রোহিত সেন বনাম আহির কোনও দিন হবে না, জানিয়ে দিলেন তথাগত।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
তথাগত: (উচ্ছ্বসিত ভাবে) ভাল আছি। সব ঠিকই চলছে।
প্রশ্ন: তিন জন বৌ আর এক প্রেমিকাকে নিয়ে জীবন উপভোগ করছেন?
তথাগত: উপভোগ, চাপ সবই আছে। আমার ‘ভটভটি’ ছবির পোস্ট প্রোডাকশন চলছে। শীতে বড় পর্দায় মুক্তি পাবে। পুজোয় ট্রেলার সামনে আসবে। ‘অ্যাকোয়া ম্যান’ ছবিতে যেমন জলের নীচের দুনিয়া দেখানো হয়েছিল আমার এই ছবিও সে দিক তুলে ধরতে চলেছে। তাই ‘মোহর’ ধারাবাহিকের ‘আহির’ আর ‘দেশের মাটি’র ‘ডোডো’ করার পরে সেই কাজও সামলাতে হচ্ছে। অক্টোবর থেকে একটি হিন্দি ছবি পরিচালনায় হাত রাখব। নভেম্বরে শ্যুট শেষ হয়ে যাবে। তার প্রি-প্রোডাকশনের কাজও চলছে এরই সঙ্গে। আর অনীক দত্তের আগামী ছবি ‘অপরাজিত’তে সত্যজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করছি। সব মিলিয়ে খুব ব্যস্ত।
প্রশ্ন: ‘ডোডো’কে দর্শক চায় দাদা হিসেবে। ‘আহির’কে প্রেমিক হিসেবে। আপনার কে প্রিয়?
তথাগত: দু’জনে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে, অভিনয় করে তৃপ্তি পাচ্ছি। আহিরের ভাবনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বোধের ভীষণ মিল রয়েছে। আহির কালোর মধ্যেও আলো খোঁজে। তাই শ্রেষ্ঠা ম্যামের মতো খলনায়িকাকেও ভালবেসে বিয়ে করতে পেরেছে। ওর হাতে শ্রেষ্ঠার নতুন রূপান্তর ঘটেছে। কালোর মধ্যে আলো খোঁজার ঝোঁক আমারও আছে। একেক সময় সংলাপ বলতে গিয়ে দেখেছি, আমার মনের কথাই যেন লীনাদির সৃষ্ট ‘আহির’ বলে দিচ্ছে! দৃশ্যে অভিনয়ের পর বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে সবার থেকে, সব কিছু থেকে। আসলে লীনাদি আমায় খুব ভাল করে জানেন। ওঁর সঙ্গে সময় পেলেই ব্যক্তিগত জীবন দর্শন নিয়ে আলোচনা করি। দৃশ্যে সেই কথাই যখন উঠে আসে অনুভূতিতে টান পড়ে। অন্য দিকে ডোডোর কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে। স্ত্রী-র উপর অধিকার বোধ বেশি। বসকে নিয়ে অকারণে সন্দেহ করে। মাঝে সেই দিক চাপা পড়ে গেলেও আগামী দিনে আবার ডোডোর এই সমস্যাগুলো ফিরতে চলেছে। তাই মনে হচ্ছে, ডোডোকে আবার অপছন্দ করতে শুরু করবেন মহিলা দর্শকেরা।
প্রশ্ন: আহির-শ্রেষ্ঠার প্রেম 'চ্যালেঞ্জ ২' ছবির গান ‘পুলিশ চোরের প্রেমে পড়েছে’ মনে পড়িয়ে দিয়েছে!
তথাগত: (হেসে ফেলে) চরিত্রের সংলাপ অনুযায়ী, জীবন এত জটিল! কখন, কার সঙ্গে কী রসায়ন তৈরি করে দেয়, বলা মুশকিল। তখন চূড়ান্ত অপছন্দের লোককেও ভীষণ ভাল লাগতে শুরু করে। জানেনই তো, বিপরীত স্বভাবের দুই মানুষ সব সময় একে অন্যকে আকৃষ্ট করে। আহির-শ্রেষ্ঠারও সেটাই হয়েছে। আর লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের চিত্রনাট্য অনুযায়ী বলব, একেই বলে জীবন থেকে মহাজীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া।
প্রশ্ন: প্রাইম টাইম থেকে ধারাবাহিক সরার পর দুপুর দুটোর স্লটে ‘আহির’ জনপ্রিয় হবে, ভেবেছিলেন?
তথাগত: কিচ্ছু ভাবিনি। আমার ভাবার কথাও নয়। আমার কাজ অভিনয় করার। সেটাই করেছি। রাত ১২টার স্লটে ধারাবাহিক গেলেও আমি শুধুই অভিনয় করব। এ বার চরিত্রের কথা বলি। মোহর টানা ছ’মাস চলার পরে ‘আহির’ চরিত্রটি আসে। অনেকটা যেন দ্রৌপদী-সখা কৃষ্ণের মতো। যে সারাক্ষণ মোহরকে আগলায়। ফলে, শুরু থেকেই দর্শকেরা আমায় ভালবেসেছেন। অনেকে ভেবেছিলেন, মোহরের সঙ্গে বুঝি আমার প্রেম হবে। পরে সেই ভুল ভেঙেছে। এখন আহিরের প্রেম ওর জনপ্রিয়তার তুরুপের তাস।
প্রশ্ন: রোহিত সেনকে তা হলে টক্কর দেওয়ার লোক পাওয়া গেল?
তথাগত: দয়া করে টোটা রায়চৌধুরীর সঙ্গে তথাগত মুখোপাধ্যায়ের তুলনা টানবেন না। টোটাদা অনেক বেশি অভিজ্ঞ। ‘রোহিত সেন’ চরিত্রকে উনি একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন। আহির তার মতো করে জনপ্রিয়। কিন্তু রোহিত সেন বনাম আহির কোনও দিন হবে না।
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আর মৈত্রেয়ী দেবীর ‘ন হন্যতে’ পর্দায় তুলে ধরার খুব ইচ্ছে, জানালেন তথাগত।
প্রশ্ন: পর্দার বৌ পায়েল দে, মধুরিমা বসাক বাস্তবে কেমন?
তথাগত: প্রথমে পায়েল দে ওরফে ‘দেশের মাটি’র ‘উজ্জয়িনী’র কথা বলি। এই ধারাবাহিক দিয়ে ওঁর সঙ্গে প্রথম কাজ। পর্দার বাইরে পায়েল ভীষণ হাসিখুশি। ভীষণ সহযোগী। ওর স্বামী দ্বৈপায়ন দাস আমার খুব কাছের বন্ধু। পায়েলের সময় জ্ঞান খুব ভাল। ফলে, অভিনয় করতে করতে আদান-প্রদানটা খুব স্বাভাবিক থাকে। আর ও খুবই পরিশ্রমী। চরিত্রের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। ‘মোহর’ ধারাবাহিকের ‘শ্রেষ্ঠা’ ওরফে মধুরিমা বসাকের অভিনয় সহজাত। ও চেষ্টা না করেই বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় ফুটিয়ে তুলতে দক্ষ। আর সময় নিয়ে আমার সঙ্গে এত মানিয়ে চলতে হয় ওঁদের যে দু’জনেরই দাবি, এটাই ওঁদের শেষ কাজ। আর কখনও ওঁরা আমার সঙ্গে কাজ করবেন না!
প্রশ্ন: আর বাস্তবের বৌ দেবলীনা? তিনি তো কালার্স বাংলার ধারাবাহিকে এখন পোশাক নির্মাতার চরিত্রে...
তথাগত: কাকতালীয় ভাবে ও আমার সব কাজের পোশাক ডিজাইনার! (হাসি) তা বলে ভাববেন না ওকে অভিনয় করতে হচ্ছে না। ওকে চরিত্র হয়ে উঠতে কিন্তু অভিনয় করতে হচ্ছে। ২৫ বছর ধরে ও অভিনয়ে। সব মাধ্যমে কাজ করেছে। মাঝে বিরতি নেওয়ার পরে এই ধারাবাহিক ওকে ছোট পর্দায় ফেরিয়ে আনল । পর্দায় খলনায়িকা। বাস্তবে খুব ভাল বন্ধু আমার। ও আমার প্রথম বিয়ের নিমন্ত্রিত অতিথি ছিল। ফলে, ওর মতো করে আমায় কেউ বোঝে না। আমিও ওর সঙ্গে কিছু ভাগ না করে থাকতে পারি না।
প্রশ্ন: ‘ভটভটি’ করতে গিয়ে আপনার আর মডেল-অভিনেত্রী বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমটাও জানেন দেবলীনা?
তথাগত: এই রে! এটা কবে ছড়ালো? শ্যুটের শেষে? আমার অন্তত বিবৃতির সঙ্গে কিছু নেই। থাকলে অবশ্যই দেবলীনা সেটাও জানবে। আর গসিপে দেবলীনা একেবারেই কান দেয় না। ও যখন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘এক আকাশের নীচে’ ধারাবাহিক করছিল তখন প্রথম সারির একটি ম্যাগাজিন তিন বার ওদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল! দেবলীনা অবিচল ছিল।
প্রশ্ন: ‘আহির’ প্রেম প্রস্তাব পায়?
তথাগত: নেটযুগে সেটা কমবেশি সবাই পান। আমার বাড়ির ঠিকানায় উপহার চলে আসে। স্টুডিয়োয় ফুলের তোড়া পৌঁছোয়! অবশ্যই ভাল লাগে। বিশেষ করে যখন ১৬ বছরের একটি মেয়ে বলে, ‘ভালবাসি’!
প্রশ্ন: মধুরিমা জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে বড় পর্দায় আসছেন...আপনিও এ ভাবে আসতে পারতেন...
তথাগত: এই প্রস্তাব আমিও পেয়েছি। চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় রাজি হইনি। তা ছাড়া, আমাকে, আমার চলচ্চিত্র ভাবনা বহু জনের অপছন্দ। তাই আমি ডাক পাই না। পাশাপাশি, সন্দীপ রায়ের মতো পরিচালকের সঙ্গে এই আমিই ‘বাদশাহী আংটি’ করেছি। আমার অভিনয়ে আসার নেপথ্য কারণ কিন্তু পরিচালনা। যে ছবি দেখতে পাই না সেই ছবি বানাব, এই ইচ্ছে থেকে পরিচালনার প্রতি এত ঝোঁক। আমি তাই মধুরিমাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছি। সেটে ওকে এই নিয়ে প্রচণ্ড খ্যাপানো হয়। তখন মাঝেমাঝে কপট আক্ষেপ জানায়, ‘কেন যে ছবিটা করতে গেলাম’!
প্রশ্ন: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আর মদন মিত্রের জীবনীচিত্র নিয়ে টলিপাড়া উত্তাল। আপনি সুযোগ পেলে কার বায়োপিক বানাবেন?
তথাগত: তিতুমীর অথবা মৈত্রেয়ী দেবী। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আর মৈত্রেয়ী দেবীর ‘ন হন্যতে’ পর্দায় তুলে ধরার খুব ইচ্ছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিক হচ্ছে। বাঙালি আবার গর্ব করবে। খুবই ভাল কথা। কিন্তু লাভ রঞ্জন এই ছবির প্রযোজক। এটা আমায় হতাশ করেছে। যাঁর ঝুলিতে ‘প্যায়ার কা পঞ্চনামা’, ‘ছলাং’-এর মতো ছবি তিনি কতটা সততার সঙ্গে এই বায়োপিক করবেন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। বিধুবিনোদ চোপড়া বা রাজু হিরানির মতো ব্যক্তিত্ব এই বায়োপিকের সঙ্গে যুক্ত থাকলে বেশি খুশি হতাম।