গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর-কাণ্ডে এক দিকে প্রতিদিন প্রতিবাদের আগুন জোরালো হচ্ছে। অন্য দিকে শিল্পীদের ভূমিকা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই সমাজমাধ্যমে রাজনন্দিনী পালের উদ্দেশে ধেয়ে এল কটাক্ষ। অভিনেত্রীও পাল্টা পদক্ষেপ করলেন।
মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন রাজনন্দিনী। জানা গিয়েছে, সমাজমাধ্যমে অভিনেত্রীকে ট্রোল করা হয়েছে। ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতে নিজের একটি ছবি এবং তাতে এক নেটাগরিকের মন্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অভিনেত্রী। ‘ইশান_ক্রিয়েশন১৩৪৯’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অভিনেত্রীর পোস্টে মন্তব্য করা হয়েছে, “এ বার বলুন আরজি কর কাণ্ড হওয়া স্বাভাবিক নয় কী!” নিজের ছবি-সহ মন্তব্যটি ভাগ করে নিয়ে রাজনন্দিনী লেখেন, “আমার মন্তব্য বাক্সে এই খারাপ মন্তব্যটি দেখুন। যিনি লিখেছেন, তার মুখ দেখানোর সাহসও নেই।”
সমাজমাধ্যমে তারকাদের ট্রোল করা বা ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে কটাক্ষ ছুড়ে দেওয়া নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু অভিনেত্রীর ছবির সঙ্গে আরজি করের ঘটনাকে জুড়ে দেওয়ায় চটেছেন রাজনন্দিনী। আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিনেত্রী বললেন, “আমি বাধ্য হলাম বিষয়টা প্রকাশ্যে জানাতে। যখন সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, তখনই এক শ্রেণির মানুষ এখনও মহিলাদের প্রতি একই কুৎসিত মনোভাব পোষণ করছেন দেখে অবাক হয়েছি।”
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ‘রাত দখল’-এর ডাক দিয়েছিলেন মহিলারা। ১৪ অগস্ট বাইরের অনুষ্ঠান সেরে শহরে ফিরে যাদবপুরের জমায়েতেও যোগ দেন রাজনন্দিনী। কিন্তু অভিনেত্রীর ক্ষোভের নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে। জানালেন, বিতর্কিত মন্তব্যটি ‘লাইক’ করেছেন এক জন মহিলা। রাজনন্দিনীর কথায়, “আমি হতবাক! আমি তাকেও প্রকাশ্যে আনতে পারতাম। কিন্তু তার পর তাকে আক্রমণের মুখে পড়তে হত। এক জন মহিলা হিসেবে আমি সেটা চাইনি।”
আরজি করের ঘটনা রাজনন্দিনীর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। সাধারণত তাঁর ফোনে সমাজমাধ্যমের নোটিফিকেশন বন্ধ করা থাকে। তবে সিদ্ধান্ত বদলেছেন তিনি। অভিনেত্রী জানালেন, এ বার থেকে কোনও রকম ট্রোলিং দেখলেই তিনি মোকাবিলা করবেন। রাজনন্দিনী বললেন, “একটা সময়ে ভাবতাম, ট্রোলারকে কিছু বলা মানে তাকে গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সরাসরি জবাব দিতে হবে।” রাজনন্দিনীর মতে, কাউকে কটাক্ষ করার অধিকার অন্য কারও থাকতে পারে না। তাঁর যুক্তি, “আমি তো অন্য কারও টাকায় স্টুডিয়ো ভাড়া নিয়ে পোশাক ভাড়া নিয়ে রিল শুট করিনি! তা হলে কেন মুখ বুঝে সহ্য করব।”
রাজনন্দিনীর মতে, অন্যায় হলে প্রতিবাদ এবং সরকারের সঙ্গে লড়াই অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। তবে অভিনেত্রীর আশঙ্কা, লড়াইয়ের মেয়াদ নিয়ে। বললেন, “চারপাশের এত মতামত দেখে প্রত্যেকেই ক্লান্ত। আরজি করের প্রতিবাদ করতে করতে দেশের অন্য প্রান্ত থেকে ধর্ষণের খবর আসছে। আরও মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
রাজনন্দিনীর মতে, শুধু ধর্ষণ নয় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের যে ভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হয়, তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ গড়ে তোলা উচিত। ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমেই বড় বদল সম্ভব বলে মনে করেন রাজনন্দিনী। অভিনেত্রীর কথায়, “পথেঘাটে বা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের দ্বারা যদি কোনও নারী অপমানিত হন, চোখে পড়লেই প্রতিবাদ করা উচিত।”
রাজনন্দিনীর মতে, প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটলেই নাগরিক হিসেবে কারও দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তিনি বললেন, “লাগাতার মেসেজ করা, হুমকি দেওয়া বা প্রকাশ্যে কটাক্ষ— আশপাশে যদি পরিচিত কোনও মহিলার সঙ্গে পুরুষের আপত্তিজনরক আচরণ দেখলেই প্রতিবাদ করা উচিত।”
মহিলাদের মধ্য রাতের জমায়েতের পর টলিপাড়ার শিল্পীদের প্রতিবাদ মিছিলেও অংশ নিয়েছিলেন রাজনন্দিনী। সোমবার সঙ্গীতশিল্পীদের মিছিলে অবশ্য উপস্থিত থাকতে পারেননি। বললেন, “আমি খোঁজখবর রাখছি। জমায়েতে গেলে সমাজমাধ্যমে লাইভে আসার চেষ্টা করছি। কারণ আমাকে দেখে যদি আরও কিছু মানুষ প্রতিবাদে শামিল হন, তা হলে সেটাও আমার কাছে খুব বড় প্রাপ্তি।”