অনুভব
তাঁর কাছে সত্যজিৎ রায় মানে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লাইটহাউস। আর বাকিরা অর্থাৎ তাঁর মতো এখনকার প্রায় সব পরিচালকরাই মাঝসমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া জাহাজ। কিংবদন্তি পরিচালক সম্পর্কে এমনটাই ভাবেন এ সময়ের অন্যতম চর্চিত পরিচালক অনুভব সিংহ। ‘‘আমরা ওঁর ধারেকাছে কোনও দিন পৌঁছতে পারব না জেনেও চেষ্টা করে যাই। কয়েক দিন আগে আরও একবার ‘ঘরে বাইরে’ দেখলাম। ২০০০ বছর এগিয়ে থাকা একটা ছবি। যত বারই দেখি, প্রত্যেক বার নতুন কিছু শিখি,’’ সত্যজিতের ছবি সম্পর্কে অনুভবের ভাবনা।
শুক্রবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে শহরে এসেছেন অনুভব। আজ, শনিবার সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা দেবেন তিনি। বিষয়, ‘সমকালীন মূলধারার ছবি সামাজিক ভাবে কতটা দায়িত্বশীল?’ এক সময়ে নিজে তথাকথিত ছকে বাঁধা ছবি তৈরি করলেও গত কয়েক বছর ধরেই অন্য রাস্তায় হাঁটেন পরিচালক। ‘দস’, ‘রা-ওয়ান’-এর পরিচালকের সাম্প্রতিক ছবি ‘মুলক’, ‘আর্টিকল ফিফটিন’ এবং ‘থাপ্পড়’ প্রশংসিত হয়েছে বলিষ্ঠ বিষয়ভাবনার জন্য। অনুভবের কথায়, ‘‘মেনস্ট্রিম কমার্শিয়াল ছবি কিন্তু আমার দুর্দান্ত লাগে। এটা ঠিক যে, আমি এখন আর ওই ধরনের ছবি বানাই না, কিন্তু খুবই ভালবাসি। যেমন আমি রোহিত শেট্টির ছবি ভালবাসি... বিকজ় দে আর গ্রেট এসকেপ। দারুণ মজার।’’
নিজের ছবি দর্শকের দরবারে পৌঁছনোর আগে তা প্রকাশ্যে আনা পছন্দ করেন না পরিচালক। রবিবার সকালেই তিনি অসমে রওনা হচ্ছেন, আগামী ছবি ‘অনেক’-এর শুটে, যে ছবির মুখ্য চরিত্রে আয়ুষ্মান খুরানা। ছবির অধিকাংশ শুটিং জঙ্গলে হবে। শুটিং শুরুর ঠিক আগেই মনঃসংযোগ করা দরকার। এ দিকে কিফ-এর আয়োজকদের অনুরোধও ফেলতে পারেননি অনুভব। অতিমারি-পরবর্তী সময়ের দেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক চলচ্চিত্র উৎসবে সশরীর যোগ দিতে পেরে বেশ স্বাভাবিক বোধ করছেন, জানালেন নিজেই।
লকডাউনের অনেকটাই টুইট-যুদ্ধে কেটে গিয়েছে অনুভবের। কখনও নেপোটিজ়ম, কখনও ‘বলিউড’ ত্যাগ, কখনও আবার গেরুয়া শিবিরের প্রতি কটাক্ষে টুইটারে সরব হয়ে উঠেছেন তিনি বারবার। ‘‘এর পর ঠিক করেছি, রাজনীতি নিয়ে টুইটারে আর কিচ্ছু লিখব না। কারণ দেখেছি, কারও কিছু এসে যায় না।’’ লকডাউনে ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরে চলা নানা বিতর্ক আখেরে এর ক্ষতিই করেছে বলে মনে করেন তিনি। ‘‘গোটা ইন্ডাস্ট্রির মেরুকরণ হয়ে গিয়েছিল সে সময়ে। ক্ষতি তো হয়েছেই।’’ ‘বলিউড’ শব্দবন্ধে তাঁর আপত্তির বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিলেন পরিচালক, ‘‘তথাকথিত ‘বলিউড’ সামাজিক ভাবে বা রাজনৈতিক ভাবে যা যা করে, তার বেশির ভাগ পদক্ষেপের সঙ্গেই আমি একমত হতে পারি না। তাই নিজেকে এর অংশ বলেও মনে করি না। আমার কাছে এটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।’’
সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তাবাহী ছবি-করিয়ে অনুভব কি পরোক্ষে প্রোপাগান্ডা ফিল্মের দিকে ইঙ্গিত করছেন? অনুভবের জবাব, ‘‘যাঁদের বিশ্বাস যেমন, তাঁরা সেই অনুযায়ীই ছবি তৈরি করেন। অক্ষয়কুমারের ছবি যে বার্তা দেয়, তাতে অক্ষয় নিজে বিশ্বাস করে বলেই ছবিগুলো করে। সে অধিকারও ওর রয়েছে। তা কারও কাছে প্রোপাগান্ডা মনে হতে পারে, কারও কাছে কনভিকশন।’’