আমজাদ খান এবং গব্বর সিংহ নাম দু’টি সমার্থক। সেলিম-জাভেদের সৃষ্টি ‘গব্বর’-কে পর্দায় অমর করে রেখেছেন আমজাদ খান। কিন্তু জানেন কি দু’পক্ষের সম্পর্কের তিক্ততা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, ‘শোলে’-এর পরে তাঁরা আর একসঙ্গে কাজই করেননি।
‘শোলে’-এর চিত্রনাট্য শোনার পরে অমিতাভ এবং সঞ্জীবকুমার দু’জনেই চেয়েছিলেন ‘গব্বর’ চরিত্রে অভিনয় করতে। কিন্তু রমেশ সিপ্পি তাঁদের বদলে ‘গব্বর’ করেন আমজাদ খানকেই। তবে প্রথমে এই চরিত্রে তাঁর পছন্দ ছিলেন ড্যানি। কিন্তু ড্যানি সে সময় ফিরোজ খানের ‘ধর্মাত্মা’ ছবিতে অভিনয় করছিলেন। তাই শেষ অবধি তিনি ‘শোলে’ থেকে সরে দাঁড়ান।
অভিনেতা খুঁজতে খুঁজতে সেলিম জাভেদের মনে পড়ে আমজাদ খানের কথা। তার আগে তাঁকে তাঁরা দিল্লিতে একটি নাটকে অভিনয় করতে দেখেছিলেন। ‘শোলে’-এর আগে আমজাদ খান মূলত সহকারী পরিচালকের কাজ করতেন। কিছু চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। কিন্তু সে ভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা পাননি।
রমেশ সিপ্পির সঙ্গে আমজাদের আলাপ করিয়ে দেন সেলিম খান। এর পর অডিশনের জন্য প্রস্তুতি নেন আমজাদ। একমুখ দাড়ির সঙ্গে চুল লম্বা করেন। তার পর নির্দিষ্ট দিনে অডিশনের পরে তিনিই গব্বর চরিত্রের প্রথম ও শেষ পছন্দ বলে বিবেচিত হন।
কিন্তু শ্যুটিং শুরু হতেই দেখা দিল বিপত্তি। এমনিতেই বড় তারকাদের সঙ্গে কাজ করবেন বলে আমজাদ কিছুটা নার্ভাস ছিলেন। তার উপর তামাক চিবোতে চিবোতে কিছুতেই সংলাপ বলতে পারছিলেন না। তাঁকে সময় দিতে রাজি ছিলেন রমেশ সিপ্পি। শেষে দু’দিন ধরে ৪০ বার টেক নেওয়ার পরে আমজাদের সংলাপ বলার ধরন পছন্দ হয় পরিচালকের। ক্যামেরায় গব্বর বলেন, ‘কিতনে আদমি থে?’
এর পর আমজাদকে কিছুটা বিরতি দেন পরিচালক। বলেন, সময় নিয়ে চরিত্রের জন্য তৈরি হতে। আমজাদ তাঁর চেষ্টা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। শট না থাকলেও তিনি গব্বরের পোশাক পরেই বসে থাকতেন। কিন্তু সেটে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল— নতুন অভিনেতা সংলাপ বলতে পারেন না।
সেই ফিসফাস কানে গেল সেলিম জাভেদেরও। তাঁদের মনে হতে লাগল, এ বার রমেশ হয়তো ভাববেন তাঁরা ভুল অভিনেতাকে বেছেছেন। শোনা যায়, তাঁরা রমেশকে বলেছিলেন, আমজাদের পরিবর্তে অন্য কোনও অভিনেতাকে তিনি নিতে চান কি না? তবে রমেশ তাঁকে আরও সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন।
কিছু দিন বিরতির পরে আবার শ্যুটিং শুরু হল। এ বার আমজাদের পারফরম্যান্স ভাল হল। কিন্তু আমজাদ খানের কণ্ঠস্বর নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। বলাবলি হল, তাঁর কণ্ঠ শুনে আদৌ মনে হচ্ছে না কোনও খলনায়ক কথা বলছেন! ছবির ফার্স্ট স্ক্রিনিংয়েও রমেশ সিপ্পি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে ভাল ফিডব্যাক পেলেন না।
সমালোচক মহলে ‘শোলে’ নিয়ে প্রাথমিক প্রক্রিয়া ভাল ছিল না। সেলিম-জাভেদের মনে হয়েছিল, হয়তো পর্দায় গব্বর সিংহের কণ্ঠস্বর দর্শকদের ভাল লাগবে না। তাঁরা নাকি গব্বরের সংলাপ ডাবিং করানোর কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু রমেশ সিপ্পি সেই প্রস্তাব বাতিল করে দেন।
হলে মুক্তি পাওয়ার পরে ‘শোলে’ নিয়ে মতামত আমূল পাল্টে গেল। সমালোচকরা যে ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন, দর্শকরা তাকেই মাথায় তুলে নিলেন। বলিউডের মাইলফলক ছবির মধ্যে জায়গা করে নিল এই ছবি।
‘শোলে’-এর সুবাদে আমজাদ জায়গা করে নিলেন বলিউডি খলনায়কদের ‘হল অব ফেম’-এ। কিন্তু একইসঙ্গে সেলিম-জাভেদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও খারাপ হয়ে যায়। তিনি শুনেছিলেন সেলিম-জাভেদ তাঁর পরিবর্তে অন্য অভিনেতাকে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনকি, তাঁর কণ্ঠ ডাবিং করানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
তিনি ঠিক করেছিলেন সেলিম-জাভেদের সঙ্গে আর কাজ করবেন না। সেই সিদ্ধান্তে তিনি অনড় ছিলেন। আর কোনও দিন ওই জুটির সঙ্গে কাজ করেননি।
‘দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার’ ছবির শ্যুটিংয়ে যে দুর্ঘটনা হয়েছিল, তার পর আমজাদের ওজন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। তিনি আর গব্বর সিংহের মতো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাননি। বরং সরে যান পার্শ্বচরিত্রে এবং কৌতুকাভিনয়ে।
তার পর বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন অমরীশ পুরী। খলনায়কের চরিত্রে তিনিই ক্রমে জাঁকিয়ে বসেন। আমজাদ খান তাঁর হারানো রাজপাট আর উদ্ধার করতে পারেননি।
তবে অভিনয়জীবনের শেষ দিন অবধি ‘শোলে’-এর অভিজ্ঞতা মনে রেখেছিলেন আমজাদ। সেলিম-জাভেদ জুটির থেকে দূরত্ব মুছে যেতে দেননি।