিরিয়াল বাদে। সেটাই করছি,’’ অকপট অভিনেতা।



নিউ নর্মালে ‘অ্যাবনর্মাল’ কাঞ্চন...

টালিগঞ্জ সূত্রে প্রাপ্ত এই খবর। যাচাই করতে কাঞ্চনকে বলতেই অট্টহাসি, ‘‘বউ-বাচ্চার থেকে আলাদা ২-৩ মাস। বাবার কাছে থাকে পিঙ্কি, ওশ সেখানেই। ভিডিয়ো কলে কথা হত। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামিনি এতগুলো দিন। উপরে উঠেছি ছাদে যাওয়ার জন্য। আর যেগুলোর থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম, যেমন বই পড়া, গান শোনা, সেগুলোকে জাপটে বেঁচেছি। কাঞ্চন তো এমন জীবন বহু যুগ পরে ফিরে পেল করোনার করুণায়! অনেকের কাছে ‘অস্বাভাবিক’ লাগতেই পারে!’’

লকডাউন উঠতেই প্রথমে শ্বশুরবাড়ি। ছেলে আধ ঘণ্টা নাকি গলা জড়িয়েছিল অভিনেতা বাবার। সব কথা সে দিনই বলা চাই তার।



যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে...

সাক্ষাৎকার দিতে দিতেই বার দু’য়েক পিঙ্কির ফোন। কিসে ব্যস্ত? কার সঙ্গে এত কথা? ত্রস্ত উত্তর, ‘‘ইন্টারভিউ দিচ্ছি হোয়াটসঅ্যাপে!’’ স্ত্রীকে সামলিয়ে কাঞ্চনের মন্তব্য, পাক্কা গোয়েন্দা।

সপরিবার অভিনেতা।

কেন? পরকীয়া প্রেম-ট্রেম আছে নাকি?

‘‘শুধু অক্সিজেন টেনে অভিনেতা! প্রেম হয়েছে নাকি কস্মিন কালে?’’ বিস্মিত খোদ কাঞ্চন। জানিয়ে দিলেন, তাজা থাকতে, অনুপ্রেরণা পেতে নাইট্রোজেন, হিলিয়াম যা পাই তাই-ই ফুসফুস ভরে নিয়ে নিই।

এটা নাকি পিঙ্কিও মনে করেন? হতেই পারে। থাকলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ছাড় পাবে, দাবি অভিনেতার। বললেন, সবারই একটা কনফেশন বক্স লাগে। পিঙ্কির লাগলে মেনে নেবেন সেটা? ‘‘এটাই তো বন্ডিং’’, সাফ জবাব তাঁর।



দায় নেই... দায়িত্ব আছে

আগামী পাঁচ বছরের ছক কষেছেন কাঞ্চন? যেন ভীষণ মজার প্রশ্ন শুনলেন এমন ভাবে উত্তর দিলেন, করোনা হিসেব কষছে। তিনি না। তার পর সিরিয়াস গলা, ‘‘২০১৭-য় বাবা গেলেন। ২০২০-তে মা। এত দিন আমাদের বাড়ির দেওয়ালে নার্সিংহোম, অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর লেখা চার্ট ঝোলানো থাকত। মাকে দাহ করে ফিরে সেটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি। পিঙ্কিকে বলেছি, শেষ দিন পর্যন্ত মা-বাবকে সঙ্গ দিয়েছি। আমার দায় শেষ। বাকি, তোমার আর ছেলের দায়িত্ব পালন।’’

সাক্ষাৎকারের শেষে আর একটি বোমা ফাটালেন ‘পিসি’, পুরুষ থেকে নারী হতে তাঁকে নাকি অনেক সাহায্য করেছেন পিঙ্কি! কী ভাবে? ‘‘মেয়ে সাজতে অনেক কিছু ভেতরে পরতে হয় আমাদের। সে সব নিজে হাতে কিনে দিয়েছে পিঙ্কি’’, স্বীকারোক্তি কাঞ্চনের। তার থেকেও বড় অঘটন, অভিনেতা বৌ তাঁর মেকআপ কিট দিয়ে দিয়েছেন! লাইনার, শ্যাডো, ব্লাশ অন, লিপস্টিক শেড, কন্টোর... স-ব। ‘‘একটা মেয়ে চট করে নিজের কিট শেয়ার করতে চায় না। পিঙ্কি অবলীলায় দিয়ে বলল, আমার তো এখন কাজ নেই। তুমি বরং ব্যবহার কর।’’

বলতে বলতে তৃপ্তিতে গলা কি বুজে এল কাঞ্চন মল্লিকের?

ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement