স্বজনপোষণ বিতর্কে যে সব বলিউডি তারকা এখন আমজনতার অপছন্দের তালিকার শীর্ষে, একতা কপূর তাঁদের মধ্যে অন্যতম। বলিউডে আরও কয়েক জন তারকার সঙ্গে তাঁর নামেও দায়ের করা হয়েছে মামলা। তিনি নিজে কিন্তু তারকার মেয়ে হয়েও কোনও দিন নায়িকা হওয়ার দৌড়ে নাম লেখাননি।
জিতেন্দ্র এবং তাঁর স্ত্রী শোভা কপূরের মেয়ে একতার জন্ম ১৯৭৫ সালের ৭ জুন। বম্বে স্কটিশ স্কুলের পরে তাঁর উচ্চশিক্ষা মিঠিভাই কলেজ থেকে। স্কুলজীবনেই নিজের লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছিলেন একতা। ইনটার্নশিপ শুরু করেছিলেন পরিচালক কৈলাস সুরেন্দ্রনাথের কাছে।
দীর্ঘ দিন ধরে চলেছিল তাঁর শিক্ষানবিশ পর্ব। এর পর বাবার পরামর্শ ও অর্থসাহায্যে তাঁর বলিউডে প্রযোজনায় হাতেখড়ি। সেটা নব্বইয়ের দশকের শুরুর কথা। শুরু হল একতার সংস্থা বালাজি টেলিফিল্মস লিমিটেডের পথ চলা।
ছোট পর্দায় কার্যত নতুন যুগের সূত্রপাত হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। মেগা ধারাবাহিকের সুবাদে দর্শকদের বৈঠকখানায় একচ্ছত্র আধিপত্য একতার। সংসারের খুঁটিনাটিকে তিনি উপজীব্য করেছিলেন নিজের সিরিয়ালের। সেটাই হয়ে ওঠে তাঁর তুরুপের তাস।
‘হম পানচ’, ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’, ‘কহানি ঘর ঘর কি’, ‘কহিঁ কিসি রোজ’, ‘কসৌটি জিন্দগি কে’, ‘কসম সে’, ‘কহিঁ তো হোগা’, ‘কুমকুম ভাগ্য’, ‘কসম তেরে প্যায়ার কি’-সহ অসংখ্য ধারাবাহিকের জোরে টেলিভিশন রাজপাট এসেছিল একতার অধীনে।
ছোট পর্দার পাশাপাশি একতা পা রেখেছিলেন বড় পর্দাতেও। ‘কিঁউ কি ম্যায়ঁ ঝুট নেহি বোলতা’, ‘কুছ তো হ্যায়’, ‘কৃষ্ণা কটেজ’, ‘ক্যয়া কুল হ্যায় হম’— পর পর মুক্তি পায় একতার বেশ কিছু ছবি। তবে ছবির প্রযোজক হিসেবে প্রথম দিকে সে রকম সাফল্য পাননি একতা।
তাঁর সংস্থার আরও একটি আইকনিক ধারাবাহিক ছিল ‘পবিত্র রিশতা’। এই ধারাবাহিক দিয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। ধারাবাহিকের শুটিং সেটেই তাঁর সঙ্গে আলাপ অঙ্কিতা লোখন্ডের।
‘কাই পো চে’ ছবিতে অভিনয় করবেন বলে মাঝপথে ধারাবাহিকের ইউনিট ছেড়ে বেরিয়ে যান সুশান্ত। শোনা যায়, সে সময়েও একতা কোনও বিরূপ আচরণ করেননি। পাশে ছিলেন সুশান্তের।
শুধু সুশান্তই নন। একতার হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচয় পেয়েছেন বিদ্যা বালন, প্রাচী দেশাই, রাম কপূর, রাজীব খাণ্ডেলওয়াল, রনিত রায়ের মতো অভিনেতা। একতার দেওয়া মঞ্চ কাজে লেগেছিল এঁদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে।
তবে কুশীলবদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে সব সময় মসৃণ ছিল, তা নয়। রাজীব খান্ডেলওয়ালের সঙ্গে তাঁর বিবাদ প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। রাজীব বলেছিলেন, সাফল্যের জন্য তাঁর একতার সাহায্য দরকার নেই।
দ্বন্দ্ব ছিল স্মৃতি ইরানির সঙ্গেও। এক সময়ের বন্ধুত্ব পাল্টে গিয়েছিল তিক্ততায়। ফলে স্মৃতি ‘কিঁউ কি সাস ভি কভি বহু থি’-র ইউনিট ছেড়ে বেরিয়ে যান। তাঁর জায়গায় একতা নেন গৌতমী কপূরকে। কিন্তু সিরিয়ালের টিআরপি হু হু করে পড়ে যায়।
১৩০টির বেশি ধারাবাহিক প্রযোজনা করেছে একতার সংস্থা। প্রযোজনা করেছে ‘লভ সেক্স অউর ধোখা’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’, ‘লুটেরা’, ‘এক ভিলেন’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’, ‘লায়লা মজনু’, ‘জাজমেন্টাল হ্যায় ক্যয়া’, ‘ড্রিম গার্ল’-এর মতো ছবি। একটু দেরিতে হলেও সিরিয়ালের মতো সিনেমাতেও বাজিমাত করে বালাজি টেলিফিল্মস। ওয়েব সিরিজেও একতার সংস্থা অগ্রণী।
কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। চলতি বছরেই পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান। খ্যাতির পাশাপাশি বিতর্কও সঙ্গী হয়েছে বার বার। তাঁর সংস্থার নুডিটি শর্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছেন কুশীলবরা। এই শর্তের ফলে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে এবং সব ধরনের সংলাপ বলতে বাধ্য থাকেন অভিনেতারা।
ব্যক্তিগত জীবনে একতা সমালোচিত হন তাঁর পোশাক ও সাজের ধরন নিয়েও। বলা হয়, তিনি যা পোশাক পরেন, তাতে তাঁকে মানায় না। পাশ্চাত্য পোশাকের পাশাপাশি তাঁর শখ আছে নিত্যনতুন গাড়িরও। বিএমডব্লু, ফোর্ড, জাগুয়ার, মার্সিডিসের মতো গাড়ি আছে তাঁর সংগ্রহে।
উচ্চতা, অন্ধকার আর হেলিকপ্টার নিয়ে আতঙ্কে থাকা একতা সংখ্যাতত্ত্ব ও জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন। মনে করেন ইংরেজির ‘কে’ অক্ষর এবং ৩, ৬ ও ৯ তাঁর জন্য শুভ। পশুপ্রেমী একতা রাস্তার বিড়াল, কুকুরদের জন্য কাজ করতে ভালবাসেন। অনুষ্ঠানে তাঁকে বিশেষ দেখা না গেলেও পেজ থ্রি পার্টিতে একতা নিয়মিত মুখ।
টেলিভিশন সম্রাজ্ঞী একতার নিজের পছন্দের অভিনেতা হলেন হৃতিক রোশন এবং শাহরুখ-সলমন-আমির। নায়িকাদের মধ্যে পছন্দ প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, করিনা কপূর এবং সাক্ষী তনওয়ার। অবিবাহিত একতা তাঁর ছেলে রাভির সিঙ্গল মাদার। ২০১৯-এ সারোগেসির সাহায্যে মা হয়েছেন তিনি।
জিতেন্দ্রর মতো একতাও এখন বলিউডের প্রতিষ্ঠান। তবে তিনিও নাকি শেষ মুহূর্তে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের এগিয়ে চলার পথে অন্তরায় হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে একতার বক্তব্য, ‘সুশি’-র মৃত্যুতে তিনি মর্মাহত। তবে তিনি আশাবাদী, রহস্য ও অভিযোগের চাপানউতোর পেরিয়ে সত্য এক দিন প্রকাশিত হবে।