‘ফড়িং’, ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’য়ের পর আপনি তো টলিউডের নতুন দিদিমণি। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে জ্ঞান দিতে হলে কী বলবেন?
এমা, আমি এখন স্টুডেন্ট হতে চাই। তবে যখন দিদিমণি হতে বলছেনই, তখন বলব: মিথ্যেবাদী হও। কেউ হয়তো এমন ছবি করতে বলল, সেটা আপনার ভাল লাগছে না। বা টাকায় পোষাচ্ছে না। মুখের উপর খবরদার ‘না’ বলবেন না। বলবেন, ‘এম্মা, ওই দিনে তো আমার আর একটা শ্যুটিং পড়ে গেছে।’ তবে কোনও চেনাজানা পরিচালকের নাম বলবেন না। ধরা পড়ে যাবেন। বরং বলবেন, ‘ফেস্টিভ্যাল ফিল্ম করছি।’ দ্বিতীয় হল, লোকের কথা শুনে ক্ষুদিরাম হবেন না। তৃতীয় হল, মুখ বন্ধ করে একটু অন্যের কথা শুনবেন। তৃতীয়টা আমি রপ্ত করতে পারিনি। ফোর্থ আর একটা পয়েন্ট আছে: সাংবাদিকদের বিশ্বাস করবেন না। (হাসি)
আপনাকে কি কোনও সাংবাদিক ধোকা দিয়েছেন?
(হাসি) না, না, না। আমার সঙ্গে আসলে সকলে এত সুইট, এমনকী এক্স বয়ফ্রেন্ডরাও ফোন করে আমার খোঁজ নেয়।
ক’জন আছেন সে তালিকায়?
দু’জন।
মাত্র? আপনার ইমেজের সঙ্গে সংখ্যাটা যাচ্ছে না তো!
(হাসি) একটা অলিন্দ, একটা নিলয়। তাই আমার প্রেমও দুটোই। তবে প্রমিস করছি, এক বছর পরে ইন্টারভিউ নিলে সংখ্যাটা পাঁচে গিয়ে ঠেকবে।
বাকি তিনজনকে স্ট্যান্ডবাই রেখেছেন? টেস্ট ম্যাচ দু’টো খেলেছেন। বাদ বাকি টি টোয়েন্টি!
স্ট্যান্ডবাই নেই। হয়তো সেই মুহূর্তে খুব আনন্দ পেয়েছি। তার পরে সেটা গাঢ় সম্পর্কে গড়ায়নি।
এই টি টোয়েন্টি ক’বার খেলেছেন?
আচ্ছা, জীবনে ক’বার পেটখারাপ হয়েছে বলা যায়? (হাসি)
কিন্তু পক্স ক’বার হয়েছে বলা যায়...
(হাসি) ওটাই হল দুটো প্রেম। বাদবাকিটা তো সবই পেটখারাপ। জীবনে প্রেম ছাড়া আর আছে কী!
শুনেছি গত এক বছরে খুব ভুগছেন...
সংখ্যাটা দুই। গাঁটছড়া বাঁধিনি কোনও দিন। কিন্তু তারা থাকবে। আসলে সম্পর্ক ব্যাপারটা আমি আজকাল অন্য ভাবে দেখি। গত দেড় বছরে আমার পেশাদার জীবনে অনেক কিছু যেমন হয়েছে, ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছু দেখেছি। ২৫ বছর সংসার করার পর আমার বাবা-মা এখন সেপারেটেড।
অনেকটাই সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘বেলাশেষে’র মতো...
হুমমম... এক সময় ভাবতেও পারিনি এটা হবে। কিন্তু তারপর নিজেই দেখেছি যে, এতেই দু’জনে ভাল আছে। ৫২ বছর বয়সে এসে মাকে দেখছি নতুন করে কত কিছু করতে। অরফানদের নিয়ে কাজ করছে। সে দিন তালের বড়া তৈরি করেছে। বাসে করে মধ্যমগ্রাম থেকে এসে আমাকে দিয়ে গেল। জীবনে এত কিছু দেখি যে, সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সহজভাবে কিছুই বলতে পারি না।
আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?
হ্যাঁ। তবে ইন্ডাস্ট্রির নয়। আর পাঁচটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের মতোই সে পজেসিভ।
টি২০-তে তাঁর আপত্তি নেই?
ওর ধারণা এতে আমার মন ভাল থাকে।
‘সেলফি’ ছবিতে আপনার চরিত্র খোলা পিঠে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অটোগ্রাফ চেয়েছিল। ব্যক্তি সোহিনী কার কাছে পিঠ বেআব্রু করে অটোগ্রাফ চাইবেন?
পিঠ উন্মোচন করতে চাই না। পিঠে যদি কিল বসিয়ে দেয়? বকুনি দেয়?
খুব বকুনি খেয়েছেন নাকি?
হয়তো মনখারাপ করছি। বলল, ‘বেশি মনখারাপ কিন্তু বিলাসিতার লক্ষণ’।
সইয়ের জন্য যদি নায়ক-অভিনেতার মধ্যে বাছতে বলা হয়, তা হলে?
বাছলে ছবি থেকে বাদ পড়ব।
আরে ছবিতে নেওয়া বা না-নেওয়া তো প্রযোজকের কাজ...
(হেসে) তা হলে প্রযোজকের নামই লিখি। অত নাম, পেশা জেনে কী হবে? তার চোখ সুন্দর, তার বুক ভর্তি লোম— এ সবই তো তার পরিচয়।
সায়নি, পায়েল, মিমি, স্বস্তিকা, পাওলি... এঁদের নাম বললে কী মনে আসে?
সায়নি হল বন্ধু। পায়েল মিষ্টি দেখতে। কিন্তু অ্যাভারেজ অ্যাক্টর। মিমি হল স্মার্ট প্যাকেজিং। স্বস্তিকাদি কী সাহসী অভিনেত্রী! পাওলিদি সব সময় নিজেকে ভাঙছে। নতুন যৌবনের দূত।
আজকাল সবাইকে দিদি বলেন?
না না, প্লিজ দিদিগুলো কেটে দিন। থিয়েটার করে অভ্যস্ত। ওখান থেকে এই দাদা-দিদি বলা অভ্যেস।
কম্পিটিশন হিসেবে কাকে দেখেন?
কাউকে না। কোনও চরিত্র দেখে এখনও পর্যন্ত মনে হয়নি যে, আমি করতে পারব না। অ্যাডমায়ার করি স্বস্তিকাকে। ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’র ট্রেলার দেখে ফেটে গিয়েছি।
অনেক অমিলের মধ্যেও, কোথাও কি দু’জনের মধ্যে মিল আছে? আপনিও বেশ ইনহিবিশন ফ্রি...
হুঁ... কিন্তু নিজেকে ‘স্বস্তিকা ২’ হিসেবে মডেল করতে চাই না। কারণ স্বস্তিকা একজনই। আমার সোহিনী হওয়ার রেসিপিটা একান্ত নিজস্ব।
টলিউডের তিনজন সেক্সি পরিচালকের তালিকা বানান...
প্রথমে কমলেশ্বর। কী ম্যানলি। একটা ব্যাপার আছে ভদ্রলোকের মধ্যে।
সৃজিত বা পরমব্রত প্রথম নয় কেন?
পরমদা? আমার প্রথম সিরিয়ালে ও আমার দাদার রোল করেছিল। কী বকা খেতাম ওর কাছে। এখন অবশ্য আর বকে না। পরমদা খুব সুইট।
তা হলে সেই তালিকার কী হল?
দ্বিতীয়তে, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ‘ওপেন টি...’ শ্যুট করতে গিয়ে দেখতাম রোজ নতুন নতুন হাফ কুর্তা আর জ্যাকেট পরে আসছে। আমরা তো ভাবলাম শ্যুটিংয়ে আলাদা ডিজাইনার রেখেছে নিজের জন্য। বিনয়বাবু টাইপের একটা ভাব আছে। কিন্তু কটু কথাও বেশ মিষ্টি করে বলে দিতে পারে। তৃতীয় হল সৃজিতদা। ওর একটা কেত আছে। এমনিতে প্রচণ্ড পাকা।
এটা লিখব?
হ্যাঁ। এটাই তো ওর সেক্স অ্যাপিল।
কাঁচাপাকা দাড়ির প্রতি আপনার আলাদা টান আছে?
কাঁচা দাড়ির কেউ নেই তো।
‘ফড়িং’য়ের ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী?
ওটা দাড়ি নয়। ওকে এই লিস্টে রাখলে আমাকে মারবে। ও তো একদম জেঠু।
‘ফড়িং’ দিয়ে তো আপনার আত্মপ্রকাশ। সে আজ জেঠু!
আমি জেঠু ডাকলে ও রাগ করবে না।
যদি এক নির্জন দ্বীপে এক বোতল রেড ওয়াইন আর একজন পরিচালককে নিয়ে যেতে হয়, তা হলে এদের মধ্যে কাকে নেবেন?
রেকি করতে যাওয়ার জন্য?
রবীন্দ্রনাথ পড়বেন না গান গাইবেন তা আমরা জানতে চাই না...
তা হলে ‘রূপকথা নয়’য়ের পরিচালক অতনু ঘোষকে নিয়ে যাব। আমি ঘুরে ঘুরে বেড়াবো আর ও হয়তো বলবে, ‘কী রে কোথায় হারিয়ে গেলি?’
এঁদের তিনজনের মধ্যে কারওকে নেবেন না?
না না, এরা এতটাই সেক্সি যে নেব না। তা ছাড়া অনিন্দ্যদা খুব সাজবে। কমলেশ্বরদার ডোন্ট কেয়ার ভাব। সেটা নিয়ে ঝগড়া হবে। আর সৃজিতদা হলে প্রচুর পাকামো করবে। বলবে জানিস কোন ধরনের মাটি দিয়ে এই দ্বীপটা তৈরি। হয়তো পলিমাটি বোঝাবে, দোঁআশ মাটি বোঝাবে। বা ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’তে টম হ্যাঙ্কস কী করে দ্বীপে গিয়ে অভিনয় করেছিল সেটাই বোঝাতে শুরু করবে। এ সব আমার পোষাবে না। (হাসি)
আর আপনার দাদাকে?
ইস্... যদি দুষ্টুমি করে... (হাসি)
লোকেশন: ওয়েট ও ওয়াইল্ড (নিক্কো পার্ক)।
হেয়ার ও মেক আপ: সোনালি কর্মকার ছবি: কৌশিক সরকার।
আনাচে কানাচে
‘ঝিঙ্কু’ চুমু: মীরের জন্মদিনে শ্রীলেখা মিত্র। ছবি: কৌশিক সরকার।