ইচ্ছে ছিল কোরিয়োগ্রাফার হওয়ার। হয়ে গেলেন ‘বালিকা বধূ’। ওই পরিচয়ের আড়ালে চাপা পড়ে গেল পরিচয়। কিন্তু চিরকাল ইন্ডাস্ট্রিতে ‘বালিকা’ হয়ে থাকতে নারাজ অবিকা। সাম্প্রতিক ভোল বদলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অবিকার জন্ম ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন। তাঁর বাবা সমীর গোর পেশায় বিমাকর্মী। মা চেতনা গোর গৃহবধূ। আদতে গুজরাতি হলেও গোর পরিবার বহু দিন ধরেই মুম্বইয়ের বাসিন্দা।
‘বালিকা বধূ’ অবিকাকে খ্যাতির বৃত্তে আনার মাধ্যম হলেও এর আগেও কাজ করেছেন তিনি। ‘রাজকুমার আরিয়ান’ সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন ছোট ভূমিকায়।
২০০৮ সালে ‘রাজকুমার আরিয়ান’-এ তিনি রাজকুমারি ভৈরবীর ছোটবেলার ভূমিকায় অভিনয় করেন। পরে ওই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইয়ামি গৌতম। ধারাবাহিকটি অবশ্য বেশি দিনের জন্য সম্প্রচারিত হয়নি।
এর পরই অবিকাকে দেখা যায় ‘বালিকা বধূ’-তে আনন্দীর চরিত্রে। ২০০৮ থেকে ২০১০ অবধি তিনি ছিলেন ‘বালিকা বধূ’ আনন্দী। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিল ধারাবাহিকের গল্প।
অন্যান্য ধারাবাহিককে টপকে ‘বালিকা বধূ’ ছিল দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে। অভিনয়ের জোরে দর্শকদের হৃদমাঝারে জায়গা করে নেন ১১ বছরের আনন্দী।
ধারাবাহিকটি দু’বছর সম্প্রচারিত হওয়ার পরে গল্পের আনন্দী বড় হয়ে যায়। অবিকার জায়গায় সে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর পর অবিকা অভিনয় করেন আর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘সসুরাল সিমর কা’-এ। এখানেও তাঁর অভিনীত ‘রোলি’ চরিত্রটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। টানা ৫ বছর সম্প্রচারিত হয়েছিল ধারাবাহিকটি।
এর পর আরও বেশ কিছু ধারাবাহিকে অতিথি শিল্পী হিসেবে দেখা গিয়েছে অবিকাকে। তবে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন ‘লাডো— বীরপুর কি মর্দানি’ ধারাবাহিকে। এ ছাড়া ছোট পর্দায় তাঁকে আর কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে দেখা যায়নি।
‘বিগ বস’, ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরোঁ কা খিলাড়ি’-র মতো রিয়েলিটি শো-তেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ছোট পর্দার পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছিলেন সিনেমাতেও।
‘মর্নিং ওয়াক’, ‘পাঠশালা’, ‘তেজ’ ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেন শিশুশিল্পী হিসেবে। এর পর কয়েক বছরের বিরতি। বিনোদন দুনিয়া থেকে উধাও হয়ে যান আনন্দী। ফিরে আসেন ২০১৩ সালে। তেলুগু ছবি ‘উয়ালা জাম্পালা’-র নায়িকা হয়ে।
এর পর বেশ কিছু দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করেন অবিকা। তবে বলিউডে কিন্তু নায়িকা হিসেবে নিজের জায়গা করে নিতে পারেননি।
মুম্বইয়ের ‘রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’-এর প্রাক্তন ছাত্রী অবিকা অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি তুলতে ভালবাসেন। নাচ আর গান অনুশীলনও তাঁর খুব প্রিয়।
অবসরে দেখেন সিনেমাও। হৃতিক রোশন, শাহিদ কপূর এবং শাহরুখ খান তাঁর প্রিয় অভিনেতা। পছন্দের নায়িকাদের তালিকায় আছেন মাধুরী দীক্ষিত, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন এবং কাজল।
আরও একটি শৌখিনতা আছে অবিকার। তিনি খেতে খুব ভালবাসেন। বিশেষ করে মশলাদার জাঙ্কফুড পেলে তো আর কথাই নেই। তবে এই ভালবাসা যে আদতে তাঁর ক্ষতি করছিল, পরে স্বীকার করেন অবিকা।
বেহিসেবি খাওয়াদাওয়ার জন্য ওজন বেড়ে যাচ্ছিল লাগামছাড়া ভাবে। সম্প্রতি ১৩ কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি। নতুন লুকে চমকে দিয়েছেন অনুরাগীদের। মাস দু’য়েক আগে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে অবিকা জানিয়েছেন তাঁর নতুন যাত্রার কথা।
অভিনেত্রী জানিয়েছেন, গত বছর এক দিন আয়নায় নিজের চেহারা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, যদি থাইরয়েড বা পিসিওডি-র মতো কোনও অসুখের কারণে তিনি মোটা হতেন, সেই কারণ তাও মেনে নেওয়া যেত।
অবিকার মনে হয়েছিল, তাঁর শরীরকে যে সম্মানটুকু দেওয়া উচিত সেটা তিনি দিচ্ছেন না। ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য পছন্দের নাচও তিনি উপভোগ করতে পারছিলেন না। বোধোদয় হওয়ার পর থেকেই শুরু করেন কঠোর অনুশীলন। সঙ্গে নিয়মিত ডায়েট।
২৩ বছরের এই তরুণী জানিয়েছেন, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনেই নতুন রূপ পেয়েছেন তিনি। এ ভাবে চলতে চান আগামী দিনেও। তবে মাঝে মাঝে যে নিয়ম ভেঙেও ফেলেন, জানিয়েছেন সে কথাও। গোলগাল থেকে ছিপছিপে হলেও অবিকার শিশুসুলভ সারল্য অটুট রয়েছে আগের মতোই।
অবিকার জীবনে এসেছেন মনের মানুষ। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন তাঁর হৃদয়ের রাজকুমারের কথা। ছবির জগত থেকে দূরে থাকা সেই তরুণের নাম মিলিন্দ চন্দওয়ানী।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে মিলিন্দ ব্যস্ত সমাজসেবায়। তাঁর নিজের একটি সমাজসেবী সংগঠন আছে। সেই সূত্রেই আলাপ অবিকার সঙ্গে। তবে বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গেও সম্পূর্ণ অপরিচিত নন তিনি। অংশ নিয়েছেন ‘এমটিভি রোডিজ’-এ।
এর আগে ‘সসুরাল সিমর কা’-র নায়ক মণীশ রায়সিঙ্ঘানের সঙ্গেও অবিকার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তবে সেই রটনা অস্বীকার করে দু’জনেই জানিয়েছেন তাঁরা শুধুই ভাল বন্ধু।
মনীশ পরে জানান, বয়সে ১৮ বছরের ছোট অবিকার সঙ্গে তাঁর কোনওদিনই প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। সব গুঞ্জনের অবসান হয় এ বছরই। এ বছর অবিকার জন্মদিনেই আর এক অভিনেত্রী সঙ্গীতা চহ্বনকে বিয়ে করেছেন মণীশ। গত দু’বছর ধরে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন।
তাঁদের বিয়ের কয়েক মাস পরেই নিজের সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন অবিকা। তবে আপাতত বিয়ের কোনও পরিকল্পনা নেই। অবিকা মন দিতে চান কেরিয়ারেই।
মিলিন্দের মতো অবিকাও যুক্ত সমাজসেবার সঙ্গে। অবিকার পশুপ্রেমের কথা জানেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা। তাঁর আদরের পোষ্য কুকুরের নাম শিরু। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সংক্রান্ত কর্মসূচিতেও অংশ নিয়েছেন পর্দার ‘বালিকা বধূ’।