বহরমপুরে রবীন্দ্রসদনে ব্রাত্যজনের নাটক ‘বোমা’। — নিজস্ব চিত্র
নোটের গেরোয় নাটক!
শীতের আমেজ গায়ে মেখেই শুরু নাটকের মরসুমের। বহরমপুর, কল্যাণী, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট... জেলা জুড়ে নাট্যোৎসব। কোথাও এক দিনের তো কোথাও একেবারে পক্ষকাল জুড়ে।
এ বারেও আয়োজনের ত্রুটি হয়নি। হল ভাড়া থেকে বুকিং... সারা হয়ে গিয়েছিল সবই। খবরটা এল এরই মাঝে— পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিল। টিকিট বিক্রি কিংবা দেনা-পাওনা মেটাতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যাওয়ার দশা উদ্যোক্তাদের।
গত ২০ নভেম্বর থেকে যেমন বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনে শুরু হয়েছে সাত দিনের ‘নাট্য সমারোহ’। উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছিল বহু দিন আগে থেকেই। শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় তারা আর পিছিয়ে আসেনি। কিন্তু এখন নাকানি-চোবানি অবস্থা।
নাটকের দলগুলিকে পাওনাগণ্ডা মেটাতে গিয়ে বাজার থেকে সুদে খুচরো টাকা ধার নিতে হয়েছে। পুরো নাট্যোৎসবই চলছে দেনায়। এ সব দেখে-শুনে দর্শকদেরই অনেকে টিপ্পনী কেটে বলছেন, ‘নোট-ই বিনোদিনী’।
এমনিতেই নাটকের দলগুলিকে নগদ টাকায় পেমেন্ট করার একটা রেওয়াজ রয়েছে। অনেকেই অবশ্য পুরনো পাঁচশো-হাজার নিতে আপত্তি করছেন না। কিন্তু কেউ কেউ আবার পুরনো নোট কেন, দু’হাজারের নোট নিতেও ভ্রূ কোঁচকাচ্ছেন। এই অবস্থায় কলকাতার এক নাটকের দলকে পেমেন্ট করতে গিয়ে রাত-বিরেতে চেনাপরিচিতদের বাড়ি ঘুরে খুচরো নোটের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে উদ্যোক্তাদের। জানালেন তাঁরাই। আকালের বাজারে খুচরো নোট দিয়ে সাহায্য করার বিনিময়ে অল্প সুদে টাকা ফেরত দেওয়ার কথাও হালকা চালে শুনিয়ে রেখেছেন তাঁরা।
রঙ্গাশ্রমের কর্ণধার সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নোট সমস্যার কথা জানিয়ে আমন্ত্রিত প্রতিটি দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। অনেকেই পুরনো নোট নিতে আপত্তি নেই বলে জানান। কিন্তু অনেকেই রাজি হননি।’’
জানালেন, নাটকের দলগুলোকে যে সমস্ত সরকারি অতিথি আবাসে রাখা হয়েছে, তাদের ভাড়া এখনও মেটানো হয়নি। গাড়ি ভাড়াও চলছে ধারে। তার মধ্যে আগামী ২৫ নভেম্বর রয়েছে পটনার রাগা থিয়েটার দলের নাটক ‘আউটকাস্ট’। ওই উপলক্ষে পটনার নাটক দলকে ফরাক্কা স্টেশন থেকে বহরমপুরে নিয়ে আসার জন্য বাস ভাড়া করে পাঠাতে হচ্ছে। সেই ভাড়া মেটানো নিয়েও সমস্যায় রয়েছেন উদ্যোক্তারা।
সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘নাটকের দলের দুপুর ও রাতের খাওয়ানোর বন্দোবস্ত হয়েছে রবীন্দ্রসদন মঞ্চের পিছনে মণ্ডপ তৈরি করে। ডেকোরেটর থেকে মুদিখানা, মুরগির মাংসের দোকান—সকলের কাছেই ধারে চলছে। চেনাপরিচিত বলে বিশ্বাসের জায়গা থেকে ধারে দিচ্ছেন। কিন্তু পরে তো মেটাতেই হবে। চিন্তায় আছি। তত দিনে যদি নোট-সমস্যার সমাধান না হয়!’’
যেমন কৃষ্ণনগরের একটি নাটকের দল তো টিকিট বিক্রি করতে গিয়েই সমস্যায় পড়েছে। পনেরো দিন ব্যাপী উৎসব। বারোশো টাকার টিকিট কেটে লোকে দু’হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিচ্ছে। ফেরত দিতে নাজেহাল আয়োজকেরা। ‘পরম্পরা’র শিবনাথ ভদ্র বলেন, ‘‘পনেরো দিনের উৎসব। প্রতিদিন কত ছোটখাট খরচ রয়েছে। হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।’’
আগামী ১৩ ডিসেম্বর নাট্যসন্ধ্যার আয়োজন করেছে নবদ্বীপের তরুণ নাট্যগোষ্ঠী। দিন তিনেক হল তারা টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। সেখানেও সমস্যা। সংস্থার তরফে বাপী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা পুরানো নোট নিচ্ছি। তবে শর্ত একটাই, পাঁচশো বা হাজার দিলে পুরো টাকারই টিকিট কিনতে হবে।’’ কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের বাইশতম নাট্যোৎসবের টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে ৪ ডিসেম্বর থেকে। এই ডামাডোলের বাজারে তারা ঝুকি নেয়নি। জানিয়ে দিয়েছেন, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেওয়া হবে।
তবে সকলেরই এক কথা—
‘‘সবে তো নাটকের শুরু।’’