‘যদি ইন্ডাস্ট্রির দুরবস্থা হয়, সে দায় তো আমারও’

আনন্দ প্লাসের মুখোমুখি ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কাজ করতে গিয়ে কখনও হাঁপিয়ে যাইনি। সবগুলোই ক্রিয়েটিভ কাজ। সত্যজিৎবাবুই তো রয়েছেন! আমার এক সময়ের শিক্ষক অমর্ত্য সেনও বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। এখন তো স্পেশ্যালাইজড শিক্ষার ধারাটাও বদলাচ্ছে। মাল্টিটাস্কিং বাড়ছে। ইন্টারনেটও সাহায্য করছে।

Advertisement

স্বর্ণাভ দেব

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০০:০১
Share:

ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। ছবি: দেবর্ষি সরকার

প্র: প্রোফেসর শঙ্কুর চরিত্রে অভিনয় করবেন। কী ভাবে তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

Advertisement

উ: এই চরিত্রটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। দু’-একটা মন্তব্য ছাড়া শঙ্কু কী ধরনের মানুষ, তা ঠিক মতো বোঝা যায় না। একমাত্র আঁকা থেকে শঙ্কুর চেহারা সম্পর্কে একটা আভাস পাওয়া যায়। অভিনেতা হিসেবে কী ভাবে চরিত্রটা ইন্টারপ্রেট করা হবে, সেটাও ভাবতে হবে। তা ছাড়া শঙ্কুর পরিবেশও অনেকটা বদলে গিয়েছে। মুক্তির পরে গল্পের সঙ্গে ছবির তুলনাও হতে পারে।

প্র: সাহিত্য নিয়ে ছবি তৈরি হলে যে সমালোচনা চলতেই থাকে, তা নিয়ে আপনার কী মনে হয়?

Advertisement

উ: বইয়ের পাতার সঙ্গে সিনেমায় অমিল হলেই এখানে তুলকালাম হয়। বিদেশে তো কত রকম শার্লক হোমস হয়েছে। কিন্তু এখানে গল্পের সঙ্গে না মিললে একটা ‘গেল গেল’ রব ওঠে। হুবহু অনুকরণ আমার পছন্দ নয়। তা হলে আর নতুন সৃষ্টির মজা কোথায়?

প্র: শঙ্কুর স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আপনার দেখা হওয়াটা কি আশ্চর্য সমাপতন?

উ: ফিল্ম সোসাইটির প্রতি উৎসাহের সুবাদেই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার আগে সিনেমার অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় থিয়েটারের সঙ্গে দৃঢ় যোগ ছিল। কখনও ভাবিনি যে, অভিনেতা হব। সিনেমার ক্ষেত্রে মূল আকর্ষণ ছিল ওঁদের কাজের ধরনটা কাছ থেকে দেখা।

প্র: অভিনয়ে আসার পর উচ্চাশা তৈরি হয়নি?

উ: হয়নি বললে ভুল হবে। তবে ভাল অভিনে‌তা হতে চেয়েছিলাম। যাতে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র করার সুযোগ পাই।

প্র: চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কমফর্ট জোনের কোনও ব্যাপার রয়েছে?

উ: দেখুন, কমফর্ট জোন আর রিস্ক— পরস্পরবিরোধী। আমি ঝুঁকি নিতে রাজি, যদি ছবির ইউনিট পাশে থাকে।

প্র: ঝুঁকি নেওয়ার কথা বলছেন, কিন্তু সে ভাবে কমার্শিয়াল ছবিতে তো আপনাকে দেখা যায় না...

উ: আমার মনে হতো, মূলস্রোতের ছবিতে আমি অস্বস্তি বোধ করব। তার পর দুটো ধারা মিলে গেল। তখন কোন ছবি নির্বাচন করব, তার মাপকাঠিরই পরিবর্তন হয়ে গেল। আমার কিছু ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। ‘ব্ল্যাক’, ‘কহানি’র মতো ছবি আবার কমার্শিয়ালি সাকসেসফুলও।

প্র: আর কোন ধরনের ছবি এখনও করা হয়নি?

উ: অ্যাকশন থ্রিলার। ‘হিটলিস্ট’ বা ‘শজারুর কাঁটা’কে থ্রিলার বলব না। কমেডিটাও করতে চাই। তবে ওটার জন্যও মুনশিয়ানা দরকার।

প্র: তারকা হওয়ার লোভ হয়নি কখনও?

উ: না। কারণ, যে সময় এই লোভটা হওয়ার কথা, সে সময়ে আমি বিজ্ঞাপনের জগতে তারকা ছিলাম। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের বাড়িতে যেতাম গল্প করতে, নতুন কিছু শিখতে। কিন্তু অভিনয়টা তো আমার পেশা ছিল না। শুধু অভিনয়ের উপর নির্ভরশীল হলে হয়তো চরিত্র নিয়ে আপস করতে হতো। তখন কমার্শিয়াল সিনেমার যে পরিবেশ ছিল, তাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম না। এখন বরং অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং ছবি তৈরি হচ্ছে।

প্র: অনেকেই তো এখনকার ছবি নিয়ে ‘গেল গেল’ রব তোলেন। সে দিক থেকে আপনি ব্যতিক্রমী...

উ: আমি মনে করি, নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। ‘ইন্ডাস্ট্রির চরম দুরবস্থা’— এই কথাটা আমি শুরু থেকেই শুনছি! এক বার মৃণাল সেন আমাকে বলেছিলেন, ‘কখনও নস্টালজিয়াকে প্রশ্রয় দেবে না।’ আর যদি সত্যিই দুরবস্থা হয়, ইন্ডাস্ট্রির অঙ্গ হিসেবে তার দায় তো আমারও।

প্র: ডকুমেন্টারি পরিচালনা, অভিনয়, বিজ্ঞাপনের কাজ সমেত আরও নানা ভূমিকায় আপনাকে দেখা গিয়েছে... এত রকম কাজ সামলেছেন কী ভাবে?

উ: আসলে কাজ করতে গিয়ে কখনও হাঁপিয়ে যাইনি। সবগুলোই ক্রিয়েটিভ কাজ। সত্যজিৎবাবুই তো রয়েছেন! আমার এক সময়ের শিক্ষক অমর্ত্য সেনও বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। এখন তো স্পেশ্যালাইজড শিক্ষার ধারাটাও বদলাচ্ছে। মাল্টিটাস্কিং বাড়ছে। ইন্টারনেটও সাহায্য করছে। হয়তো দেখবেন, পরের প্রজন্মে মানুষ অনেক ধরনের কাজ একসঙ্গে আরও বেশি করে করতে পারবে।

প্র: এত কাজের মধ্যে কোনটা বেশি ভালবাসেন?

উ: এখন যেগুলো করতে ভাল লাগে, তার সঙ্গে কেরিয়ারের কোনও সম্পর্ক নেই। ফোটোগ্রাফি, নিজস্ব পড়াশোনা আমার খুব প্রিয়। আর অভিনয় তো বটেই।

প্র: আপনি তো নানা জায়গায় ঘুরতেও ভালবাসেন?

উ: হ্যাঁ। দূরদর্শনে ‘প্রদক্ষিণা’ করার সময় দেশব্যাপী ঘুরেছিলাম। তার ফলে দেশের অনেক জায়গা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। দেশকে জানা আসলে আত্মসচেতনতার একটা অঙ্গ। সেই অভিজ্ঞতাও নতুন কাজের রসদ জোগায়।

প্র: তাই কি কলকাতা, চেন্নাইয়ের পাশাপাশি গোয়াতেও আপনার বাড়ি রয়েছে?

উ: আমি ও আমার স্ত্রী গোয়া খুব পছন্দ করি। খুব শান্ত জায়গা। সেই কারণেই ওখানে বাড়ি রয়েছে।

প্র: স্ত্রীই নাকি আপনার সবচেয়ে বড় সমালোচক?

উ: একসঙ্গে ৪০ বছর রয়েছি। এত দিন একসঙ্গে থাকলে একে অপরকে প্রভাবিত করেই। সিনেমা, সাহিত্য, রাজনীতির মতো কমন ইন্টারেস্টের জায়গা রয়েছে বলেই তো এত দিন একসঙ্গে রয়েছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement