ছবি-সিরিজ় মিলিয়ে ব্যস্ত বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। কাজ থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মুখোমুখি তিনি
Bikram Chatterjee

Bikram Chatterjee: ‘সিনিয়ররা মুম্বইয়ে বেশি কাজ করছেন বলে হয়তো আমরা কলকাতায় বেশি কাজ করছি’

ছবি-সিরিজ় মিলিয়ে ব্যস্ত বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। কাজ থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মুখোমুখি তিনি

Advertisement

নবনীতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৫৮
Share:

বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

প্র: অতিমারির পরে তো আপনার ঝুলিভর্তি ছবি...

Advertisement

উ: হ্যাঁ। অনেক দিন পরে কিছু ভাল কাজ পাচ্ছি। অতনু ঘোষের ‘শেষ পাতা’-র শুটিং, ডাবিং শেষ। ‘মেমরি এক্স’-এর শুট শেষ করেছি। দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে একটা ছবি করছি। ওটার প্রথম শিডিউলের শুট করলাম কলকাতায়। আউটডোরও হবে। সেটা হবে সিকিমে বা নর্থ বেঙ্গলে। ‘রুদ্রবীণার অভিশাপ’ সিরিজ়ও চলছে। ‘কুলের আচার’-এর মহরত হল সম্প্রতি। ওটার শুট শুরু হবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। আশা করি, তার মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। এমনিতেও চারপাশে সংক্রমণের হারও তো অনেকটা কমে এসেছে। দেখা যাক।

প্র: এই ক’দিনে অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে ফেললেন তো! অভিজ্ঞতা কেমন?

Advertisement

উ: প্রত্যেকের সঙ্গে কাজ করেই অনেক কিছু শিখলাম। যেমন অতনুদা একটা অন্য জগৎ তৈরি করেন ছবিতে। তা ছাড়া এই ছবিতে বুম্বাদার সঙ্গে প্রথম বার স্ক্রিন শেয়ার করেছি। সারা জীবন বুম্বাদাকে ‘সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি’ হিসেবে জেনে এসেছি। কিন্তু ফ্লোরে যে উনি এতটা হেল্পফুল, সেটা জানা ছিল না। দারুণ আড্ডাও হয়েছে। পুরনো দিনের অনেক গল্প করতেন বুম্বাদা। নব্বইয়ের দশকে উনি যখন জার্নি শুরু করেছেন, তখন সেটে কী ভাবে কাজ হত, সে সব নিয়ে আলোচনা চলত। সেগুলো থেকে সত্যিই সমৃদ্ধ হয়েছি। আর ‘মেমরি এক্স’ আমার প্রথম হিন্দি ছবি। তথাগতর প্রজেক্টগুলোও অন্য ধরনের। এখানে উপরি পাওনা, বিনয় পাঠকের সঙ্গে কাজ করা। কাজের বাইরেও অনেকটা সময় কাটিয়েছি ওঁর সঙ্গে।

প্র: যোগাযোগ আছে বিনয়ের সঙ্গে?

উ: হ্যাঁ, খুব মজার মানুষ। মেসেজে কথা হয়। সম্প্রতি মুম্বই গিয়েছিলাম। ওঁর সঙ্গে কথা হল, দেখা হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে হল বলে আর সময় করে উঠতে পারিনি।

প্র: মুম্বইয়ে কি নতুন প্রজেক্টের জন্য?

উ: চেষ্টা করছি। তবে এখনও বলার মতো কিছু নেই।

প্র: বাঙালি অভিনেতারা মুম্বই চলে যাচ্ছেন কেন?

উ: এত বছর যখন বাঙালি অভিনেতারা মুম্বইয়ে কাজ পেতেন না, তখন আমরাই বলতাম বাঙালিরা মুম্বইয়ে কাজ পায় না। আমার কেরিয়ারের শুরুতে এই আলোচনা বিস্তর শুনেছি। এখন মুম্বইয়ে যখন বাঙালি অভিনেতারা চুটিয়ে কাজ করছেন, তা নিয়ে অভিযোগের তো কিছু নেই। এটা গর্বের বিষয়। অনেক বেশি দর্শকের কাছে আমরা পৌঁছতে পারছি আমাদের কাজ নিয়ে।

প্র: বাঙালি দর্শকরা বঞ্চিত হবেন না তো? কারণ মুম্বইয়ের প্রজেক্টের জন্য অনেক সময়ে টলিউডের প্রজেক্টে সময় দিতে পারছেন না অভিনেতারা...

উ: সেটা হতে পারে। কিন্তু এটা দু’ভাবে দেখা যায়। বুম্বাদা, যিশুদা (সেনগুপ্ত), পরমদা (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়), আবীরদা (চট্টোপাধ্যায়)... এঁরা মুম্বইয়ে অনেক কাজ করছেন এখন। হয়তো তাঁরা মুম্বইয়ে বেশি কাজ করছেন বলেই আমরা এখানে বেশি কাজ করছি। এক দিক দিয়ে তো ভাল। সিনিয়ররা মুম্বইয়ে কাজ করছেন বলেই হয়তো পরবর্তী প্রজন্ম কলকাতায় বেশি কাজ পাচ্ছে। সব প্রজন্মকেই তো কাজ পেতে হবে। আর দর্শক যদি আমাদের সব কাজ উৎসাহ নিয়ে দেখেন, তা হলে আমরাও হয়তো বাংলায় আরও কাজ করা নিয়ে ভাবব। আমরাও দর্শকের উপরে নির্ভরশীল। তাঁরা যদি আমাদের কাজের উপরে আস্থা রাখেন, ছবি দেখেন, তা হলেই প্রযোজকরা আরও ছবির জন্য টাকা ঢালবেন।

প্র: কিন্তু ওটিটি কি দর্শকের উপরে প্রভাব ফেলছে? সিনেমা হল কি পিছিয়ে পড়ছে সেই ব্যবসায়?

উ: থিয়েট্রিক্যাল অভিজ্ঞতা বাড়িতে বসে পাওয়া সম্ভব নয়। ভাল কনটেন্ট পেলে দর্শক ঠিক হলে যাবেন। ‘টনিক’, ‘বিনিসুতোয়’ ছবির ক্ষেত্রে তো সেটা দেখা গেল। ইন ফ্যাক্ট ‘ম্যাজিক’ও হাউসফুল ছিল।

প্র: টেলিভিশনে কি আর ফিরবেন?

উ: এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। টেলিভিশনে ডেট দেওয়ার মতো সময় নেই। কারণ ধারাবাহিক করতে গেলে প্রায় বছর দুয়েকের কমিটমেন্ট থাকে। দু’বছর ধরে একটা চরিত্র নিয়েই ঘষামাজা চলে। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে পরিণত হতে চাইলে আমাকে তো আরও চরিত্র নিয়ে কাজ করতে হবে। এই বিষয়ে লীনাদির (গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গেও আমার দীর্ঘ আলোচনা চলেছে। ভাগ্যক্রমে এখন সেই সুযোগগুলো পাচ্ছি, তাই এক্সপ্লোর করতে চাই। তা হলে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

প্র: আর ব্যক্তি বিক্রমের জীবন কেমন?

উ: আমি বেড়াতে খুব ভালবাসি। ক’দিন আগে গোয়ায় গিয়েছিলাম। একা ঘুরতে যাই, বন্ধুদের সঙ্গেও যাই। তবে পাহাড়ে একা ঘুরতে ভালবাসি। অনেক দিন পাহাড়ে না গেলে আমার মন খারাপ হয়। আসলে ব্যক্তি বিক্রম খুব বোরিং মানুষ আর সাংঘাতিক ওয়ার্কহোলিক। অঙ্কুশ, ঐন্দ্রিলা, সম্পূর্ণার মতো আমার কাছের বন্ধুরা সেটা জানে। কারও সঙ্গে আমার এক ঘণ্টা কথা হলে আমি সিনেমা নিয়েই নব্বই শতাংশ কথা বলি। বাকিটুকু বেড়ানো নিয়ে।

প্র: আর লাভলাইফ?

উ: নানা সময়ে আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এত লেখালিখি হয়ে গিয়েছে যে, আমি এই ব্যাপারে আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছি। শেষ কবে এই নিয়ে কথা বলেছি আর মনে পড়ে না। তবে আমার বন্ধুরা মনে করে আমি খুব খুঁতখুঁতে। ছবি থেকে শুরু করে কাছের মানুষ পছন্দ করার ব্যাপারেও।

প্র: আপনার প্রিয় বন্ধু অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার বিয়ের খবর কী?

উ: গত দশ বছর ধরে শুনে আসছি, ‘আর দু’বছরের মধ্যেই বিয়ে করে ফেলব।’ আমিও বোর হয়ে গিয়েছি। আমি তো অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলাকে বলেই দিয়েছি যে, দশ বছর প্রেম করে ফেলেছিস, এ বার আর একে অপরকে বিয়ে করিস না। এ বার আর একটা প্রেম কর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement