Anirban Bhattacharya

তিনি যেন টলিউডের রাহুল দ্রাবিড়! অভিনয়, পরিচালনা, গান, সবেতেই ভরসা— অনির্বাণ

সফল অভিনেতা থেকে সফল পরিচালক— এই যাত্রাপথে খুশি অনির্বাণ ভট্টাচার্য। টলিউডও তাঁর উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে রাজি।

Advertisement

শতরূপা বসু

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৮
Share:

অনেকের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি করে মঞ্চ ছেড়ে বড় পর্দায় এসেছেন। অনির্বাণ ভট্টাচার্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

‘অথৈ’-এর শেষ দৃশ্য। মঞ্চের নেমে অসেছে অন্ধকার। মঞ্চের ওপর ডেসডিমোনা শেষ শয্যায় শায়িত। তার প্রেমিক অথৈ মাথা কুটে মরছে। আর অন্ধকার হলে একটি মানুষ, মুখে মুখোশ পরে, এক আশ্চর্য শব্দ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই শব্দ শুনলে শিড়দাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়। ইয়াগো-রূপী মানুষটি সারা হলে ঘুরে ঘুরে মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ায়। খলের দুনিয়ায় সে-ই সম্রাট। তখনই সেই অভিনয়ে ইয়াগো-রূপী অনির্বাণ ভট্টাচার্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।

Advertisement

তারপর কেটে গিয়েছে দিন। অনেকের ভবিষ্যৎবাণী সত্যি করে অনির্বাণ মঞ্চ ছেড়ে বড় পর্দায় এসেছেন। এবং তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ক্ষুরধার অভিনয় করে। তাঁর ‘শাজাহান রিজেন্সি’ থেকে ‘গোলোন্দাজ’, ‘ভিঞ্চিদা’ থেকে ‘গুমনামী’ — পর পর হিট। আর এ বছর তো তিনি টলিউডে পরিচালক হিসেবে নতুন এবং সব থেকে বড় আবিষ্কার। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ মুক্তি পেয়েছে সেই অক্টোবরে। সেই ছবি আইনক্স-এর মতো মাল্টিপ্লেক্স চেইনে, তিন মাস পরে, এখনও চলছে। পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে অনির্বাণ অভিনয়ও চালিয়ে যাচ্ছন। অনেকটা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো। মানে, টলিউড একই সঙ্গে একজন দক্ষ অভিনেতার পাশাপাশি পরিচালকও পেল।

যে ছবির সূত্রে অনির্বাণের বড় পর্দায় পদার্পণ সেই ‘ঈগলের চোখ’-এর পরিচালক অরিন্দম শীল তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন টলিউডে। কী দেখে বেছেছিলেন তিনি অনির্বাণকে? ‘‘আমি মানুষের চোখের মধ্যে তাকাতে ভালোবাসি। আমি বুঝতে পারি সেই চোখ সত্য বলে কী না, প্যাশনেট কী না। কাজের প্রতি তার ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা কতটা। অনির্বাণকে নিয়ে ‘ঈগলের চোখ’ এবং ‘ধনঞ্জয়’ — দুটো পুরোপুরি বিপরীত মেরুর চরিত্র করেছি। অনির্বাণকে আমি প্রথম দেখেছিলাম অপর্ণা সেনের ‘আরশিনগর’-এ। তখন ও কিছুই ছিল না। কিন্তু যখনই পর্দায় আসছিল তখনই ওর একটা স্ক্রিন প্রেজেন্স লক্ষ্য করছিলাম। তারপর আমি ওর সঙ্গে আড্ডা দিই। এবং বুঝে গিয়েছিলাম একে দিয়ে হবে। আমার প্রযোজককে বোঝাতে এক মাস সময় লেগেছিল। এক মাস ছবিটা কিন্তু আমি করিনি। তার একটাই কারণ — আমার সিদ্ধান্তে আমি অনড় ছিলাম। সেই প্রযোজক ছিলেন শ্রীকান্ত মোহতা। শ্রীকান্ত রীতিমতো ক্ষেপে গিয়েছিল আমার ওপর। কিন্তু এক মাস পরে গিয়েও আমি বলেছিলাম যে অনির্বাণ ছাড়া আমি করব না। একটা হল আমি ভীষণ এক বগ্গা। একবার মাথায় ঢুকে গেলে সেখান থেকে বেরনো খুব সমস্যা হয়ে যায়। যদি কাউকে ভাবি যে আমার একেই চাই তো আমার একেই চাই। আর কোথাও আমার মনে হয় মানুষের প্রকৃত রূপ, অভিনয় করার সদিচ্ছা... সেগুলো আমার গল্প করতে করতে বেরিয়ে আসে। আমার ক্লিপিং দেখার বা ওইভাবে অডিশন করার দরকার পড়ে না। আর কাস্টিং আমি পুরোপুরি অন মেরিট করি। আমাকে আলাদা করে খুশি করে কোনও লাভ হয় না। সেটা আমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা খুব ভালো করে জানে।

Advertisement

আমার যদি মনে হয় কাউকে কাস্ট করব তাহলে আমি যেখান থেকে হোক তাকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসব। আর যেটা লাগে সেটা হল বিশ্বাস। সেটা যখন তৈরি হয়ে যায় তখন আমি বুঝি যে এর সঙ্গে কাজ করতে পারব,’’ বলছেন অরিন্দম।

আর নিজে কী বলছেন অনির্বাণ? কৌশিকের সঙ্গে তুলনা শুনে তিনি বলেন, ‘‘কৌশিকদা অনেক প্র্যাকটিসড পরিচালক। উনি সিনেমা করার আগে টেলিভিশন করেছেন। সেই তুলনায় আমি অনেকটা অ্যাক্সিডেন্টাল পরিচালক। কখনও ভাবিনি পরিচালনায় আসব। ওটিটি-তে আমি আর প্রতীক ‘মন্দার-এর চিত্রনাট্য লিখেছিলাম। কিন্তু পরিচালনা করার কোনও ইচ্ছে ছিল না। মণি-দা (এসভিএফ-এর যুগ্ম অধিকর্তা মহেন্দ্র সোনি) জোর করেছিল। তারপর যখন ‘মন্দার’ সাফল্য পেল তখন একটা ছবি পরিচালনা করতে বলা হল।’’

তবে অনির্বাণ নিজেকে মূলত অভিনেতাই হিসেবে দেখতে ভালোবাসেন। ‘অভিনয়টাই আমার পেশা,’ বলেন তিনি। তবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা এখনও তিনি নিজেকে করতে চান না। ‘‘মাত্র দুটো কাজের পর কৌশিকদার বা সৃজিতের সঙ্গে তুলনা টানাটা অস্বস্তিকর,’’ বলছেন তিনি।

আর যে মাল্টিপ্লেক্সে এখনও চলছে, কী বলছেন তার কর্ণধার? আইনক্স-এর প্রাদেশিক অধিকর্তা অমিতাভ গুহ ঠাকুরতার কথায়, ‘‘সেই দুর্গা পুজোর সময় মুক্তি পাওয়া ছবি এখনও, এই শীতেও, চলছে। এই ডিসেম্বরে তিনটে বড় ছবি মুক্তি পাওয়ার পরেও চলছে। তাতেই বোঝা যায় ছবির মেরিট। এই ছবি ঘিরে আমাদের ব্যবসা খুবই ভালো হয়েছে। তবে শেষ কথা দর্শকই বলছেন। দর্শকদের ভালো লেগেছে বলেই ছবি চলছে।’’

সিঙ্গল স্ক্রিনেও এক ছবি। নবীনার কর্ণধার নবীন চৌখানি জানাচ্ছেন, ‘আমরা মুক্তির তিন সপ্তাহের পর থেকে ছবিটা চালিয়েছি। ছয় সপ্তাহ চালিয়েছি। তাতেই আমাদের সাত লাখ ব্যবসা দিয়েছে। এ বছরের অন্যতম সেরা বাংলা ছবি ‘বল্লভপুরের রূপকথা’। ছবির চিত্রনাট্য, অভিনয়, সংলাপ — সব হিট। আসলে যাঁরা টাকা দিয়ে ছবি দেখেন তাঁরাই এই নিদান দিয়েছেন। বাড়িতে বসে ওটিটি-তে ছবি দেখে এই সাফল্য আসেনি’’।

আর যে মাল্টিপ্লেক্সে এখনও চলছে, কী বলছেন তার কর্ণধার? আইনক্স-এর প্রাদেশিক অধিকর্তা অমিতাভ গুহ ঠাকুরতার কথায়, ‘‘সেই দুর্গা পুজোর সময় মুক্তি পাওয়া ছবি এখনও, এই শীতেও, চলছে। এই ডিসেম্বরে তিনটে বড় ছবি মুক্তি পাওয়ার পরেও চলছে। তাতেই বোঝা যায় ছবির মেরিট। এই ছবি ঘিরে আমাদের ব্যবসা খুবই ভালো হয়েছে। তবে শেষ কথা দর্শকই বলছেন। দর্শকদের ভালো লেগেছে বলেই ছবি চলছে।’’

সিঙ্গল স্ক্রিনেও এক ছবি। নবীনার কর্ণধার নবীন চৌখানি জানাচ্ছেন, ‘আমরা মুক্তির তিন সপ্তাহের পর থেকে ছবিটা চালিয়েছি। ছয় সপ্তাহ চালিয়েছি। তাতেই আমাদের সাত লাখ ব্যবসা দিয়েছে। এ বছরের অন্যতম সেরা বাংলা ছবি ‘বল্লভপুরের রূপকথা’। ছবির চিত্রনাট্য, অভিনয়, সংলাপ — সব হিট। আসলে যাঁরা টাকা দিয়ে ছবি দেখেন তাঁরাই এই নিদান দিয়েছেন। বাড়িতে বসে ওটিটি-তে ছবি দেখে এই সাফল্য আসেনি’’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement