দেব। ছবি: সংগৃহীত।
এই মুহূর্তে তাঁর নজরে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র। প্রচারে কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না দেব। তা বলে ইন্ডাস্ট্রিকে ভুলে গিয়েছেন, এমনও নয়। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘প্রধান’-এর সাফল্য উদ্যাপনের অনুষ্ঠানেও হাসিমুখে হাজির হলেন নায়ক। এক ফাঁকে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
বিগত কয়েক বছরে মুক্তির নিরিখে বক্স অফিসে লম্বা দৌড়ে শামিল হচ্ছে, এ রকম বাংলা ছবির সংখ্যা কম। সেখানে দেবের সাফল্যের নেপথ্যে রহস্য কী? দেব হেসে বললেন, ‘‘বলা খুব কঠিন। সিনেমা প্রতিদিন নতুন কিছু শেখায়। তাই সিনেমাকে কোনও ফর্মুলাতে বেঁধে ফেলা যায় না।’’ ২০২২ সালে ‘প্রজাপতি’ নন্দনে জায়গা পায়নি। ‘প্রধান’-এও রাজনৈতিক অনুষঙ্গ রয়েছে। সেই নন্দনেই ‘প্রধান’ ১০০ দিন পার করেছে। দেবের মতে, এই পরিপ্রেক্ষিতে সাহসে ভর করেই তিনি ছবিটা তৈরি করেছিলেন। দেবের কথায়, ‘‘সৎ প্রচেষ্টা থেকে ছবিটা করেছি। মধ্যপন্থা অবলম্বন করিনি। তাই আজ মনে হচ্ছে, কখনও কখনও মানুষের কাজ অনেক কিছু প্রমাণ করে দেয়।’’
‘প্রধান’কেও হিন্দি ছবির সঙ্গে লড়াই করে বক্স অফিসে নিজের জায়গা করে নিতে হয়েছিল। দেবের মতে, এই লড়াইটা চলতেই থাকবে। বললেন, ‘‘আগে কলকাতা এবং গঙ্গার ও পারের দর্শককে একজোট করার লড়াই ছিল। এখন সেটা বাংলা ছবি এবং বাংলা ছবির দর্শককে এক করার লড়াই।’’ দেবের মতে, শুধু তাঁর ছবি নয়, একসঙ্গে বাকিদের ছবিকেও সফল হতে হবে। একমাত্র তা হলেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে।
‘প্রধান’ ছবির সাফল্য উদ্যাপন অনুষ্ঠানে দেবের সঙ্গে উপস্থিত কলাকুশলীরা। ছবি: নিজস্ব চিত্র।
প্রযোজক ও অভিনেতা হিসেবে ‘টেক্কা’ থেকে শুরু করে ‘খাদান’— ভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে পর পর কাজ করে চলেছেন দেব। তাঁর কথায়, ‘‘চ্যালেঞ্জ নিতে আমার ভাল লাগে। গত বছর ব্যোমকেশ বা ‘বাঘা যতীন’-এর ক্ষেত্রেও আমি সেটাই চেষ্টা করেছিলাম। একই জিনিস করতে গেলে আমার মধ্যেও একঘেয়েমি চলে আসবে।’’ দেব জোর গলায় জানালেন, ‘খাদান’-এর প্রোডাকশন পরিকল্পনা বড় পর্দায় দেখে দর্শক চমকে যেতে বাধ্য।
এক সময় দেব মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির মাধ্যমে উঠে এসেছিলেন। ‘মির্জ়া’ নিয়ে দেব যে অঙ্কুশকে লাগাতার সাহায্য করেছেন, সে কথা আনন্দবাজার অনলাইনকে আগেই জানিয়েছিলেন অঙ্কুশ। দেবের ইউটিউব চ্যানেলে ছবিটির ট্রেলারও প্রকাশ করা হয়েছে। প্রসঙ্গ উঠতেই দেব বললেন, ‘‘আমি প্রযোজনায় আসার পর অনেকেই আমার পিঠে ছুরি মেরেছিল! তাই নতুন কারও যন্ত্রণাটা আমি বুঝি। আমি আমার ছোটদের সেই একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে দিতে চাই না।’’ কথা প্রসঙ্গেই উঠল যশ ও নুসরতের কথা। যুগলের প্রযোজিত ছবি ‘সেন্টিমেন্টাল’-এর জন্যও যে শুরু থেকে পাশে ছিলেন দেব, সে কথাও জানালেন। বিক্রম চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘পারিয়া’র ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।
দেব বিশ্বাস করেন, ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলা ইন্ডাস্ট্রিতে দ্রুত নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে না পারলে সমস্যা অনিবার্য। সম্প্রতি বলিউডে ‘যোদ্ধা’ ছবিটির ট্রেলার বিমানে প্রকাশ করেছিলেন প্রযোজক কর্ণ জোহর। ২০১৭ সালে ‘ককপিট’ ছবির সময়ে একই পদক্ষেপ করেছিলেন দেব। ছবির প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি যে সময়ের আগে এগিয়ে থাকেন, সেটা ভেবে কি নিজেকে গর্বিত মনে হয়? দেব হেসে বললেন, ‘‘ভাল লাগে। তার বেশি কিছুই নয়।’’
ভোটের আগে ঘাটালে প্রচারের কাজে ব্যস্ত দেব। রোদের মধ্যে মানুষের ভিড়ে তিনি তখন ‘সুপারস্টার’ নন, পাশের বাড়ির ছেলে। মুখে পরিচিত হাসির ঝলক। ঘাটালে প্রতিদিন কী খাওয়াদাওয়া করছেন? দেব বললেন, ‘‘খাওয়াদাওয়া নিয়ে আমার কোনও ছুতমার্গ নেই। তা ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছি। সেখানে ‘আমার এখন ফলের রস খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে’— এ সব বলতে পারব না!’’
প্রতিদিনের প্রচারের জন্য নিজেকে কী ভাবে অনুপ্রাণিত করছেন দেব? অভিনেতা বললেন, ‘‘রাস্তায় অগণিত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। অভিযোগও করছেন অনেকে। কোথাও আমি দেরিতে পৌঁছলে ওঁদের দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে দেখার পর মানুষের মুখে হাসি দেখে এগিয়ে চলার শক্তি পাচ্ছি।’’
আগামী দু’মাস ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন দেব। তবে তার মাঝেই সময় বার করে ‘টেক্কা’ ছবির এক দিনের শুটিং শেষ করবেন। ভোটের পর শুরু করবেন ‘খাদান’-এর পরবর্তী শিডিউলের শুটিং।