নাটক থেকে এসে এই রকম শো করার কথা ভাবলেন কেন?
দেবশঙ্কর: ‘হ্যাপি পেরেন্টস ডে’ বাবা-মাকে নিয়ে শো বলে আমাকে ধাক্কা দিয়েছিল। নিজের বাবা-মায়ের মুখ মনে পড়েছিল। তার পর মনে হল ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাবা-মায়েদের সম্পর্কের অভিজ্ঞতা শুনতে শুনতে নিজের ছেলেবেলা, বাবা-মা’র সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া যাবে।
আজ আমরা এমন দু’জন মানুষকে পাশাপাশি পেয়েছি যাঁদের একজন আজকের বাংলা থিয়েটারের দিকপাল, অন্যজন বাংলা বাণিজ্যিক ছবির সুপারহিট নায়িকা। টিভি কি এই ভাবে নানা ক্ষেত্রের মানুষদের মিলিয়ে দিচ্ছে?
রচনা: অবশ্যই। সেই জন্যেই তো অমিতাভ বচ্চনের মতো মানুষকে টিভির পর্দায় পাওয়া যায়।
দেবশঙ্কর: আমার তো মনে হয় টিভি অনেকটা গঙ্গাজলের মতো। যার মধ্য দিয়ে জাহাজ যায়, নৌকা যায়, মানুষ যায়, প্রতিমা যায়, পাঁক যায়। নানা ধরনের আবেগ অনুভূতি এখন টিভিকে ঘিরে।
আপনি কি দেবশঙ্করের অভিনয় দেখেছেন?
রচনা: না, সত্যি বলতে কি ওঁর নাটক আমি দেখিনি। কিন্তু দেবুদার (দেবশঙ্কর হালদার) অভিনীত ‘অলীক সুখ’ দেখেছি। অনবদ্য অভিনয়। অসাধারণ লাগছে ওঁর সঞ্চালনাও। আমার সঞ্চালনার সঙ্গে ওঁর সঞ্চালনার মিল আছে। আমরা দু’জনেই সঞ্চালনার সময় ভুলে যাই আমরা কে। খুব বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে আমাদের বিপরীত দিকে যে বা যাঁরা বসে আছেন তাঁদের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেওয়া।
আর আপনি রচনার কোনও ছবি দেখেছেন?
দেবশঙ্কর: হ্যাঁ, অবশ্যই দেখেছি। তবে সে সব ছবির গল্প আমার মনে নেই। কিন্তু ওর অ্যাঙ্করিং আমার দারুণ লাগে। কারণ একটাই। রচনা যখন সঞ্চালনা করেন নিজের সত্তাটাকে দূরে সরিয়ে রেখে অপর মানুষটার জীবনের গল্পের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
একসঙ্গে কুড়ি থেকে বাইশটা নাটকে অভিনয় করেন আপনি। এই শো করার জন্য কোনও প্রস্তুতি নিয়েছেন? বা নেওয়ার সময় পেয়েছেন?
দেবশঙ্কর: থিয়েটারে অনেক দিন ধরেই আমি বাচ্চাদের ওয়ার্কশপ করাই। সেই অভিজ্ঞতাটা কাজে লেগেছে। তা ছাড়া এত দিনের থিয়েটারে অভিনয়ের অভিজ্ঞতাই আমার এই শোয়ের প্রস্তুতি।
নান্দীকারের সঙ্গে আপনার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কিন্তু যে সব নাটক করে আপনি বিখ্যাত হয়েছেন সেগুলো কিন্তু একটাও নান্দীকারের নাটক নয়। যেমন ধরুন ‘উইঙ্কল টুইংকল’ ‘বিলে’, ‘রুদ্ধসংগীত’— সবই নান্দীকারের বাইরের নাটক।
দেবশঙ্কর: আজ থেকে ২৮ বছর আগে আমি যখন নান্দীকারে কাজ শুরু করেছিলাম তখন ‘শেষ সাক্ষাৎকার’ বলে একটা নাটকে অভিনয় করেছিলাম। দেড়শো-দুশো শো হয়েছিল। তার পর ‘গোত্রহীন’ করেছি। চরিত্রগুলো আয়তনে বড় না হলেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই সব চরিত্রে অভিনয় করেছি বলেই অন্য দল আমাকে নাটকের জন্য ডেকে নিয়ে গিয়েছে। আমি এই সত্যটা স্বীকার করতে বাধ্য। ‘নান্দীকার’য়ে বড় মাপের রোলে অভিনয় না করাটা একটা কাকতালীয় ব্যাপার। হয়নি তাই হয়নি। আর কোনও গূঢ় কারণ নেই।
‘দিদি নম্বর ওয়ান’ যদি দ্বিতীয় ইনিংস হয় সেটাকে কী ভাবে উপভোগ করছেন আপনি?
রচনা: এত দিন শুধু হিরোইন ছিলাম। সাধারণ মানুষ কেমন হয়, তাদের দুঃখসুখের রূপ কী রকম হয় জানতাম না। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জীবন জানছি। আমার বাড়িতে ফোন আসে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফোন করেন। আমি সব সময় তাঁদের সমস্যা সমাধান করতে পারি না। কিন্তু তাঁরা যে আমাকে খোঁজ করছেন এটা আমার ভাল লাগে।
আপনারই সমসাময়িক ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এখন নানা ধরনের ছবিতে অভিনয় করছেন। কিন্তু আপনার ফোকাস শুধুই এখন ‘দিদি নম্বর ওয়ান।’ ‘রামধনুর’ পর এক বছর হতে চলল আর কোন ও ছবিতে কিন্তু আপনাকে দেখা গেল না।
রচনা: আমার জীবনে প্রায়োরিটি হল কাজ করার পাশাপাশি ছেলেকে সুন্দর করে মানুষ করা। সেটাই আমি করে চলেছি। কখনও যদি মনে হয় অনেক দিন ছবি করিনি তখন ছবি করতে চাইব। পরিচালক প্রযোজকরা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন নেবেন। দ্বিতীয় কথা ‘রামধনু’। অভূতপূর্ব ছবি। কিন্তু সেখানে আমার রোলটা তেমন অনবদ্য কিছু ছিল না যেটা দেখে প্রযোজক-পরিচালকেরা আমার পেছনে দৌড়োবেন। আমি এই ভেবে কাজ করিনি যে ‘রামধনু’ করার পর আরও পঞ্চাশটা ছবিতে কাজের অফার পাব।
এখন হাতে কী কাজ রয়েছে?
রচনা: দুটো ছবি রয়েছে। একটা কমেডি ছবি ‘হঠাৎ একদিন’। আরেকটা ‘বৌদি ডট কম’। এই ছবিটা শাশ্বতর সঙ্গে।
আপনারা দু’জনেই অভিনয় থেকে সঞ্চালনায় এসেছেন। তার কারণ কি মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক?
দেবশঙ্কর: মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পাব সেটা আমি জানতাম। কিন্তু সেটা আমার কাছে বড় কথা নয়। আমি কাজটা করে আনন্দ পাব এইটা ভেবেই সঞ্চালনায় এসেছিলাম।
রচনা: আমিও ঠিক সেটা ভেবেই কাজে এসেছিলাম। সেই সঙ্গে টাকার অঙ্কটাও একটা বড় ব্যাপার। তবে টিভিতে আসার একটা বড় কারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানো। একমাত্র টিভি দিয়েই সেটা সম্ভব।
৩৫টা ছবিতে প্রসেনজিতের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। তার পর ‘তুমি যে আমার’ রিয়েলিটি শোয়ে ওঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু এক সঙ্গে ছবি করছেন না কেন? ঋতুপর্ণা তো প্রসেনজিতের সঙ্গে আবার ছবি করছেন।
রচনা: আমি এই নিয়ে কিছু ভাবিনি। যদি কোনও দিন বুম্বাদার সঙ্গে ছবি হয় তো হবে। এত প্ল্যান মাফিক ভেবেচিন্তে কিছু করি না। কেন এটা করতে পারছি না, কেন ওটা করতে পারছি না এই সব নিয়ে কোনও অভিযোগও নেই।
সঞ্চালনার কাজ করতে গিয়ে অভিনয়ের অভিজ্ঞতাটা কতটা কাজে লাগছে?
রচনা: না, একেবারেই কাজে লাগে না। আমি যখন সঞ্চালনা করি, অভিনয় করি না। অংশগ্রহণকারীরা যখন কথা বলেন আমি কেঁদে ফেলি অনেক সময়। সেই কান্না অভিনয় নয়।
রচনা তো পরিবারকে সময় দেবেন বলেই ‘দিদি নম্বর ওয়ান’য়ে এত স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু মাসে তিরিশ দিন শো করে, শুটিং করে আপনি পরিবারকে সময় দেন কী ভাবে?
দেবশঙ্কর: আমি পরিবারকে সময় দিই না। পরিবার আমাকে সময় দেয়। আমি মনে করি সারাদিনে একবার যদি পরিবারের সঙ্গে ভাল করে কথা বলি, তা হলেই কিন্তু আমি পরিবারের সঙ্গে থাকলাম। আমার বাড়ির লোকেরা আমার এই রুটিনের সঙ্গে যে মানিয়ে নিয়েছে সেটা তো মানতেই হবে। গত বছর আমেরিকায় গিয়েছিলাম নাটকের শো করতে।
সেই সময় আমার স্ত্রী ও ছেলে সঙ্গে ছিল একমাস। সেইটা আমার কাছে খুব বড় পাওয়া হয়ে রয়েছে।
নান্দীকারের সম্পাদক আপনি। ‘হ্যাপি পেরেন্টস ডে’ তে নিশ্চয়ই একবার রুদ্রপ্রসাদ-স্বাতীলেখা- সোহিনী সেনগুপ্ত আসবেন?
দেবশঙ্কর: সেটা তো চ্যানেল ঠিক করবে।
রচনা, আপনি কবে আসছেন ‘হ্যাপি পেরেন্টস ডে’তে?
রচনা: ‘হ্যাপি পেরেন্টস ডে’-র প্রশ্নগুলো বেশ কঠিন। শো তে যেতে হলে নিজেকে প্রস্তুত না করে যাব না।