ছবি: রোহন শ্রেষ্ঠা
সেদিন সকালে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার বাবা (প্রয়াত ডা. অশোক চোপড়া)-র নামে মুম্বইতে একটা রাস্তা উদ্বোধন হয়েছে। সেখানেই গিয়েছিলেন তিনি। বলিউডে প্রথম যখন পা রেখেছিলেন, তখন তাঁকে সবাই চিনতেন প্রিয়ঙ্কার খুড়তুতো বোন হিসেবে। তবে ‘লেডিজ ভার্সাস রিকি বহেল’, ‘ইশাকজাদে’, ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’ আর ‘হসি তো ফসি’ করার পর পরিণীতি চোপড়ার নিজস্ব পরিচিতি যথেষ্ট।
এক সময় বিদেশে ব্যাঙ্কার হিসেবে কাজ করেছেন। রিসেশনের সময় দেশে ফিরে যশরাজ ফিল্মস্-এ চাকরি। এর পর পরিচালক মণীশ শর্মার ‘লেডিজ ভার্সাস রিকি বহেল’-এ তাঁর আত্মপ্রকাশ। এখন বলিউডের অন্যতম চর্চিত নায়িকা পরিণীতি। জেঠুর নামে রাস্তা উদ্বোধন, ফিল্মের ডাবিং আর দুবাইয়ের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার ফাঁকে মুম্বইয়ের যশরাজ স্টুডিয়োতে তিনি বসলেন আড্ডা দিতে...
আগামী এক মাস তো রাত দিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটবে...
কেন?
এই যে ওয়ার্ল্ড কাপ শুরু হয়ে গেল!
ফুটবলে আমার কোনও আগ্রহ নেই।
আপনি তো ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে কাজ করতেন এক সময়...
হ্যাঁ, আসলে আমার জীবনে অনেক আয়রনি রয়েছে। ফুটবল তার মধ্যে অন্যতম। একটা ম্যাচও আমি দেখছি না। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে কাজ করেছি ঠিকই। কিন্তু কোনও দিনই বুঝতে পারিনি কোন খেলোয়াড় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে খেলেন। বেকহ্যামকে চিনতাম ঠিকই। এত জনপ্রিয় সেলিব্রিটি, তাই চিনতাম।
আপনি তো সে সময় ফ্রি ম্যাচ পাস-ও পেতেন?
হ্যাঁ, যে কোনও সময় খেলা দেখতে যেতে পারতাম। কিন্তু একটা খেলাও দেখতে যেতাম না।
তা দেখে আপনার বন্ধুরা রেগে যেতেন না দেখে?
দে ওয়ান্টেড টু হিট মি। ওল্ড ট্রাফোর্ডে যে কোনও সময় ঢুকতে-বেরোতে পারতাম। আমি কেটারিং টিম-এর লিডার ছিলাম। শুধুমাত্র ম্যাচের দিনে আমার কাজ থাকত। হয়তো অনেক ভাল ভাল ম্যাচ মিস করেছি।
অনুশোচনা হয়?
না। এখন রাত জেগে একটা ম্যাচও দেখব না। বাড়িতে ভাই ম্যাচ দেখবে। ওর অন্য টিভি আছে। ইট ইজ দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ, রাইট?
মানে, হ্যাঁ...
স্পোর্টস নিয়ে আমার কোনও ইন্টারেস্ট নেই। কোনও স্পোর্টস-এ পার্টিসিপেট করিনি। কেউ জিজ্ঞেস করলে ভুলভাল বলার থেকে প্রথমেই বলে দিই স্পোর্টস নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। কোন দলকে সাপোর্ট করব, এ সব নিয়ে কথা বলার লেভেলে আমি নেই।
এক সময় আপনি বলেছিলেন যে খুব ভেবেচিন্তে কথা বলেন না। ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে এখনও কি ও রকম স্বতঃস্ফূর্ত আছেন?
ইট ইজ আ ট্রিকি সিচুয়েশন। আগে খুব গর্বের সঙ্গে বলতাম যে অত ভেবে বলি না। আমি হয়তো একটা লাইন বললাম। তার পর দেখলাম তার থেকে একটা শব্দ তুলে নিয়ে এমন ভাবে হেডলাইন করা হল যাতে মানেটাই পাল্টে গেল।
ওই যেমন আপনার খান-দের সঙ্গে কাজ করবেন না বলে বিতর্কিত উক্তিটা...
ওটা মিসকোট হয়েছিল। আমি তো সইফ আলি খানের সঙ্গে একটা ছবি সই করেছি। আমি সইফের বিশাল ফ্যান। ওঁকে দেখলেই হাঁটু দু’টো কাঁপতে শুরু করে। ছবিটা সইফ সহ-প্রযোজনা করছেন। পরিচালক দীনেশ ভিজান। উনি সইফের পার্টনার। এই প্রথম কোনও খান- সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করব। আশা করছি এর পর অন্য খানদের সঙ্গেও কাজ করতে পারব।
আপনি খানদের নিয়ে বিতর্কিত কোটটার কথা বলছেন...
এ রকম অনেক উদাহরণ আছে।
আমি হয়তো ফ্লো-তে কথা বললাম। হয়তো বলেছি, ওমুক ভাল। আই লভ হিম। ওমা! পরের দিন দেখি লেখা হল আমি প্রেমে পড়েছি। একটা পারফেক্টলি প্লেটোনিক স্টেটমেন্টকে ঘুরিয়ে কী সব করা হয়! পাতিয়ালাতে বসে কেউ সেই সাক্ষাৎকারটা পড়লে তো যা ছেপে বেরোচ্ছে, সেটাকেই সত্যি ভেবে নেন। আমি হিসেব করে আজও কথা বলি না। এখন আমি অনেস্টলি উত্তর দিই। কিন্তু ভেবেচিন্তে শব্দগুলো ব্যবহার করি। আজকাল সেফ শব্দ ব্যবহার করি।
এই শিক্ষাটা কোথা থেকে পেয়েছেন?
আই হ্যাভ লার্ন্ট ইট দ্য হার্ড ওয়ে। এক অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেখানে উনি বলেছিলেন একটা সময় ছিল যখন সাংবাদিকরা হিরোইনদের ছবি দেখে বলতেন যে এখানে ওঁকে সব থেকে সুন্দর লাগছে দেখতে— এই ছবিটাই প্রকাশ করা হোক। কিন্তু এখন হল, ‘উফ্, কী বোরিং ছবি! চলো সব থেকে মসালাদার ছবি খুঁজি!’
কী বলছেন! সবাই এ রকম করে না...
কিছু পাবলিকেশন আছে। সবাই অবজেকটিভ/ র্যাশনাল হয় না। হয়তো মুখ ভেঙিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। অমনি তাঁরা বলেন: ‘চলো, এই ছবিটাই ব্যবহার করি।’ এই সব করে পরের দিনের কাগজটা বিক্রি হয়। কিন্তু এতে আমাদের ইমেজটা দশ বছরের জন্য খারাপ হয়ে যায়।
এক সিনিয়র অভিনেত্রী আপনার সম্পর্কে বলেছেন যে পরিণীতি চোপড়া হলেন এমন একজন তারকা, যিনি একজন জোরালো অভিনেত্রীও। কিন্তু ওকে কোনও ইন্টেলেকচুয়াল ব্যাগেজ বয়ে বেড়াতে হয় না...
তাই নাকি? আগে বলুন এটা কে বলেছে? তার পর উত্তর দেব।
নামটা প্রকাশ করতে পারছি না এখনই...
(মন খারাপ করে) এটা তো কমপ্লিমেন্ট। নাম বলতে আপত্তি কী? তবে এটুকু বলছি যে যিনিই এটা বলুন, তিনি খুব ভাল মানুষ। শি হ্যাজ আ বিগ হার্ট। জেনুইনলি কত জন কমপ্লিমেন্ট করেন এ ভাবে? আমার থেকে সিনিয়র হলে তো সেটা আরও বড় ব্যাপার। আমাকে নিয়ে দু’মিনিট ভেবেছেন।
কিন্তু এটা কি সত্যি যে আপনি খুব কম সিনেমা দেখেন?
হ্যাঁ, ইট টেকস আ লট ফর মি টু ওয়াচ আ মুভি ফর থ্রি আওয়ার্স। তবে নিজের ছবিগুলো দেখেছি।
কোন কাল্ট ছবিগুলো দেখেননি?
অনেক আছে। নাম বললে লোকে আমাকে মারবে।
বলুন না...
আসলে অনেক সময় আমাকে লোকে বলে আরে, ওই ছবিতে অমুকে ওটা করেছিল। আমি বলি আমি তো সেটা দেখিনি! কী করে বুঝব?
অভিনয় করতে গেলে কোনও ফিল্মি রেফারেন্স আপনার কাছে চলে না?
না। চলে না। তবে নাম করে বলে কাউকে ছোট করতে চাই না।
আপনি কি জানেন সোনাক্ষী ‘শোলে’ দেখেননি?
আমিও দেখিনি।
‘কয়ামত সে কয়ামত তক’?
(গলাটা নামিয়ে) না।
‘ম্যয়নে প্যার কিয়া’?
কিছু অংশ দেখেছি।
‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’?
ওটা দেখেছি। ‘ডিডিএলজে’ আমার দেখা প্রথম ছবি। আমার তখন ৬ বছর বয়স। ইট রিলিজড অন ২০ অক্টোবর। ওটা দেখা আমার বার্থডে ট্রিট ছিল। ‘ডিডিএলজে’ আমার প্রিয় ছবিগুলোর একটা। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘কল হো না হো’— এগুলোও দেখেছি। আমি আসলে অনেক রমকম দেখেছি। তবে যে ছবিগুলোর আপনি নাম করলেন, সেগুলো প্রত্যেকটাই স্পেকটাকুলার। এগুলো নিশ্চয়ই দেখে ফেলব।
অবসর সময়ে কী করেন?
ট্রাভেল করি। স্কুবা ডাইভিং। হোম থিয়েটার আছে। অনেক ডিভিডি আছে। যদিও তার ৯০ শতাংশ এখনও দেখে ওঠা হয়নি।
এটা সাধারণত বইয়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে...
আমার ক্ষেত্রে একদম উল্টো। আমি প্রচুর বই কিনি আর পড়ি। সিঙ্গিং আমার প্যাশন।
আপনার সব ছবি প্রেম নিয়ে। ‘কিল দিল’, ‘দাওয়াত-এ-ইশক্’য়ে প্রেমকে কী ভাবে নতুন করে আবিষ্কার করছেন আপনি?
হ্যাঁ, আমার সব ছবিতেই প্রেম আছে। ‘ইশাকজাদে’ হল ‘টু ডাই ফর লভ’। ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’ হল লিভ-ইন রিলেশনশিপ, ‘নিউ এজ’ প্রেম। ‘হসি তো ফসি’ হল ‘ইয়াং লভ’। ‘দাওয়াত-এ-ইশক্’ হল লভ ফর ফুড। ছবিতে আদিত্য (রায় কপূর) হল শেফ। এটাও মডার্ন লভ স্টোরি। দু’জনের ইন্টারেস্ট এক রকম হলে কী ভাবে প্রেমে পড়া যায়— গল্পটা তা নিয়েই। শাদ আলির ‘কিল দিল’ একদম অন্য ধরনের। এতে দেখাচ্ছি প্রেম কী ভাবে জীবনকে অ্যাফেক্ট কর। প্রেমে পড়লে কী ভাবে পাল্টে যায় মানুষ— এ সব প্রতিক্রিয়াগুলোই ধরতে চাওয়া হয়েছে।
পর্দায় এত প্রেম। কিন্তু বাস্তবে আপনার জীবনে প্রেমের অভাব কেন?
(হাসি) দোজ হু প্রিচ, ডু নট প্র্যাকটিস। যাঁরা জ্ঞান দেন, তাঁরা জীবনে সেটা করেন না!
আপনি বেশি ব্যস্ত না বেশি চুজি...
আমি সত্যি আনলাকি। নো গুড বয়েজ কামিং মাই ওয়ে। আমি ভাবতাম এই তো অভিনেত্রী হয়ে গিয়েছি। এর পর তো কত লোকের সঙ্গে আলাপ হবে, কত অপশনস হবে। আর দেখুন আমার কী লাক! জিরো অপশনস।
অসুবিধে কোথায়? প্রেমে পড়ার বদলে বাডি-বাডি হয়ে যান?
নাহ্। আমি খুব ফ্রেন্ডলি। প্রেমে পড়ার আগে বন্ধুত্ব হলে তো ভালই! কিন্তু এমন কাউকে পাইনি যার সঙ্গে প্রেম করা যায়।
কোনও দিন এমন কাউকে পাননি?
হয়েছে। আগে রিলেশনশিপ ছিল। দে ডিড নট ওয়ার্ক। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়ার পর কিছু হয়নি। একটা ফিল্মের পর আরেকটা ফিল্ম করে গিয়েছি। ডিরেক্টর্স, কো-স্টারস, অ্যাসিন্ট্যান্ট ডিরেক্টর্স— এঁদের কাউকে তেমন মনে হয়নি। আই রিয়েলি ওয়ান্ট টু বি ইন আ রিলেশনশিপ। আমার মনে হয় পিপল শুড লিঙ্ক মি আপ উইথ এভরিওয়ান।
কিন্তু সেটাও তো হয় না...
আরে মণীশ (শর্মা)-কে নিয়ে তো কত গুজব রটেছে।
ওটা তো পুরনো হয়ে গিয়েছে...
হ্যাঁ, বোরিং রিউমার। তবু লোকে এই নিয়ে বলে। প্রথম প্রথম যখন বলা হত, আমি ভাবতাম কিছু দিন পরেই থেমে যাবে। এখন অনেকটা কমেছে। (হাসি) নতুন গুজব দরকার আমাকে নিয়ে।
অন-স্ক্রিন এত প্রেম আর বাস্তবে কোনও ভাল লিংক-আপ হচ্ছে না!
(হাসি) কী ভাল অভিনয় করছি বলুন তো! তার মানে স্ক্রিনে একদম নিজেকে এক্সহস্ট করে ফেলেছি। তবে জোকস আর ফিলসফি বাদ দিয়ে বলছি, সত্যি কথা হল কাউকে পাইনি।
প্রেমে পড়তে গেলে পুরুষের মধ্যে কী খোঁজেন? প্লিজ, শুধু সেন্স অব হিউমার বলবেন না...
না, না। ওটা আমার নিজেরই রয়েছে। ম্যাচিওর পুরুষ দরকার। আমার বয়সের তুলনায় আমি ম্যাচিওর্ড।
মানে পরিণত পুরুষ?
হোয়াট ডাজ ইট মিন?
পরিণত মানে ম্যাচিওর্ড...
ওহ্, জানতাম না।
তার মানে আপনার নামটা পরিণত হলেও ক্ষতি ছিল না...
আমার নামটা পরিণীতি। মানে ডেস্টিনি। কিন্তু চাইলে আপনি পরিণত বলে ডাকতে পারেন (হাসি)। আসলে আমি শুধু শুধু ডেট করতে চাই না। আই ডোন্ট হ্যাভ রিলেশনশিপস ফর ফিজিক্যাল আর্জেস। ‘লেট মি ট্রাই’ ভেবে আমি রিলেশনশিপে যেতে চাই না। যদি কারও সঙ্গে সম্পর্ক হয়, তা হলে আমি সেখানে একদম সিরিয়াস। কমিটেড রিলেশনশিপ তৈরি করতে চাই। তার জন্য আমার ম্যাচিওর কাউকে দরকার। মেন্টাল ওয়েভলেংথটা ম্যাচ করতে হবে। ইফ আই ফল ইন লভ উইথ সামওয়ান, আই উইল কমিট ইমিডিয়েটলি। আমি চাই এমন একজন পুরুষ, যে খুব রিয়েল। যার সঙ্গে বসে গল্প করতে পারি।
এমন কেউ যিনি আপনার খেয়াল রাখবেন?
আমি খুব ঘরোয়া। হোমলি। এমন কাউকে চাই যে আমাকে সাপোর্ট করবে। অভিনেত্রী বলেই আবার এমন কাউকে চাই যে আমার পরিস্থিতিটা বুঝবে। স্ক্রিনে হিরোদের সঙ্গে আমাকে রোম্যান্স করতে হয়। সেগুলো তাকে বুঝতে হবে।
অনেক অভিনেত্রীর এটাই সমস্যা হয় যে পুরুষরা চান না গার্লফ্রেন্ড পর্দায় অন্য কারও সঙ্গে রোম্যান্স করুক, ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করুক...
এটা হয়। না বুঝে যদি সারাক্ষণ বলে যায় কেন এমনটা করছ, তা হলে আমার ভাল লাগবে না। আই নিড সামওয়ান হু ইজ সর্টেড অ্যান্ড সিকিওর।
আপনি তো এ রকম নন যে যদি পার্টনার বলেন পর্দায় কিছু করবেন না, অমনি আপনি তা করা বন্ধ করে দেবেন...
ব্যাপারটা ঠিক ও রকম নয়। যদি খুব স্ট্রং একটা রিলেশনশিপ হয়, আর আমার পার্টনার এসে বলেন যে ও কিছু ব্যাপারে কমফর্টেবল নয়, আমি সেটা ভেবে দেখব। যদি বুঝি ও সেটা ইনসিকিওরিটি থেকে বলছে না, ডমিনেট করার জন্য বলছে না, কোনও জেলাসি থেকে বলছে না, হয়তো একটা ম্যাচিওর জায়গা থেকে কথাগুলো বলছে, তা হলে আমি শুনব।
ইন্ডাস্ট্রির কাউকে প্রেমিক হিসেবে ভাবতে আপত্তি আছে?
না, মানুষটাই আসল।
এক সময় বলেছেন যে মণীশ এমন একজন মানুষ, যাঁকে আপনি রাত তিনটের সময়ও ফোন করতে পারবেন। এখনও কি তাই?
আই অ্যাম ক্লোজেস্ট টু হিম ইন মুম্বই। গোটা দুনিয়ায় আর দু’জন আছে, যার সঙ্গে আমার এই রকমের বন্ধুত্ব আছে। মণীশ আমার থেকে ৬ বছরের বড়। ওর সঙ্গে তো টানা ৮ ঘণ্টাও গল্প করেছি। ওর সঙ্গে দু’দিন অন্তর অন্তর দেখা করি। আমার জীবনের সব কথা বলি।
উনি ছবি অফার করলে সেটা ফিরিয়ে দিতে পারবেন?
অফ কোর্স। বলব কী বাজে রোল দিয়েছ। আমি ওকে সব কিছু বলতে পারি। আরে, ও তো আমাকে ডিসকভার করেছে।
কাল যদি মণীশ অন্য কোনও অভিনেত্রীকে ডিসকভার করেন, আর তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যান, আপনি কি জেলাস হয়ে যাবেন?
নো, নেভার। ওয়াট রাবিশ! একদম না। আই হ্যাভ নো ওনারশিপ।
এত ম্যাচিওরিটি নিয়ে কথা বললেন। তাতে কি আপনার বন্ধুদের সার্কেলে আপনার বয়সি লোকজনের সংখ্যাটা কম হয়ে যায় না?
অনেক সময় দেখেছি আমি যা পাঁচ বছর আগে বলেছি, আমার বয়সিরা সেটা এখন বলছে।
তা হলে বন্ধু সার্কেলে সমবয়সি অভিনেত্রী আছে কি নেই?
ছেলেরা তো আমার থেকে বয়সে বড়। আর অন্য সবাই বেশ ইন্টেলিজেন্ট আর নাইস। তাই অসুবিধা হয় না।
কর্ণ জোহরের শোতে সোনম আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। তারপর নাকি অশান্তি। পরে নাকি একটা পার্টিতে গিয়ে আপনি সব মিটমাট করে নিয়েছেন। সোনমের নম্বরটা চেয়ে নিয়েছেন। আসল ব্যাপারটা কী?
পেপারে পড়লাম আমি নাকি কর্ণের পার্টিতে গিয়ে আলাদা করে ওর সঙ্গে কথা বলেছি। এ সব পড়লেও আমার হাসি পায়! সোনমের সঙ্গে আমার আলাপ অর্জুন (কপূর)-এর মাধ্যমে। ওরা খুড়তুতো ভাই-বোন। যখন কোথাও দেখা হয়েছে, আমরা কথা বলেছি।
কর্ণের শোতে যা বলা হয়েছিল, সেটা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
আরে, ওই শোতে ওটাই ফরম্যাট। আমি অনেক কিছু বলেছি, অনেকের সম্পর্কে বলেছি। তবে কাউকে হেট করে কোনও কথা বলিনি কখনও।
তা ছাড়া, র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে তো বোরিং উত্তর দেওয়া যায় না...
আরে আমি তো অত ভাবিনি। আমি শিওর সোনমও ও রকম ভাবেনি।
আচ্ছা, এটা বলুন আপনি কি খুব ডিজাইনার কনসাস?
এখন একটু কনসাস হয়েছি। প্রথমে ভাবতাম কিছু হবে না। শুধু অভিনয় করলেই হবে। এখন মনে হয় এই সবের দিকে নজর দিতে হবে। স্ক্রিনে সুন্দর দেখতে হবে। পোশাকের দিকে নজর দিতে হবে। মোটা লাগলে চলবে না।
কিন্তু আপনার তো আবার জিমে যাওয়া পছন্দের নয়...
আমি খুব আলসে। আমি ডিজাইনার কনসাস নই, তবে এখন স্টাইলিস্টের হেল্প নিই। জামা-কাপড় ব্যাপারটা এখন আমি বেটার বুঝি।
এমন কিছু আছে, যেটা এখন আর করবেন না?
হেয়ার আর মেকআপ নিয়ে অনেক ভুল করেছি। খুব কমপ্লিকেটেড হেয়ারস্টাইল করলে আমাকে মানায় না। সিম্পল হেয়ার আর মেকআপে আমাকে ভাল লাগে।
শুনেছি আপনার সবচেয়ে বড় ফোবিয়া হল সাপ?
হ্যা।ঁ ঠিকই শুনেছেন। এত ভয় যে, ও নিয়ে কথাও বলতে চাই না।
অনেকে আপনার মধ্যে কাজলের স্পন্টেনিটি লক্ষ করেন। কাজলের মতো আপনার চোখগুলো চকচক করে...
হ্যা।ঁ অনেকে আমার প্রসঙ্গে কাজল আর রানির কথা বলে। হয়তো, যে ধরনের রোল করেছি তার জন্য বলে। সেখানে অনেক এনার্জি আছে। আমি খুব একটা মডেলের মতো নই। প্লাস্টিক নই। স্ক্রিনে আমাকে রিয়েল লাগে। কাজল আর রানি ভীষণ ভীষণ ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী। আমার প্রসঙ্গে ওঁদের কথা শুনলে দারুণ লাগে।
বিদ্যা বালনকে এক সময় বলা হত, বলিউডের চতুর্থ খান। কখনও মনে হয় এমন একটা ছবি করবেন যার দায়িত্ব পুরো আপনার কাঁধে থাকবে?
বেশ স্কেয়ারি ব্যাপার। আপনি বোধহয় মহিলাকেন্দ্রিক ছবির কথা বলছেন। সে রকম ছবি করতে অসুবিধা নেই। তবে প্রোডিউসর যেন তাতে লস না করেন। একটাই চিন্তা। শুধু আমি থাকলে লোকে দেখতে আসবে তো?
বাংলা ছবি করবেন?
হ্যা।ঁ ভাষাটা সমস্যা নয়। কিছু দিন আগে কলকাতায় প্রথম বার গিয়েছিলাম। দারুণ লেগেছিল।
যশরাজ স্টুডিয়োতে ঢুকেই দেখলাম নানা নায়ক-নায়িকার ছবি আঁকা। শাহরুখ, সইফ, কাজল, রানি... ইচ্ছে করে না আপনার ছবিটাও দেওয়ালে আঁকা থাকুক?
(হাসি) ভাবিনি। তবে থাকা উচিত না? (হাসি) আদি (আদিত্য চোপড়া)-কে গিয়ে এটা বলুন। কিন্তু সত্যি বলছি, যেখানে আছে সেখানে আমি খুব খুশি। এখানে আমার নিজের মেকআপ রুম আছে। ছবির পোস্টার আছে। এ টুকুই বলব, ওয়ান স্টেপ অ্যাট আ টাইম।
আমার দিদি প্রিয়ঙ্কা
প্রিয়ঙ্কাকে মাঝে মাঝেই বলতে শুনেছি যে ইন্ডাস্ট্রিতে এ বার আমাদের একটা চোপড়া ক্ল্যান দরকার। সে দিন বড়ে পাপা (প্রিয়ঙ্কার বাবা)-র নামে রাস্তা হওয়ার পরে মনে হল কাজটা বোধহয় শুরু হয়েছে। প্রথমে চোপড়াদের নামে রাস্তা হল। এর পর ইন্ডাস্ট্রিতে চোপড়া ক্ল্যান-ও তৈরি হবে।
বড়ে পাপার চলে যাওয়াটা খুব ইমোশনাল মুহূর্ত ছিল আমাদের কাছে। তবে ডা. অশোক চোপড়া রোড নামটা দেখে খুব ভাল লাগছে। বড়ে পাপা মারা যাওয়ার পরে প্রিয়ঙ্কার জীবনের একটা খন্ড যেন চলে গিয়েছে। বড়ে পাপার খুব ঘনিষ্ঠ ছিল ও। কিন্তু কাউকে ও সেটা বুঝতে দেয়নি। ওকে দেখে মনে হয় স্টিলের তৈরি। দুনিয়ার সব থেকে হার্ডওয়ার্কিং অভিনেত্রী আমার দিদি। শি ওয়ার্কস লাইক আ ম্যাড পার্সন। ও তো সে ভাবে রেস্টও নেয় না।
প্রিয়ঙ্কার ক্ষেত্রে কাজ আর পরিবার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দেখি ১০ জন দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে দেখা করার জন্য!
ওর তুলনায় আমি ভীষণ লেজি।
আসলে আমরা দু’জন একটু আলাদা। ফিল্মের বাইরে নিজের সময়টা আমার চাই-ই চাই। কাজ করতে ভাল লাগে। তবে অন্য অনেক কিছু করতে চাই।
এই তো দেখুন, আজ রাতে দুবাই চলে যাচ্ছি বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। আমি এ সব না করে এই তিন দিন কাজ করতেই পারতাম। কিন্তু আমি সেটা পারব না। আমার দু’জন বন্ধু আছে— করাচির সাজিব আর দুবাইয়ে নম্রতা। ওরা আমাকে একদম গ্রাউন্ডেড করে রাখে। হয়তো বলবে, ‘ট্যাক্সি চেপে চলে আয়’। বা ‘তুই আমার থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়েছিলি। ফেরত দে!’ মল-এ গেলে যদি লোকে এসে অটোগ্রাফ চায়, ওরা রেগে গিয়ে আমাকে বলবে আমি নাকি ওদের সময় নষ্ট করছি। এক বারের জন্যও বলে না যে আমি অভিনেত্রী, আর এ রকম তো
হতেই পারে।
ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কিছু দিন কাজ করছি। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে কী ভাবে চলতে হবে, তা নিয়ে দিদি আমাকে কোনও দিন আলাদা করে কিছু বলেনি। একটাই উপদেশ দিয়েছে। ও শুধু বলে এসেছে, “বি ইয়োরসেল্ফ। অনেকে বলবে, ‘এই সিনেমা করো। এই ধরনের জামাকাপড় পরো।’ কিন্তু মনে রেখো একমাত্র সেটাই করবে, যা নিজের ঠিক মনে হবে।” দিদির কথা মেনে, আমি সেটাই করি। আর দিদির সম্পর্কে যদি আমাকে আলাদা করে কিছু বলতে হয়, তা হলে আমি একটা কথাই বলব। দুনিয়ার সব থেকে ভাল ‘ডটার’ হল আমার এই দিদি।