Independent movie

জুতোই জীবন! আবিষ্কার নয়, আত্মরতির গল্প! পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ছবি বানালেন সৌরিশ

ছবি বানালেই হয় না। হলে মুক্তি, মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াকেই পূর্ণতা বলে মনে করেন নির্মাতারা। স্বাধীন নির্বাক ছবি ‘জুতো’ নিয়ে নিজের সফর শোনালেন সৌরিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২২ ১৩:২৩
Share:

জুতো-জীবনের রূপকথা মোড় নেয় আত্মআবিষ্কারে, তা নিয়েই পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নব্য পরিচালক সৌরিশ দে। নিজস্ব চিত্র

জুতোই জীবন, জুতোই ভালবাসা। পরম মমতায় জুতো পরিষ্কার করার সময়ে প্রেমিকার ফোন আসলেও সে বিরক্ত হয়। আর সেই কমলা রঙের জুতো এক দিন হঠাৎ ছিঁড়ে গেলে পায়ের তলার মাটি সরে যায় যুবকের। নতুন জুতো কি পুরনো জুতোর মতো আরামের হয়? অতটা কি বোঝাপড়া থাকে? কখনওই না! জুতো-জীবনের রূপকথা মোড় নেয় আত্মআবিষ্কারে। তা নিয়েই পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নব্য পরিচালক সৌরিশ দে।

Advertisement

এ ছবি স্বাধীন ভাবে পরিচালিত। মুখ্য দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভাস্কর দত্ত এবং চলন্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়।

কী ভাবে আসে চেনা গতের বাইরে এমন ভাবনা? আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল পরিচালকের কাছে। সৌরিশ জানান, একেবারেই ব্যক্তিজীবনের খুচরো কিছু অভিজ্ঞতা থেকে। ভাবছিলেন এমন কোনও কাজ হোক, যা দেখে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষেরাও বিনোদন পেতে পারেন। সংলাপ ছাড়া ছবি দেখে হেসে উঠতে পারেন, আবার কাঁদতে পারেন ব্যথায়। বলতে বলতে ভাগ করে নিলেন এক ছোট্ট গল্প, ‘‘কোনও এক হিট বলিউড ছবি চলছে প্রেক্ষাগৃহে। সলমন খানের পোস্টারের সামনে হুড়োহুড়ি। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি দু’জন মূক-বধির মানুষ নিজেদের মধ্যে ইশারায় কথা বলে চলেছেন। সলমন খানের সিনেমা নিয়ে তাঁদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। তার পর বুঝলাম, ঠিকই তো। ভাষা বুঝবেন না ওঁরা। তখনই ভাবলাম, সবার বোঝার জন্য নির্বাক ছবি বানাব।’’

Advertisement

‘জুতো’র এক দৃশ্যে অভিনেতা ভাস্কর দত্ত ছবি: নিজস্ব চিত্র

সৌরিশ জানান, ২০১৭ সালে কাজ শুরু করে ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ করে ফেলেন। কিন্তু, অতিমারির প্রকোপে তার পর আর কিছুই এগোয় না। মুক্তির ভাবনা মুলতুবি থাকে। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে সৌরিশের। আগামী ২৫ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে তাঁর ‘জুতো’।

ইচ্ছে ছিল বাংলার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ছবিটি তিনিই বানাবেন। কিন্তু সামর্থ্যের অভাবে সম্ভব হয়নি। কিঞ্চিৎ হতাশা বুকে নিয়েই সৌরিশ বললেন, ‘‘বুঝেছিলাম শর্ট ফিল্ম বানিয়ে কোনও লাভ নেই। তাই ফিচার বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ইচ্ছে ছিল, বড় এবং নির্বাক চলচ্চিত্র বানাব। কিন্তু ভাবনাচিন্তার মাঝেই দেখলাম,‘আসা যাওয়ার মাঝে’ মুক্তি পেয়ে গেল। সেই ছবি নিয়ে হইহই, ভাল লাগা, স্বাভাবিক ভাবেই একটু খারাপ লেগেছিল।’’

কিন্তু দমেননি সৌরিশ। জানালেন, আর পাঁচ জন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতার মতো তাঁরও সামর্থ্য ছিল না বড় করে কিছু ভাবার। তবে দ্বিতীয় পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ছবি বানানোর সুযোগটা হারাননি তিনি। অল্প করে শুরু করেও তাঁর নির্বাক ছবি এক দিন ফিচার হয়ে দাঁড়ায়। কী করে?

পরিচালক বললেন, ‘‘নিজেই সম্পাদনা পারি, তাই একটা সুবিধা ছিল। একটা ছোট দল বানিয়ে ফেলি। চিত্রগ্রহণ এবং আনুষঙ্গিক যা কাজ আছে নিজেরাই যাতে করে নিতে পারি।’’

ইতিমধ্যেই ‘জুতো’ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ঘুরে এসেছে। বাতিলের তালিকাও কম নয়। তবে এ ছবিকে দিনের আলো দেখিয়েই ছাড়বেন, জেদ ছিল সৌরিশের। তাঁর অন্যান্য ছবির মতো হারিয়ে যেতে দেননি। খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে ‘জুতো’। তবে সাধারণ প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও আরও বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে কী করে পৌঁছনো যায়, সেই নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে সৌরিশের। যাঁদের কথা ভেবে ছবির ভাবনার উৎস, তাঁদেরকেও ভোলেননি তিনি। বেশ কিছু মূক ও বধির শিশুকে এই ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করছেন পরিচালক। সৌরিশ মনে করছেন, স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের হতাশ না হয়ে আগামী দিনে ছবি মুক্তির বিকল্প রাস্তা খুঁজে নিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement