রবতা বনা দি জোড়ি

ওঁদের ভাবও যেমন, ঝগড়াও প্রচুর। কলকাতায় সুশান্ত সিংহ রাজপুত-কৃতী শ্যানন। সামনে আনন্দ প্লাসওঁদের ভাবও যেমন, ঝগড়াও প্রচুর। কলকাতায় সুশান্ত সিংহ রাজপুত-কৃতী শ্যানন। সামনে আনন্দ প্লাস

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share:

সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে পাঁচ মিনিটের জন্য ধুমপানের বিরতি দিতে হবে! বলেন কী! ঘড়িতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা। ৯ তারিখ মুক্তি পেতে চলা ‘রবতা’ ছবি নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার অফিসে এসেছেন সুশান্তের সঙ্গে কৃতী শ্যানন। সাড়ে ৮টার ফ্লাইটে শহর ছাড়বেন। চার তলার বন্ধ ঘরে দু’দফা সাংবাদিক মোলাকাতের পর ঢুকবে ‘টিম আনন্দ প্লাস’! তখনই ওঁর সিকিয়োরিটি চিন্তিত মুখে এসে প্লাস-টিমকে অমন অনুরোধ।

Advertisement

অগত্যা। ঘর থেকে বেরিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলেন সুদর্শন বলিউডি নায়ক। সঙ্গে তাঁর তন্বী নায়িকা।

ঠিক সাড়ে সাত মিনিট পরেই আবার ঘরে প্রবেশ দু’জনের। হাই-হ্যালো পর্ব সেরে সামনে রাখা কফি কাপ সরিয়ে, কোল্ডড্রিংকের ক্যানটা তুলে নিলেন সুশান্ত!

Advertisement

এ কী পর পর ‘অনর্থ’ করে চলেছেন যে! একে সিগারেট, তার উপর আবার কফি সরিয়ে ঠান্ডা পানীয়?

একগাল হেসে সুশান্তের গড়পড়তা ধূম্রপায়ীদের মতোই সাফাই, ‘‘আরে এত যে বিষ ধোঁয়া চারপাশে। সেটাও তো অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইনহেল করছি।’’

কৃতী, আপনি কিছু বলেন না? ব্লাশ করলেন কৃতী, ‘‘আমি কী বলব! তবে আমি স্মোকিং ব্যাপারটা হেট করি।’’ পাশ থেকে সাত তাড়াতাড়ি সুশান্ত বলে উঠলেন, ‘‘আমিও তাই।’’

মিঠাই আর মাছের ঝোল

কৃতীর কলকাতায় আসা এই প্রথম বার। শহরের কথা অনেক শুনেছেন। প্ল্যান-প্রোগ্রামও হয়েছে বারকয়েক। আসা হয়নি। তাই এ বারে আসার আগে প্রচণ্ড উত্তেজিত ছিলেন। এসেই নাকি দু’জনে মিলে ধুপধাপ করে মিষ্টির অর্ডার দিয়েছেন। মিষ্টি দই, রসগোল্লা, চমচম! সবাই তো কলকাতায় এলেই মিষ্টি খান। কেন অন্য বাঙালি খাবারে আপনাদের রুচি নেই বুঝি? শুনে উত্তেজিত দু’জনেই। সুশান্ত বললেন, ‘‘ইয়েস। আমি শুক্তো খাব বলে অর্ডার করেছিলাম। দারুণ লেগেছে। আর মাছের কী যেন একটা...,’’ ভাবতে লাগলেন।

ভাজা নাকি ঝোল? ‘‘ইয়েস মাছের ঝোল।’’ পাশ থেকে কৃতী বললেন, ‘‘ঝোল? কী একটা কারি যেন বলছিলেন ওঁরা!’’ দু’জনেই ভালমাত্রায় ‘ফুডি’। যেখানেই যান নাকি ভাল খাবারের ধান্দায় থাকেন। স্বভাবতই প্রশ্ন, সত্যিই কি আপনারা ডায়েটের ধার ধারেন না? কৃতী বললেন, ‘‘দেখুন, অভিনয়ের জন্য খুব দরকার না হলে, আমি যা খুশি খাই।’’

সুশান্ত আর এক কাঠি উপর দিয়ে যান। বললেন, ‘‘দেখুন, আমি তো ট্রেনারকে পর্যন্ত বলে দিয়েছি, প্রত্যেক দিন আমায় একটা না একটা সময় দিতে হবে, যখন আমি যা খুশি খাব। যতটা পারি খাব।’’ কিন্তু শোনা যায়, আপনাকে প্রচণ্ড ওয়র্কআউট করতে হয়েছে, ধোনির বায়োপিকের সময়?

‘‘তখন করেছি। ওজন ৮৬ কেজি থেকে ৭১-এ নিয়ে গিয়েছি। আবার এই ছবিতে দেখুন না, একবার আমার ওজন থাকবে, ৭৪-৭৫ কেজির মতো। তার পরই আবার ৮০ কেজির উপর। তবে আমার একটা সুবিধে কী বলুন তো, আমি বেশির ভাগ সময়ই কাজের কারণে একটা না একটা ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এই যেমন, একটা সময় ডান্সিং ট্রেনিং নিয়েছি। তখন তো প্রচুর ফিজিক্যাল প্রসেসিং হয়েছে। তবে আমি ঠিক যেটাকে জিম করা বলে, সেটা করি না। এমন একটা এক্সটেনসিভ ফিজিক্যাল ট্রেনিং করি, যেটা একই সঙ্গে সারা শরীরে কাজ করে। এই ছবির জন্যই দেখুন না, মার্শাল আর্টও শিখলাম।’’

স্বপ্নের চরিত্র

কিছু দিন আগেই কৃতীকে একটি সাক্ষাৎকারে বলতে শোনা গিয়েছিল, তিনি নাকি প্রচণ্ড ‘সুইচ অফ-সুইচ অন’ পদ্ধতিতে চলেন। যখন যেটা করেন, তখন সেটাই। অন্য কথা ভুলে যান। এ শহরে তাঁর গলায় কিন্তু অন্য স্বর।

স্বপ্নের চরিত্র আছে কি না জানতে চাওয়ায়, প্রথমে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়েও তার পরই বলে ফেললেন, ‘যব উই মেট’, ‘কুইন’... বললেন, ‘‘কুইন দেখতে গিয়ে কঙ্গনার ক্যারেকটারটা দেখে পুরো বোল্ড হয়ে গিয়েছিলাম। পরদায় সিমপ্লিসিটি, ভালনারেবিলিটি দেখানোটা প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং। সেটা ওই চরিত্রে ছিল। আর একটা ছবি, ‘প্রিটি উম্যান’। ওফ, জুলিয়া রবার্টসের মতো একটা চরিত্র যদি পেতাম, আহা!’’

ফাইট অ্যান্ড এনজয়

দু’জনের নাকি প্রচণ্ড মিল। খানা-রসিক ছাড়াও দু’জনেই ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। ইদানীং তো জোর গুজব, ওঁরা ডেট করেন। অন স্ক্রিন, অফ স্ক্রিন কেমিস্ট্রি নাকি ওঁদের তুখড়। ডে়টিংয়ের গপ্‌পোটা শিকেয় তুলে দু’জনে এখানেও খুল্লামখুল্লা জবাবে।

সুশান্ত বললেন, ‘‘দেখুন, মিল যা দেখেন সব ছবিতে, বাকিটা তক্কাতক্কি।’’ কৃতী হো হো করে হেসে উঠে বললেন, ‘‘এই যেমন আমি হরর ফিল্ম একদম পছন্দ করি না। ও করে। আমি রম-কম পছন্দ করি। ও করে না। এমনিতে ছোট্টখাট্ট অনেক কিছু নিয়েই আমাদের তেড়ে ঝগড়া চলে।’’

গুগল করে দু’জনের পড়াশোনার গ্রাফটা দেখে নেবেন। বাজি রাখা যেতে পারে, আগে না জানলে প্রথম বার দেখে চোখ কচলাবেন! তার উপর কৃতীর বাবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। মা প্রোফেসর। অভিনয়ে চলে আসাতে বাধা আসেনি?

বাদামি রেখার কালো চুলের গোছটা চোখের উপর থেকে সরিয়ে এই একবার যেন সিরিয়াস কৃতী, ‘‘আমি সত্যিই ভাগ্যবান। প্রচণ্ড প্যামপার্ড চাইল্ড। বাড়ি ছেড়ে এই প্রথম একা থাকছি। বাবা খুব চিন্তা করে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা তো খুব সিকিয়োর্ড নয়। প্রত্যেক শুক্রবার ভাগ্যটা চ্যালেঞ্জড হয়। কিন্তু লড়ে যাচ্ছি। এখনও ফেলিয়োর কাকে বলে দেখিনি। তাই জানিও না, অমন হলে কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করব! তবে যতক্ষণ আপনি আপনার কাজটাকে এনজয় করবেন, দেখবেন কোনও কিছুকেই শক্ত বলে মনে হবে না। আমার এখন তাই-ই হচ্ছে।’’

কৃতীর কথারই রেশ যেন সুশান্তের গলায়। কম বয়সে মা-কে হারিয়েছেন। বড় দিদিই যেন ছিলেন মায়ের মতো। এক দিদি আবার বড় লেভেলে ক্রিকেট খেলেছেন। বাড়ির আদরের সুশান্ত কিন্তু উজ্জ্বল কেরিয়ার ছুড়ে ফেলে এক সময় থিয়েটার করেছেন। আড়াইশো টাকা দিনমজুরিতে। একটা রান্না ঘরে ছ’জন বন্ধু মিলেও দিন কাটিয়েছেন। রান্না করেছেন। জামাকাপড় কেচেছেন। তার পর থিয়েটার ছেড়ে ২০০৬ থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে।

‘‘দেখুন, আমি পড়াশোনা করেছি, স্বচ্ছল হব বলে। আমার পরিবার-পরিজনকে ভাল রাখতে পারব বলে।
এই প্রথম বার এমন একটা রাস্তায় আমি নেমেছি যে,
আমার লক্ষ্যগুলো পূরণ হচ্ছে। আমি খুশি। এখন কোনওটাই লড়াই বলে মনে হয় না। আই এনজয়। যত দিন এই এনজয়মেন্টটা থাকবে, আমি কোনও কিছুকেই স্ট্রাগল বলে ভাবব না।’’

আনন্দ। জীবনে আনন্দটাই ওদের শেষ কথা। ‘রবতা’ বনা দি জোড়ি!

ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ফুড পার্টনার: দ্য অ্যাস্টর হোটেল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement