সেই সেনাপ্রধানকে মনে পড়ে?
যে ‘হায়দার’ ছবিতে হায়দারের বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে। সেই সেনাপ্রধান বাস্তব জীবনেও একজন জাঁদরেল আর্মি অফিসার।
নাম মহম্মদ আলি শাহ। এইটুকু বললেই সব বলা হয় না। আলির আরও একটা পরিচয় আছে। তিনি অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহর ভাইপো।
জন্ম কলকাতায়।
তার পর সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাবা জামিরউদ্দিন শাহ-র সঙ্গে সারা দেশে ঘুরে বেড়ানো। এবং সেনাবাহিনীর মেজর পদে চাকরি। ফের কলকাতায় ফিরে আসা। এবং এই শহর থেকেই এমবিএ পাশ করে বহুজাতিক সংস্থায় উঁচু পদে ছিলেন।
কখনও সেনাবাহিনীতে কখনও বহুজাতিক সংস্থায় দাপিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা হলেও ভেতরে ভেতরে অভিনয়ের অদম্য ইচ্ছেটা আলিকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত ছোটবেলা থেকেই। পাঁচ বছর বয়সেই প্রথম নাটকে অভিনয় করে তিনি বুঝেছিলেন যে এ কাজ করলে প্রশংসা পাওয়া যায়, লোকে ভাল বলে।
পুণেতে গ্র্যাজুয়েশন করার সময়ই পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিউটের ছাত্রদের ডিপ্লোমা প্রজেক্টে কখনও পরিচালনায় সহায়তা, কখনও বা অভিনয়, কখনও ফাইফরমায়েশের কাজ করতেন আলি। শুধু যে পর্দায় অভিনয়েই আগ্রহ ছিল তা নয়, মঞ্চেও অভিনয় করতেন। কেন এত রকম কাজ একসঙ্গে করতেন আলি? বললেন, ‘‘ভ্যানিটি ভ্যানের বাইরে বিনোদনের আসল জগৎটা ছড়িয়ে আছে। সিনেমা তৈরি করতে হলে সেই জগৎটাকে জানতে হয়। তাই অভিনয় সংক্রান্ত নানা রকম কাজই আমি খুব আগ্রহ নিয়ে করে এসেছি।’’
দিল্লির বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করার সময় মুম্বইতে কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনেন আলি। উদ্দেশ্য ছিল একটাই। মুম্বইতে এসে অভিনয়ের জগতে পাকাপাকি পা দেওয়া।
বিশাল ভরদ্বাজের ছবি ‘হায়দার’য়ে কাজ করার পর অভিনয় করেছেন তিগমাংশু ধুলিয়ার ‘ইয়ারা’ ছবিতে। অনেকেই অভিনয় করেছেন ‘ইয়ারা’তে। আলি তাঁদের অন্যতম। এ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন বিদ্যুৎ জামওয়াল ও শ্রুতি হাসন। আর তিনি অভিনয় করেছেন এক সর্দার পুলিশ অফিসারের চরিত্রে।
এই চরিত্রের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়ার জন্য অনেক কসরতই করতে হয়েছে আলিকে। কেমন সে প্রস্তুতি? ‘‘আমি গুরু গ্রন্থসাহেব ইতিমধ্যে দু’বার পড়ে ফেলেছি। এক বছর সিগারেট খাওয়া বন্ধ রেখেছি। নকল দাড়ি না পড়ে আসল দাড়ি রেখেছি। মাথায় পাগড়ি বাঁধা শিখেছি। আর নিয়মিত গুরুদ্বারে গিয়ে উপাসনা করেছি, সেবা করেছি। এগুলো আমাকে কেউ করতে বলেনি। আমি নিজে থেকে করেছি,’’ বললেন আলি।
এই সব কাজের পাশাপাশি তিনি ইতিমধ্যে তিনটি ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন। তবে সে সব ছবির পরিচালকেরা কেউই খ্যাতনামা নন। তেমনই একটি ছবির নাম, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান তামাশা।’
আলির প্রিয় অভিনেতার মধ্যে অবশ্যই রয়েছেন তাঁর কাকা নাসিরউদ্দিন শাহ। রয়েছেন স্যর লরেন্স অলিভিয়ারও। তবে শাম্মি কপূরকেও দারুণ পছন্দ আলির। কারণটা কী? আলি বললেন, ‘‘শাম্মি কপূর দেখতে এত ভাল কিন্তু সিনেমার পর্দায় অভিনয় করার সময় মনেই রাখতেন না সে কথা। যে কোনও ধরনের ভঙ্গি করতেন অনায়াসে।
লাফঝাঁপ দিতেন অবলীলায়। শাম্মি কপূরের কাছে দর্শককে আনন্দ দেওয়াটাই ছিল মুখ্য ব্যাপার।’’
আলি দক্ষিণ ভারতীয় ছবিতে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনই করেছেন ইংরেজি ছবিতেও অভিনয়। এ বার তাঁর লক্ষ্য বাংলা ছবিতে অভিনয় করা। পরিচালক গৌতম ঘোষের সঙ্গেও পরিচয় হয়ে গিয়েছে আলির। গৌতম বললেন, ‘‘আমি আলির কাজ দেখেছি। আমার বেশ লেগেছে। ওকে নিয়ে ছবি করতে চাই। কিন্তু ঠিকঠাক একটা চরিত্রে তো কাস্ট করতে হবে ওকে।’’
বাংলা ছবিতে কাজ করার ইচ্ছের পেছনে রয়েছে বাংলার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব ম্যানেজমেন্টে পড়ার সময় দু’ বছর কলকাতায় ছিলেন। তা ছাড়া তাঁর বোনের বিয়েও হয়েছে কলকাতার এক বাঙালি পরিবারে।