ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক
তিনি অবাঙালি। তবে চার বছর ধরে চুটিয়ে কাজ করছেন বাংলা ছবিতে। প্রদীপ সরকারের ‘ইলা’র হাত ধরে এই বছরই পা রাখবেন বলিউডেও। বাংলা ভাষায় কতটা স্বচ্ছন্দ? প্রশ্ন করার আগেই সাংবাদিককে বোল্ড আউট করলেন শতাফ ফিগার। ঝরঝরে বাংলায় বললেন, ‘‘কষ্ট করেই বাংলা শিখেছি। মৈনাকের (ভৌমিক) ‘কলকাতা কলিং’-এ ইংরেজিতেই বেশি সংলাপ ছিল। কিন্তু যখন দেখলাম, বাংলায় ভাল ভাবে কাজ করতে হবে, তখন নিজের তাগিদেই শিখলাম। অভিনয়ের সঙ্গে ভাষার একটা গভীর সম্পর্ক তো আছেই। আমার বাড়ির উপর তলায় এক দিদা থাকেন। ভুল বললে উনি উচ্চারণ, ব্যাকরণ সবটাই শুধরে দিতেন। বন্ধুবান্ধবদের বলতাম, আমার সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে।’’
শতাফের জন্ম কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন ডন বস্কো, সাউথ সিটি কলেজে। তবে কর্মসূত্রে ছিলেন দিল্লিতে। কর্পোরেট পার্সোনাল ডেভেলপমেন্টের গ্রুমিং করাতে গিয়ে শতাফের মনে হল, ‘‘রোজ স্টেজে দাঁড়িয়ে ২০০ জন মানুষকে শেখানোর মধ্য দিয়ে যখন বিনোদন দিতে পারছি, দর্শকের সংখ্যা বাড়লেও কাজটা করতে পারব। এই ভাবনা থেকেই থিয়েটারের শুরু। নীরজ কবিরের ওয়র্কশপ করলাম মুম্বইয়ে। কলকাতায় অ্যালেক পদম্সিজির সঙ্গে ‘আনস্পোকেন মোনোলগস’ পারফর্ম করলাম। তার পর মৈনাকের ছবির ডাক।’’
মীনাক্ষী ও অভিষেকের প্রথম ছবি ‘কুয়াশা যখন’-এ শতাফ নেগেটিভ চরিত্রে। ‘‘আমার নেগেটিভ চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এটা। রাজশেখর রায়চৌধুরী একজন জমিদার। চরিত্রটি ডার্ক, নিষ্ঠুর ও শয়তান।’’ নববর্ষে মুক্তি পাবে ‘কবীর’। সেখানেও শতাফ নেগেটিভ পারভেজের চরিত্রে। তবে চরিত্রটা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ তিনি। ‘‘দেবের প্রযোজনায় ‘ককপিট’ করেছি। এটাও করলাম। তবে দেবের সঙ্গে এখনও স্ক্রিন শেয়ারের সুযোগ হয়নি,’’ বললেন তিনি।
বাংলার প্রথম সারির অনেকের সঙ্গেই ইতিমধ্যে কাজ করেছেন শতাফ। ‘‘লক্ষ্য সেটাই ছিল। যে সুযোগটা পেয়েছি, সেটাকে যতটা সম্ভব কাজে লাগানো যায়।’’ তবে এখন কি ফোকাস মুম্বই? ‘‘অবশ্যই। ওখানে অনেক ধরনের কাজের সুযোগ। তবে কলকাতা-মুম্বই দুই জায়গাতেই আমি কাজ উপভোগ করি।’’
প্রদীপ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ কী ভাবে হল? ‘‘একটি কফির বিজ্ঞাপনে দাদা প্রথম আমাকে দেখেন। ছবির টিম অনেক জায়গায় খোঁজ চালাচ্ছিল। তবে আমি যে কলকাতার, সেটা অনেক পরে আবিষ্কার হয়। তার পর অনেক মিটিং, কয়েকটা স্ক্রিন টেস্ট, অজয় দেবগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ...’’ কাজলের বিপরীতে দেখা যাবে শতাফকে। ‘‘যাঁরা এই ক’বছরে আমার পাশে ছিলেন, আমার কাজ পছন্দ করেছেন, তাঁদের জন্য এটা আমার তরফ থেকে একটা বড় চমক,’’ বলছেন তিনি।
শতাফের সবচেয়ে কাছের মানুষ তাঁর মা। ‘‘আমি স্বার্থপর। আমি মনে করি, নিজেকে ভাল রাখলেই অন্যকে ভাল রাখার ক্ষমতা তৈরি হয়।’’ তাঁর মহিলা অনুরাগীরা মানতে না চাইলেও জোর গলায় বললেন, ‘‘আমি সিঙ্গল ও খুশি। এটা অবশ্যই লিখবেন, সিঙ্গল বলে চিন্তিত নই। আর আমি সকলকে ভীষণ ভীষণ ভালবাসি।’’ শেষ কথাটি কি শতাফের নিখাদ সততা না অন্য কোনও গল্পের ইঙ্গিত?