শোলাঙ্কি ছবি: টুইটার।
ছোট পর্দায় তুমুল জনপ্রিয়তা, ওয়েবে পরপর কাজ, বড় ব্যানারে প্রথম ছবি... আবার ছোট পর্দা। নিরাপত্তার জন্যই কি শোলাঙ্কি রায়ের ধারাবাহিকে ফেরা? ‘‘ছোট পর্দা থেকে কাজ শুরু করেছি। মাধ্যমের চেয়ে চরিত্রগুলো আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি এমন চরিত্র করতে চাই, যারা সমাজে কিছু যোগ করতে পারে। সময় পেলে থিয়েটারও করতে চাই। ছোট পর্দার সুবাদে আমার অভিনয়ের চর্চা বজায় থাকে,’’ বললেন অভিনেত্রী।
নতুন ধারাবাহিক ‘গাঁটছড়া’য় মুখ্য চরিত্রে শোলাঙ্কি। তাঁর বিপরীতে গৌরব চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ধারাবাহিকের শুটিং। ‘‘প্রযোজনা সংস্থা অ্যাক্রোপলিসের সঙ্গে অনেক দিন ধরে কাজ করতে চেয়েছিলাম। তিন বোনের গল্প। আমি মেজ বোন কড়ির চরিত্রে। স্বাধীনচেতা, বলিষ্ঠ নারীচরিত্রে অভিনয় করতে পছন্দ করি। এই মেয়েটিও সেই ধাঁচের, সংসারের দায়িত্ব রয়েছে তার কাঁধে,’’ বললেন তিনি।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ব্যানারে এবং অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় শোলাঙ্কির প্রথম ছবি ‘বাবা বেবি ও’ মুক্তির জন্য তৈরি। ‘‘অরিত্র প্রথম যোগাযোগ করেছিল আমার সঙ্গে। ছবিতে এক অসমবয়সি প্রেমের গল্প বলা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে সারোগেসি নিয়ে জরুরি বার্তা।’’ প্রথম ছবিতে অভিনেত্রীর বিপরীতে যিশু সেনগুপ্ত। ‘‘এত সাফল্য পাওয়ার পরে একজন মানুষ কতটা নম্র এবং মাটির কাছাকাছি থাকতে পারেন, যিশুদাকে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আর এই ছবিতেও গৌরবের সঙ্গে কাজ করেছি। সে দিক দিয়ে ‘গাঁটছড়া’ ওর সঙ্গে আমার দ্বিতীয় কাজ,’’ উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী।
ওয়েব প্ল্যাটফর্মে ‘ধানবাদ ব্লুজ়’, ‘মন্টু পাইলট’-এর মতো সিরিজ়ে কাজ করেছেন শোলাঙ্কি। একই শিল্পী একাধিক মাধ্যমে কাজ করলে একঘেয়েমি তৈরি হয় না? ‘‘অমিতাভ বচ্চন আড়াইশোর বেশি ছবি করেছেন। তার পরেও ছোট পর্দায় কাজ করেন। দর্শকের কি তাঁকে দেখতে একঘেয়েমি তৈরি হয়? ওয়েব প্ল্যাটফর্ম আসার পরে ভাল গল্প দেখার চাহিদা বেড়েছে। আজকের প্রজন্ম সারা বিশ্বের কনটেন্ট দেখছে। তাই আমার মতে, বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পীদের মধ্যে যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তত ভাল। এই ভাবে ছোট পর্দার অনেক যোগ্য শিল্পীও কিন্তু লাইমলাইট পেয়েছেন,’’ বললেন শোলাঙ্কি। সৌরভ চক্রবর্তীর আগামী সিরিজ় ‘সাড়ে সাঁইত্রিশ’-এ দেখা যাবে তাঁকে।
ওয়েব প্ল্যাটফর্মের বিস্তার ঘটলেও, ছোট পর্দায় ধারাবাহিকের মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শেষ ধারাবাহিক ‘প্রথমা কাদম্বিনী’ এক বছরের কম সময় চলেছিল। ‘‘আসলে ‘প্রথমা কাদম্বিনী’ বছরের পর বছর চলবে, সে রকম ভাবনা ছিল না। তবে আরও কয়েক দিন চললে, ভালই হত। এমন ধারাবাহিক চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি হয়তো আমাদের এখনও নেই। গত দেড় বছরে দর্শকের ধৈর্য কমেছে,’’ পর্যবেক্ষণ শোলাঙ্কির।
অতিমারির প্রথম পর্যায়ে মা-বাবার সঙ্গেই বাড়িতে ছিলেন নায়িকা। স্বামী সুদূর নিউজ়িল্যান্ডে। ‘‘লং-ডিসট্যান্স ম্যারেজে রয়েছি। প্রায় আড়াই বছর আমাদের সামনাসামনি দেখা হয়নি। টাকা, সময়, ইচ্ছে থাকলেও আসলে আমাদের হাতে কিছু নেই— এটা নিয়ে বরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। চাইলেও আমি এখন যেতে পারব না, ও আসতে পারবে না,’’ বলছিলেন শোলাঙ্কি। অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ গভীর ক্ষত তৈরি করেছে তাঁর মনে। ‘‘অনেক বন্ধুবান্ধব, পরিজনকে হারিয়েছি। আমরা যে ভাবে ছুটছিলাম, অতিমারি এক ধাক্কায় সব কিছুকে থামিয়ে দিয়েছিল। ছুটতে ছুটতে কত সম্পর্ক, মুহূর্ত, কাছের মানুষের সঙ্গ যে হারিয়ে ফেলেছি, তার হিসেব নেই... অতিমারি আমার জীবনদর্শন বদলে দিয়েছে,’’ উপলব্ধি তাঁর।
শোলাঙ্কির সঙ্গে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের জুটি টেলিভিশনের অন্যতম পছন্দের জুটি ছিল। ‘‘বিক্রমের হিন্দি ছবিটি নিয়ে আমিও খুব উৎসাহী। অভিনেতা হিসেবে ওর অনেক কিছু এক্সপ্লোর করার আছে,’’ শত ব্যস্ততার ফাঁকে এখনও আলগা হয়নি মেঘলা-অনুরাগের বন্ধুত্ব।