বাবা মহেশ ভট্ট কোনও দিনই সে রকম ঘনিষ্ঠ ছিলেন না। বরং, মহেশের প্রথম পক্ষের মেয়ে পূজার অনেক কাছের তিনি। সে সব নিয়ে আলিয়ার বিশেষ আক্ষেপ নেই। মা-ই তাঁর সবথেকে ভাল বন্ধু। তাঁকে আর দিদি শাহিনকে কার্যত সিঙ্গল পেরেন্ট হয়ে বড় করেছেন মা, সোনি রাজদান।
কাশ্মীরি পণ্ডিত বংশের মেয়ে সোমি এক দিকে আবার জার্মান বংশোদ্ভূত। আলিয়ার চেহারাতেও বিদেশি বৈশিষ্ট আছে। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান আলিয়ার। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় থেকেই ভালবাসতেন স্কুলের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে।
অভিনয়ে হাতেখড়ি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে। বাবার পরিচালনায় ‘সংঘর্ষ’ ছবিতে আলিয়া অভিনয় করেছিলেন প্রীতি জিন্টার শৈশবের চরিত্রে। তবে সেই শুটিংয়ের কথা বিশেষ মনে নেই তাঁর। পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি শুটিং করতে যেতেন খাবারের লোভে।
সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, তাঁর শৈশবে দৈনন্দিন জীবনে বিলাসিতা খুব একটা ছিল না। দুই মেয়েকে সাধারণ ভাবেই বড় করেছিলেন সোনি। যাতে বাস্তবের মুখোমুখি হতে সমস্যা না হয়।
ছোট থেকেই শমক দাভরের কাছে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আলিয়া। কিন্তু প্রথম দিকে তাঁর নাচের সমালোচনা হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। নায়িকা হিসেবে আলিয়ার প্রথম ছবি ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১২ সালে।
স্বজনপোষণের অভিযোগে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্ধ হলেও আলিয়ার দাবি, ১৬ কেজি ওজন ঝরিয়ে, ৫০০ জনের সঙ্গে অডিশন দিয়ে তবেই তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন কর্ণ জোহরের ওই ছবিতে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পরিমার্জিত করেছেন আলিয়া, তাতে সন্দেহ নেই। ‘হাইওয়ে’, ‘টু স্টেটস’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘রাজি’, ‘ডিয়ার জিন্দগি’, ‘গাল্লি বয়’ — নিজেকে নানা ভূমিকায় মেলে ধরেছেন আলিয়া।
প্রয়োজনে গ্ল্যামারের উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়েও অভিনয় করেছেন কেরিয়ারের শুরুতেই। চেষ্টা করেছেন নাচের স্টেপকে নিখুঁত করে তোলার। আলিয়া ছিলেন ২০১৯-এ সর্বোচ্চ উপার্জনকারী বলিউড নায়িকা।
অভিনয় ছাড়াও বলিউডে এখন আলিয়া আলোচনার শীর্ষে রণবীর কপূরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের জন্য। তাঁদের জুটি এখন ‘রালিয়া’। তবে রণবীর প্রথম নন। তাঁর আগেও বহু সম্পর্কে জড়িয়েছেন মহেশকন্যা।
স্কুলজীবনে আলিয়ার প্রেম ছিল সহপাঠী রমেশ দুবের সঙ্গে। কিন্তু সেই প্রেম মিলিয়ে গিয়েছিল আর পাঁচটা সাধারণ কৈশোর-প্রেমের মতোই। পরে আলিয়ার জীবনে আসেন রমেশ দাদারকর। তখনও আলিয়া অভিনেত্রী হননি। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার পরে এই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
নায়িকা হওয়ার পরে অবশ্য আলিয়ার প্রথম প্রেমিক ইন্ডাস্ট্রির কেউ ছিলেন না। শোনা যায়, এক বিখ্যাত শিল্পপতির ছেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। এক সেমিনারে আলাপ হওয়ার পরে দু’জনের বন্ধুত্ব জমে ওঠে।
বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। কিন্তু সেই সম্পর্কও ছিল স্বল্পস্থায়ী। এর পর আলিয়ার নাম জড়িয়ে গিয়েছিল অভিনেতা সিদ্ধার্থ মলহোত্রর সঙ্গে। ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’-এ একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। বেশ কিছু বছর তাঁদের সম্পর্ক বজায় ছিল বলে গুঞ্জন।
এর পরেও সিদ্ধার্থ-আলিয়া একসঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন ‘কপূর অ্যান্ড সন্স’ ছবিতে। কিন্তু রণবীর কপূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাওয়ায় নাকি ভেঙে যায় সিদ্ধার্থের সঙ্গে আলিয়ার প্রেম।
রণবীর-আলিয়াকে প্রথম একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল সোনম কপূরের বিয়েতে। তার পর থেকে এই জুটি এখন বলিউডের সেরা গুঞ্জন। দীপিকা-ক্যাটরিনার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে রণবীর হাত ধরেন আলিয়ার।
অনেক দিন ধরেই বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ছুটি কাটাতে যান রালিয়া। ঋষি কপূরের শেষকৃত্যেও আলিয়া ছিলেন রণবীরের পাশে। শোনা গিয়েছিল, তাঁদের বিয়ে নাকি খুব তাড়াতাড়ি হবে। অসুস্থ ঋষি নাকি ছেলের বিয়ে তাড়াতাড়ি দিতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যায়।
কিন্তু এর পরেও রণবীর-আলিয়ার বিয়ে রয়ে গিয়েছে জল্পনা কল্পনার স্তরেই। বরং সুশান্তের মৃত্যুর পরে আলিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কোণঠাসা। স্বজনপোষণ প্রসঙ্গে অনেকেই তাঁর দিকে আঙুল তুলেছেন।
‘কফি উইথ কর্ণ’ শো-এর একটি পর্বে একসঙ্গে অতিথি ছিলেন সুশান্ত ও আলিয়া। সেখানে আলিয়া উপহাস করেছিলেন সুশান্তকে, নেটাগরিকদের অভিযোগ সে রকমই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে সেই পর্বের ভিডিয়ো ক্লিপও।
রণবীর এবং আলিয়া জুটি বেঁধেছেন অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিতে। পাশাপাশি, এ বছর ‘তখত’, ‘সড়ক টু’,‘শুদ্ধি’-সহ বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। স্বজনপোষণ বিতর্ক কাটিয়ে আলিয়া কী ভাবে ছন্দে ফিরে আসেন, দেখার অপেক্ষায় বলিউড।