গোলন্দাজ।
পুজোর সময়ে একগুচ্ছ বাংলা ছবির রিলিজ় এবং সেগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা— এটা প্রতি বছরের চিত্র। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা। কার ছবি এগিয়ে গেল বা পিছোল, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলা ছবি বক্স অফিসে কেমন রেজ়াল্ট করল? দর্শক আদৌ সিনেমা হলে এলেন তো? এই পুজোয় করোনার বিধিনিষেধের জেরে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি দর্শক সমাগমের অনুমতি ছিল না। সেই নিরিখে বিচার করলে, হলমালিকদের আশ্বস্ত করেছে বাংলা ছবির ব্যবসা।
দর্শককে আকৃষ্ট করতে আয়োজন কম ছিল না। দেবের ‘গোলন্দাজ’, জিতের ‘বাজ়ি’, কোয়েল মল্লিক-পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সাই-ফাই মুভি ‘বনি’... তবে ডিস্ট্রিবিউটর, হলমালিকদের হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে ‘গোলন্দাজ’। এসভিএফ জানাচ্ছে, তাদের ছবি গত সাত দিনে ২ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করেছে। কলকাতায় পরপর ৪-৫ দিন ছবি হাউসফুল গিয়েছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যেও ‘গোলন্দাজ’ মুক্তি পেয়েছে। ২৯ অক্টোবর ওভারসিজ় মার্কেটে মুক্তি পাবে ছবি। আরবান মার্কেটে ভাল ফল করেছে সুরিন্দর ফিল্মসের ‘বনি’। আবার একটু মফস্সলের দিকে জিতের ‘বাজ়ি’ সফল।
অঙ্কুশের ‘এফআইআর’ এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত থ্রিলার ‘ষড়রিপু টু জতুগৃহ’ মোটামুটি ব্যবসা করেছে। বেশ কিছু জায়গায় এই ছবিগুলোও হাউসফুল হয়েছে। ‘গোলন্দাজ’ যেমন রিলিজ়ের প্রথম দিন থেকেই ভাল ফল করেছে। অন্যান্য ছবি বাজার ধরতে খানিকটা সময় নিয়েছে। ‘গোলন্দাজ’-এর এগিয়ে থাকার আরও একটা কারণ, ছবিটি বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক স্ক্রিনে রিলিজ় করেছে। স্ক্রিনের সংখ্যা বেশি হওয়ার ফলে, ‘বাজ়ি’ও রাজ্য জুড়ে মোট ব্যবসার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে পাওয়া খবর, ৩০-৩৫ লক্ষ টাকার কালেকশন হয়েছে জিতের ছবির। সেখানে ‘বনি’ ২৫ লক্ষের কাছাকাছি ব্যবসা করেছে।
বনি।
মাল্টিপ্লেক্সের কালেকশন প্রসঙ্গে ট্রেড অ্যানালিস্ট পঙ্কজ লাডিয়া বলছেন, ‘‘বাকি সব ছবির চেয়ে ‘গোলন্দাজ’ অনেকটাই এগিয়ে। ‘বনি’ও ভাল ব্যবসা করেছে, কিন্তু তা ‘গোলন্দাজ’-এর ব্যবসার ২৫ শতাংশের বেশি নয়। অন্যান্য ছবিগুলো গড়পড়তা। ‘গোলন্দাজ’-এর কালেকশনের ১০-১৫ শতাংশের মতো।’’
ছবির সাফল্য প্রসঙ্গে দেব বলছেন, ‘‘মানুষ যে সিনেমা হলে আসছেন, এতেই আমি খুশি। হলে দর্শকের হাততালি, সিটি দারুণ উপভোগ করেছি। অতিমারিতে সিনেমা ব্যবসার খুব বড় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।’’ অন্য ধারার ছবিতে দেব অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছেন, কিন্তু বড় ধরনের সাফল্য সে অর্থে পাননি। এই ছবি দিয়ে দেব এবং এসভিএফ জুটি কামব্যাক করেছে। ‘গোলন্দাজ’-এর হাত ধরে আসা এই বদলগুলো হয়তো ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্য অঙ্কও বদলাবে।
ব্যবসা প্রসঙ্গে ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনসের কর্ণধার নীলরতন দত্ত বলছেন, ‘‘আমার বাজেট খুব কম ছিল। সেই তুলনায় ‘ষড়রিপু টু জতুগৃহ’ ভাল ফল করেছে। নবমীর দিন থেকে পিক নিয়েছে ছবি। রিলিজ় এবং প্রচারেও আমরা বাড়াবাড়ি করিনি। প্রযোজক হিসেবে বলতে পারি, এই ব্যবসা থেকে আমি খুশি।’’ অঙ্কুশের ‘এফআইআর’ সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। অভিনেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, তাঁদের ছবির বেশ কিছু শো হাউসফুল হয়েছে।
এ বারের পুজোর ব্যবসা হলমালিকদের অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। গত দু’বছরের খরা এ বার কাটানো গিয়েছে বলে মনে করছেন হলমালিক ও ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর ব্যবসা থেকে এগজ়িবিটরেরা খুশি। গত বছরের পুজোর চেয়ে এ বার অন্তত চারগুণ বেশি দর্শক সমাগম হয়েছে। একশো শতাংশ অকুপেন্সি থাকলে ব্যবসার অঙ্ক অনেকটাই বেড়ে যেত।’’ শুধু বাংলা ছবি নয়, এই মুহূর্তে সিনেমা হলে চলতে থাকা ইংরেজি ছবি ‘নো টাইম টু ডাই’ এবং ‘ভেনম’ মাল্টিপ্লেক্সে ভাল ব্যবসা দিচ্ছে।
এর পরে দীপাবলি এবং শীতের ছুটি। নভেম্বরে মৈনাক ভৌমিকের ‘একান্নবর্তী’ মুক্তি পাচ্ছে। দীপাবলিতে বড় হিন্দি ছবি ‘সূর্যবংশী’ রিলিজ় করছে। অক্ষয়কুমারের এই ছবির ব্যবসার দিকেই এখন তাকিয়ে হলমালিকেরা। যদিও ওই সময়ে একশো শতাংশ অকুপেন্সি হওয়া নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। ক্রিসমাসে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কাকাবাবু রিলিজ় করবে। রয়েছে দেবের ‘টনিক’ও। পুজোর সাফল্য দেখে অন্যান্য প্রযোজকেরাও তাঁদের ঘুঁটি সাজাতে প্রস্তুত হচ্ছেন।