ববি দেওল।
মুম্বই পুলিশ ও আন্ডারওয়র্ল্ড... হিন্দি ছবির খুবই পছন্দের বিষয়। বড় পর্দা থেকে এই সাবজেক্ট ঢুকে পড়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিলেবাসেও। ওয়েব সিরিজ়ে এর দাপট দিব্যি বহাল। তাই নেটফ্লিক্স ছবি ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’ ছাপ ফেলতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। ছবির চেনা মুখ বলতে ববি দেওল, অনুপ সোনি এবং জয় সেনগুপ্ত। এ ক্ষেত্রে কনটেন্টই ছবিকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। তার সঙ্গে স্মার্ট পরিবেশন।
এস হুসেন জ়াইদির লেখা ‘দ্য ক্লাস অফ এইটিথ্রি: দ্য পানিশারস অব মুম্বই পুলিশ’ অবলম্বনে ছবির গল্প। যদিও ছবির শুরুতে বলে দেওয়া হয়, গল্পকে হুবহু অনুসরণ করা হয়নি। ছবিটি গল্পের ছায়ামাত্র।
সাল ১৯৮২। নাসিকের পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ চলছে একটি নতুন ব্যাচের। সেই ব্যাচই অ্যাকাডেমির নতুন ডিন বিজয় সিংহ-র (ববি) প্রথম ব্যাচ। যদিও বিজয়ের জন্য সেটি শাস্তিমূলক পোস্টিং। ব্যাচের সবচেয়ে খারাপ পাঁচ জন ছাত্রের ডিনের ক্লাস করার খুব ইচ্ছে। কিন্তু তার দর্শনই পাওয়া যায় না! ঘটনাচক্রে ওই পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনের সঙ্গে বিজয়ের প্রথম মোলাকাত হয়, ক্লাসরুমের বাইরে। প্রথম দর্শনেই ডিনের ঘুসি জোটে তাদের কপালে। ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল পাঁচ জন কী ভাবে মুম্বই পুলিশ ফোর্সে নিজেদের ছাপ ফেলে, কী করেই বা ডিনের অপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে, তা নিয়ে গল্প।
ক্লাস অফ এইটিথ্রি পরিচালনা: অতুল সবরওয়াল অভিনয়: ববি দেওল, জয় সেনগুপ্ত, অনুপ সোনি ৬/১০
হুসেন জ়াইদির এই প্লট পাঠকের কাছে হয়তো চেনা। সেলুলয়েডেও আগে দেখা গিয়েছে। তবে অতুল সবরওয়ালের ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’ চেনা ছকে অচেনা ছাপ ফেলেছে।
পৌনে দু’ঘণ্টারও কম সময়ের এই ছবির ট্রিটমেন্ট খুব ফোকাসড। একটি দৃশ্যও এমন নেই, যা ছন্দপতন ঘটিয়েছে। প্রথম কয়েকটি দৃশ্যেই নতুন ক্যাডারদের কীর্তিকলাপ ও সংলাপ ছবির আমেজ তৈরি করে দেয়। পরিচালক অতুলের লেখা স্মার্ট সংলাপ ছবির সম্পদ। কপ-ড্রামা বলে সারাক্ষণ গুলির কানফাটা শব্দ বা চেজ় করার জগঝম্প নেই এ ছবিতে। দুই উঠতি পুলিশ অফিসারের রেষারেষি, মন্ত্রী-গ্যাংস্টার আঁতাঁতের মতো চেনা বিষয়গুলিও ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। মিনিমালিস্টিক ট্রিটমেন্ট এই ছবির জোরের জায়গা। পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারের জীবনে ট্র্যাজেডি থাকবে না, তা-ও কি হয়? তবে সে আবেগও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। ছবিতে ঘটনার ঘনঘটা নেই। বরং আশির দশকের মুম্বইয়ের টুকরো টুকরো ঘটনা, সংবাদপত্রের কাট আউট, সাদা-কালো ভিডিয়োর ক্লিপিংস ডকু-ড্রামার ফিল তৈরি করেছে। পিরিয়ড ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি, সেট ডিজ়াইনিং ও ডিটেলিং প্রশংসনীয়।
অনেক দিন পরে ছবিতে মলাট চরিত্রে ববি দেওল। কিন্তু পুরো ছবি জুড়ে তিনি নেই। অভিনয়ের দিক থেকেও পার্শ্বচরিত্ররা টেক্কা দিয়েছেন তাঁকে। ববি এখানে কোনও সিংহম বা সিম্বা নন। তবে পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারের চরিত্রে তাঁর এনার্জি একটু কম মনে হয়েছে। আবেগের দৃশ্যগুলিতে তিনি সংযত ও সুন্দর। বিজয়ের পাঁচ ছাত্রের মধ্যে নবাগত হিতেশ ভোজরাজ (বর্দে), ভূপেন্দ্র জারাওয়াত (শুক্ল), সমীর পরাঞ্জপে (আসলাম) ছবির শো স্টপার। ছবির কথক আসলামের চরিত্রটি। বিজয়ের বন্ধু-অফিসারের চরিত্রে জয় সেনগুপ্ত ভাল। মন্ত্রী মনোহর পাটকরের চরিত্রে অনুপ সোনিকে আরও বেশি পাওয়া গেলে ভাল লাগত।
ছবির পরিচালক অতুলের আগের উল্লেখযোগ্য কাজ বলতে টেলিভিশন সিরিজ় ‘পাউডার’, ফিচার ফিল্ম ‘আওরঙ্গজ়েব’। তবে প্রচারের আলো থেকে পরিচালক বেশ দূরে। ববিকে যখন মুখ্য চরিত্র দেওয়া হয়েছিল, তাঁর চরিত্রটি আরও মজবুত হয়তো করা যেত। বিজয় আর মনোহরের টক্করও শুধু চাহনি আর কয়েকটা সংলাপ বিনিময়ের গণ্ডিতে আটকে না থাকলে বেশি ভাল হত।
পুলিশ, সিস্টেম, আইন ও শৃঙ্খলা— ‘পাতাললোক’ সিরিজ়টির মতো এ ছবির শুরুতেও পুলিশ কী এবং কেন করে, তার পাঠ দেওয়া হয়। পুলিশি পাঠের নিরিখে এ ছবি প্রশংসনীয়।