Anirban Bhattacharya

‘দায়ী’ মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে তিন দিন পরেই পুরস্কার! যদি কেউ ‘ভণ্ড’ বলে? কী বলছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য?

পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তার কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্য সরকারের পুরস্কার গ্রহণ করলেন তিনি। তবে কি অবস্থান বদল করলেন অনির্বাণ?

Advertisement

সম্পিতা দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ১৭:২৫
Share:

অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। — নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা ও মৃত্যুর অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘দায়ী’ করে খোলা চিঠি লিখেছিলেন বিদ্বজ্জনদের একাংশ। গত ২০ জুলাইয়ের সেই চিঠিতে সই ছিল অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। তার ৭২ ঘণ্টা পরে সোমবার সন্ধ্যায় সেই অনির্বাণকেই দেখা গেল ধন ধান্য প্রেক্ষাগৃহে মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাত থেকে পুরস্কার নিতে।

Advertisement

অনির্বাণের পুরস্কার গ্রহণের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠেছে, যে মুখ্যমন্ত্রীকে হিংসায় ‘দায়ী’ করে খোলা চিঠি লিখেছিলেন, তিন দিন পরেই তাঁর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়াটা কি ‘ভণ্ডামি’ নয়? মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে অবশ্য নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে অনির্বাণ জানাচ্ছেন, তাঁকে যদি কেউ ‘ভণ্ড’ বলে, তবে সে বিষয়ে তিনি তর্কে রাজি নন। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করাটা তাঁর কাছে ‘গর্বের’।

গত বৃহস্পতিবার যে খোলা চিঠি বিদ্বজ্জনেরা লিখেছিলেন, সেখানে সই ছিল অপর্ণা সেন-সহ বিশিষ্টজনেদের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অনির্বাণও। ওই চিঠিতে মমতার উদ্দেশে লেখা হয়েছিল, ‘‘গত ৩৭ দিনে পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বহু মানুষ নিখোঁজ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আপনি এই দায় কোনও ভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব অস্বীকার না করেও বলা যায়, এই হত্যালীলা, অরাজকতার দায়িত্ব মূলত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এবং আপনার।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘দায়ী’ করে লেখা সেই খোলা চিঠি, যে চিঠিতে সই ছিল অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের।

ওই চিঠি প্রকাশের তিন দিন পরে, সোমবার রাজ্য সরকার আয়োজিত পুরস্কার প্রদান মঞ্চে দেখা যায় অনির্বাণকে। উত্তম কুমারের মৃত্যুদিবস উপলক্ষে রাজ্য সরকারের সেই অনুষ্ঠানে ‘মহানায়ক’ সম্মানে ভূষিত করা হয় টলিপাড়ার একঝাঁক তারকাকে। কোয়েল মল্লিক, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, অঙ্কুশ হাজরা, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে সেই তালিকায় ছিলেন অনির্বাণও। তাঁকে ‘বিশেষ চলচ্চিত্র সম্মান’ প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাই। এর পরেই অনির্বাণকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০ জুলাই যিনি মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারকে হিংসায় মদত দেওয়ার জন্য ‘দায়ী’ করে খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন, ২৪ জুলাই সেই তিনিই কী করে সেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকেই সরকারি মঞ্চে পুরস্কার নেন? কেউ কেউ তাঁকে ‘ভণ্ড’ বলেও কটাক্ষ করেন।

অনির্বাণ যদিও এর মধ্যে ‘ভণ্ডামি’র কিছু দেখছেন না। তবে তা নিয়ে তিনি তর্ক করতেও রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে চিঠি বিদ্বজ্জনেরা লিখেছিলেন, তাতে আমার সায় ছিল বলেই স্বাক্ষর করেছি। এর পরে কেউ যদি রাজ্য সরকারের এই পুরস্কার নেওয়াকে আমার দ্বিচারিতা মনে করেন, তা কখনওই অযৌক্তিক বলে মনে করব না।’’ পাশাপাশিই অনির্বাণের যুক্তি, ‘‘উল্টো দিক থেকে দেখলে দেশের সরকার বা রাজ্যের সরকার, সে তো আমার রাজ্যের মানুষেরই প্রতিনিধি। আমি এই রাজ্যেই এক জন অভিনেতা। মানুষের ভালবাসাই এই পুরস্কার পাওয়ার সিঁড়ি। মানুষের ভালবাসার কারণে সরকার আমাকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেছে।’’ অনির্বাণের আরও যুক্তি, ‘‘আমরা যদি রাজনৈতিক চ্যুতি ও দুর্বৃত্তায়নের যে আবহ, তাকে বাদ দিয়ে পদমর্যাদার বিচারে দেখি, তা হলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমার হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন, এটা অত্যন্ত গর্বের। আমার মনে হয়েছে, এই পুরস্কার যদি আমি না গ্রহণ করি, তা হলে আমার দর্শকদের নিরাশ করা হয়।’’

বড় পর্দা থেকে ওটিটি কিংবা নাটকের মঞ্চ— সর্বত্রই কাজ করছেন অনির্বাণ। বড় পর্দায় প্রায় আট বছরের কেরিয়ার তাঁর। টলিউড ছাড়িয়ে কাজের বিস্তার হয়েছে মুম্বইতেও। অভিনেতা সত্তার পাশাপাশি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও এর আগে আলোচিত হয়েছে অনির্বাণের নাম। বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন করেছেন শাসককে। সে গত লোকসভা ভোটের সময়েই হোক বা সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোট।

এর পর কি আর তাঁকে সেই ভূমিকায় দেখা যাবে? অনির্বাণের জবাব, ‘‘যখন যেখানে বিরূপ মনোভাব প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়বে, করব। যে কোনও পুরস্কারের সঙ্গেই সাফল্যের আনন্দ যেমন থাকে, তেমনই থাকে কলঙ্কও। আমাদের যে ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ, তাতে আমরা এই কলহ-কাজিয়ার অংশ হয়ে গিয়েছি।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এক দিকে রাজ্যের সরকার আমাকে ডেকে সম্মান দিচ্ছে। অন্য দিকে, সেই সরকারের কাজ যখন পছন্দ হচ্ছে না, তখন সরবে সমালোচনা করছি। আসলে আমাদের সমাজটা তেমন নয়, তাই তার দায় আমি নিতে পারি না। আমাদের সমাজে যে হেতু মেরুকরণ রয়েছে, তাই সেই সমাজে যদি আমাকে নিয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ ওঠে কিংবা ভণ্ড, শয়তান বলা হয়, সেখানে আমার তর্ক করার দায় নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement