হরর কমেডি-র গল্প পুরোটাই বাড়িকেন্দ্রিক।
বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী, ভূতের গল্পে মজে সব বাঙালিই। ‘কঙ্কাল’, ‘মণিহারা’ ইত্যাদি সিরিয়াস গল্পগুলি মনে রেখেও মজার ভূত-গল্পের সংখ্যাও কম নয়। ভূত নিয়ে তুমুল মজার গল্পগুলির অন্যতম প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘রসময়ীর রসিকতা’ কোনও ভাবেই ভোলবার নয়। বর্তমানের ভূতই হোক বা ভবিষ্যতের, সাম্প্রতিক ফিল্মেও দেখা গিয়েছে মজার সব ভূত। জি বাংলা সিনেমা অরিজিনালস-ও এ বার ভূতের মজার গল্পে মজতে চলেছে। ‘বাঞ্ছারামের বাগানবাড়ি’ সে রকমই এক ফিল্ম। এত ভূতের ফিল্মের ভিড়ে এই ফিল্ম কতটা ইউনিক?
পরিচালক রাজদীপ ঘোষ বললেন, “জি বাংলা সিনেমা অরিজিনালস-এ এটাই প্রথম হরর কমেডি। আর পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের প্রথম প্রোডাকশন এটা। এগুলোই ইউনিক বিষয়।”
হরর বাছলেন কেন? পরিচালক ব্যাখ্যা করলেন, “অনেক রকম তো গল্প হয়... বেশির ভাগই প্রেম। শুধু কমেডি বেসড গল্প হয় জি অরিজিনালস-এ। তো ভূত সব সময়েই সবার প্রিয়, ছোট থেকে বড় সবার। তার সঙ্গে যদি কমেডি যোগ হয় তা হলে সবার ভাল লাগা উচিত। এ কথা মাথাই রেখেই ‘বাঞ্ছারামের বাগানবাড়ি’ ট্রাই করা হল। ভয় পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে, মজাও আছে, সাসপেন্সও আছে। কিন্তু টিভির দর্শকদের কথা ভেবেই বানানো। তাই হরর মুভি যে রকম ভয়ঙ্কর হয়, এটা সে রকম হবে না।”
রোম্যান্স তো আছেই, কিন্তু বন্ধুত্বের গল্পই বেশি।
‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ফিল্মের সঙ্গে এই ছবির কোনও যোগাযোগ আছে? বাঞ্ছারাম চরিত্রাভিনেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বললেন, “নামটা শুনেই মনে হয়েছিল যে মনোজবাবুর (মিত্র) সেই বাঞ্ছারামের বাগান কি? তার পর গল্পটা শুনে দেখলাম যে, না, সেটা নয়। শুধু নামটাই আছে।”
পরিচালক বললেন, “না না, কোনও কানেকশন নেই। আমাদের গল্পের চরিত্রটার নাম বাঞ্ছারাম। তার একটা বাগানবাড়ি আছে। যেহেতু বাড়িটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট এই গল্পে, পুরো গল্পটাই এই বাড়ি কেন্দ্রিক, সে কারণেই ‘বাঞ্ছারামের বাগানবাড়ি’।”
বাঞ্ছারাম নামটাই কেন ব্যবহার করলেন? পরিচালক যোগ করলেন, “আসলে চরিত্রটা একটু বয়স্ক, একটু পুরনো সময়ের। তো এই চরিত্রর এ রকম নাম হওয়া অস্বাভাবিক নয়।”
আপনি অতীত, বর্তমান না ভবিষ্যৎ? বুদ্ধদেববাবুর ঝটিতি উত্তর, “আমি বর্তমান। ভূত নই। ভূতের আমদানি কেন এবং কী ভাবে হল সেটা সাসপেন্স থাক।”
ভয়, সাসপেন্স, মজা মিলেমিশে গিয়েছে এই হরর কমেডিতে।
আপনার চরিত্রটা কেমন? এই ফিল্মের অন্যতম অভিনেতা এবং ‘ভানুমতীর খেল’-এর নায়ক মেঘরাজ, মানে রুবেল দাসের কথায়: “বাঞ্ছারামই এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাকে ঘিরেই অনেকগুলো চরিত্র আছে। তার মধ্যে আমি আছি আর সুদীপ্তা (চক্রবর্তী) আছে। আমার চরিত্রের নাম নরেন। নাম শুনে মনে হবে সেকেলে চরিত্র। কিন্তু সে আজকের দিনেরই ছেলে। সে ভূতে বিশ্বাস করে এবং ভূততত্ত্ব নিয়েই পড়াশোনা করেছে। সায়েন্টিফিক্যালি সে ভূতের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। তার কাছে ভূত প্রমাণের ইকুইপমেন্টস্ও আছে। নরেনকে আধুনিক ওঝা বলা যেতে পারে। বাঞ্ছারামের পুরনো বন্ধুর ছেলে নরেন। তার ছোট মেয়ে ইতু। তো ইতু ভূতের ভয় তাড়ানোর জন্য নরেনের কাছে হেল্প চায় এবং তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। প্রথম দেখায় ইতুকে নরেনের ভালও লেগে যায়, যা হয় আর কি। রোম্যান্স তো আছেই, কিন্তু বন্ধুত্বের গল্পই বেশি।”
বাহা চরিত্র করে দর্শকের মন জয় করা সুদীপ্তা যোগ করলেন, “আমার চরিত্র ইতু, বাঞ্ছারামের মেয়ে। সে হারিয়ে গিয়েছিল। সাত বছর পর বাড়ি ফেরে। কেউ বিশ্বাস করে না, কিন্তু তার বাবা খুশি হয়। এ দিকে হঠাৎ করে বাড়িতে ভূতের উপদ্রব শুরু হয়। ভূত কেন আছে, আদৌ আছে কি না... সে সব নিয়েই গল্প জমে ওঠে।”
রিয়েল বাগানবাড়ি ভৌতিক কোনও অভিজ্ঞতার জন্ম দিল? রুবেল বললেন, “শ্যামবাজারের বসু বাড়িতে শুট হয়েছে। তো যখন শুট করতে যাই তখন রাস্তাতেই সবাই বলছিল যে ভূতের উপদ্রব অনেকে ফিল করেছে ওই বাড়িতে।”
সুদীপ্তা হাসলেন, “না না, ভূত দেখিনি। তবে যে বাড়িতে শুট করেছি সেটা এমন একটা ভয়ানক বাড়ি যে কখনও কখনও মনে হয়েছে এ বার সত্যি সত্যি ভূত দেখে ফেলব। এমনকি, রাতের দৃশ্যে এমন লাইট হত শট দিতে দিতে গা ছমছম করত।”
রুবেল হাসলেন দুষ্টুমির হাসি, “সুদীপ্তাকে ভূতের ভয় দেখিয়েছি। আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছিল।”
আপনিও কি ভূত বিশ্বাসী? রুবেল সাফ বললেন, “আমি সায়েন্সে বিশ্বাসী। ভূত বিষয়টা খুব ফানি, হাস্যকর আমার কাছে। তবে ভূতের ভয়ের গল্প শুনতে ভালবাসি।”
অবিশ্বাসী হয়ে ভূত বিশ্বাসীর চরিত্র করতে কেমন লাগল? রুবেল বললেন, “বেশ ইন্টারেস্টিং। যে চরিত্রটা আমি নই সেটা যখন করার সুযোগ পাই তখন মনে হয় ওই চরিত্রটাকে জাগিয়ে তুলছি, একটা এক্সপেরিমেন্ট করছি। এতে অনেক বেশি ইন্টারেস্ট আছে, অনেক বেশি এক্সাইটমেন্ট আছে, করতেও ভাল লাগে। নরেন ভয় পায় না, কিন্তু বিশ্বাস করে স্পিরিট বলে কিছু আছে। সে দিক দিয়ে নরেন রুবেলের থেকে আলাদা।”
বাগানবাড়ির ভূতেদের দেখা যাবে রবিবার, ২৮ জুলাই দুপুর ১টায়।
আরও পড়ুন: দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বর্ণপরিচয়
আরও পড়ুন: বাস্তবের ‘গালি বয়’কে চেনেন? ঢাকার বস্তি থেকে উঠে এখন বাংলা র্যাপের ধামাকা