ভোটের ময়দান হোক কি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে টলিউড সেলেব্রিটিদের লাইন পড়ে যায়। মমতাও বরাবরই সেলেবকুলকে আপন করে নিয়েছেন। আবার প্রয়োজন মতো সেলেব ‘তাস’ খেলেছেন। চলচ্চিত্র উৎসব থেকে মহানায়ক সম্মান... তারকাদের বৃত্ত দেখা গিয়েছে দিদিকে ঘিরে। কিন্তু সম্প্রতি কি সেই বৃত্তে খানিক ছেদ পড়েছে? দিদির আসরে সেলেব্রিটি ‘সাপ্লাই’ দেওয়ার দায়িত্ব ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের উপর। অর্থাৎ শ্রীকান্ত মোহতা এবং মহেন্দ্র সোনির উপর। সেই ‘সাপ্লাই লাইন’ও কি শুকিয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।
দিন কয়েক আগেই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মিলনী। রাজারহাটের কনভেনশন সেন্টার উদ্বোধনের পাশাপাশি ওখানেই বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে টলি তারকাদের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষত দিদির সেলেব ব্রিগেডে যাঁদের নিয়মিত দেখা যায়, তেমন অনেকেই কিন্তু ওই দিন উপস্থিত ছিলেন না। শ্রীকান্ত অবশ্য ছিলেন। কিন্তু যাঁদের তিনি ‘ম্যানেজ’ করেন, সেই ‘পলিউড’-এর (অর্থাৎ পলিটিক্যাল টলিউ়়ড) অনেক সদস্যই আসেননি।
তবে রাজ চক্রবর্তী, তনুশ্রী, সায়ন্তিকার মতো নিয়মিত মুখেরা ছিলেন। গানের জগৎ থেকে ছিলেন অনুপম রায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মিত্র, রাঘব। অনুপস্থিতের তালিকাও কিন্তু কম লম্বা নয়। নুসরত জাহান, কোয়েল মল্লিক, রঞ্জিত মল্লিক, নিসপাল সিংহকেও দেখা যায়নি। টলিউডের প্রথম সারির হিরো দেব, জিৎ, প্রসেনজিতের কেউই ছিলেন না। অতএব এটা নিশ্চিত যে গ্ল্যামারের জৌলুস বেশ ফিকেই ছিল।
মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবারই এই বিজয়া সমাবেশ করে থাকেন। কখনও ইকো পার্কে, কখনও বালিগঞ্জ পার্ক রো়ডে। যেখানে শিল্পী থেকে শিল্পপতিরা হাজিরা দেন। এই আসরের আসল জৌলুস কিন্তু টলি তারকারাই।
তৃণমূলের ঘরের ছেলে সোহমকে দেখা যায়নি। অরিন্দম শীল ছিলেন না। জানালেন, মুম্বইয়ে রয়েছেন। নুসরত দিদির বৃত্তের নিয়মিত সদস্য। তাঁর না যাওয়া চোখে প়়ড়েছে। ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে নুসরত ফোন ধরেননি। মিমি চক্রবর্তীও দিদির ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর মধ্যে পড়েন। তিনি জানালেন, উত্তরবঙ্গ গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে যেতে পারেননি। শুভশ্রী রেড রোডের কার্নিভ্যালে এলেও বিজয়া সমাবেশে আসতে পারেননি। তিনি হায়দরাবাদে শ্যুটিং করছেন। শ্যুটিং থাকার জন্য জুন মালিয়াও আসেননি।
সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে দেবের অনুপস্থিতি নিয়ে। এমনিতেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে দেবের দূরত্ব বাড়া নিয়ে একটা গুঞ্জন চলছে। দেব অবশ্য নিজের অ্যালিবাই তৈরি করেই রেখেছেন। ইউরোপ ভ্রমণে গিয়েছেন বলে আসতে পারেননি। তাঁর দ্বিতীয় প্রযোজনা ‘ককপিট’ রিলিজ করেছে পুজোয়। এখনও হলে চলছে। সেই সব ছেড়ে তিনি আচমকা বেড়াতেই বা গেলেন কেন? না কি রেড রোডের পুজোর কার্নিভ্যাল থেকে বিজয়া সম্মিলনী— এড়িয়ে যাবেন বলেই বেড়াতে যাওয়া ‘সেফ’ বলে মনে করেছেন?
প্রসেনজিৎ-জিৎ কাউকেই দেখা যায়নি ওই দিন। যদিও এঁরা কেউই দিদির ঘনিষ্ঠ বৃত্তের সদস্য নন। নিয়ম মাফিক সৌজন্য বজায় রাখা ছাড়া তাঁদের এই ধরনের আধা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দেখাও যায় না। তবে প্রসেনজিৎ কিন্তু ওই দিন শহরেই ছিলেন। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত যেমন মাঝেমধ্যে সরকারি অনুষ্ঠানে হাজিরা দেন, কখনও আবার স্রেফ উধাও হয়ে যান। তিনিও ছিলেন না এ বারের অনুষ্ঠানে।
অন্যান্য বারের বিজয়া সম্মিলনীর তুলনায় এ বার যে গ্ল্যামার কম ছিল, তা স্বীকার করলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সরকার-ঘনিষ্ঠ এক পরিচালক। বললেন, ‘‘কেন জানি না, এ বার বেশ ফাঁকা ফাঁকাই দেখছি!’’ এক গায়ক যেমন ওই আসরেই মুখ ফসকে বলে বসেন, ‘‘ভেঙ্কটেশের তারকারা এত কম কেন?’’
এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠানে তো বটেই, রাস্তার প্রতিবাদী মিছিলেও ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের তত্ত্বাবধানে সেলেবরা হাজির হয়েছেন। বাইরে শ্যুটিং থাকলে এক দিনের জন্য তারকাকে উড়িয়ে নিয়ে আসার ঘটনাও ঘটিয়েছেন ‘তত্ত্বাবধায়কেরা’। সেখানে কী এমন ঘটল যে, গ্ল্যামার কোশেন্ট কমে গেল দিদির আসরে! না কি ‘ম্যানেজার’রাই লোকজন নিয়ে আসতে অপারগ হয়ে পড়ছেন? এমন নানা গুঞ্জন কিন্তু পাক খাচ্ছে!