মাত্র ৬১ বছর বয়সে আচমকাই যেন চলে গেলেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা এবং প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পী এবং রাজনৈতিক মহলে।
১৯৫৮ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম তাপস পালের। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন তিনি।
১৯৮০ সালে তরুণ মজুমদারের পরিচালনায় তাঁর প্রথম ছবি ছিল ‘দাদার কীর্তি’। মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথম ছবিতেই তাঁর অভিনয় সকলের নজর কেড়েছিল। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী।
এর পর একের পর এক সিনেমায় সুযোগ পেতে থাকেন তিনি। ১৯৮১ সালে ‘সাহেব’, ১৯৮৪ সালে ‘পারাবত প্রিয়া’, ১৯৮৫ সালে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’। পর পর হিট সিনেমাতাঁকে সুপারস্টারে পরিণত করে।
তাঁর অভিনীত ‘সাহেব’ ছবির জন্য তিনি পুরস্কারও পান।
শুধু বাংলা ছবিতেই থেমে থাকেননি, বলিউডেও পা রেখেছিলেন তাপস। ১৯৮৪ সালে মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে হিরেন নাগের ছবি ‘অবোধ’-এ অভিনয় করেন। এই ছবিটা মাধুরী দীক্ষিতেরও ডেবিউ ফিল্ম ছিল।
দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘ভালবাসা ভালবাসা’-ও সুপার হিট হয়েছিল বক্স অফিসে। এই জুটি সে সময়ে দর্শকদের কাছে বাংলা সিনেমার সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন জুটিতে পরিণত হয়েছিল।
টলিউডের অভিনেত্রী তাঁর মেয়ে সোহিনী পালও।
অভিনয় জগতে তাপস পালের সাফল্য সব সময়ও সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছে। অভিনয় জীবনের শেষ দিকে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। কিন্তু তাঁর জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস খুব একটা সুখের ছিল না।
রাজনীতিতে ভাল পদ পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু নানা সময়ে তাঁর নানা বিতর্কিত মন্তব্য এবং রোজভ্যালি কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে বারবারই তাঁর দিকে ফিরে এসেছে বিতর্ক।
২০০৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে জুন মাসে কৃষ্ণনগরের অন্তর্গত নাকাশিপাড়ার হরনগর গ্রামে নিহত এক তৃণমূল কর্মীর স্মরণসভায় গিয়ে তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে কুমন্তব্য করেন।তাঁর এই কুমন্তব্যের পর রাজ্য জুড়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
রোজভ্যালি সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পালকে। পর দিনই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওড়িশায়।
বন্দি অবস্থাতেই দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৩ মাস বন্দি থাকার পর ওড়িশার বিশেষ আদালত তাঁকে জামিন দেয়।
তবে ইদানীং শারীরিক ভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মঞ্চেও তাঁকে তেমন দেখা যেত না।
মেয়ে সোহিনী পালের সঙ্গে দেখা করতে গত ২৮ জানুয়ারি তিনি মুম্বই গিয়েছিলেন। সেখানেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
এতদিন সেখানেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ভোর রাতে হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেতা।