নেটাগরিকদের তোপের মুখে সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
পুরোটাই ক্ষণিকের উত্তেজনায় ঘটে গিয়েছে। অভিনেত্রী সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে আঘাত করতে চাননি, এমনই জানালেন তিনি। কোনও কিছু না ভেবে কথাপ্রসঙ্গে ‘অটিস্টিক’ এবং ‘পাগল’ শব্দ দুটো উচ্চারণ করেছিলেন। শনিবার রাত থেকে সমাজমাধ্যমে সেই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল। তার পর থেকেই অভিযোগের কাঠগড়ায় সুদীপ্তা।
‘অবিবেচক, তোলামূলী দলীয় সদস্যের বাড়ির বৌ’— ইত্যাদি নানা কটাক্ষে জেরবার অভিনেত্রী। আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেই মুখ খোলেন। জানান, ‘রাঙামতী তীরন্দাজ’ ধারাবাহিকের শুটিংয়ের অবসরে তাঁরা মগজমারির খেলা (ব্রেন স্টর্মিং গেম) খেলছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই শব্দ দুটো উচ্চারিত হয়েছে। পাল্টা অনুযোগ তাঁরও, “অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কিছু বলে ফেললেই তা-ই নিয়ে সমাজমাধ্যমে খাপ পঞ্চায়েত বসে যায়! ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসিত আক্রমণ চলে। এ-ও কি কাম্য?”
কী ভাবে ঘটে গেল এত বড় কাণ্ড? অভিনেত্রীর কথায়, “ইদানীং সমাজমাধ্যমে বুদ্ধি পরীক্ষা করার জন্য নানা ধরনের মজার খেলা চালু হয়েছে। সে রকমই একটা খেলা ধারাবাহিকের এক সহকারী পরিচালক খেলছিলেন। খেলায় জিততেই তাঁকে বলা হয়, তুই তা হলে ‘অটিস্টিক’ বা ‘পাগল’ নোস।” ভিডিয়ো আকারে ছড়িয়ে পড়া এই কথোপকথনে উপস্থিত ছিলেন সুদীপ্তাও। তিনিও বক্তব্য রাখেন। তার পরেই নিন্দার ঝড় সমাজমাধ্যম জুড়ে।
সুদীপ্তা সবিস্তার ঘটনাটি জানানোর পাশাপাশি কিছু প্রশ্নও তুলেছেন। জানতে চেয়েছেন, “এই একটি ঘটনা নয়, কুম্ভে গিয়ে কেন পুরো ডুব দিইনি, তা নিয়েও সমাজমাধ্যমে খাপ পঞ্চায়েত বসেছে। কেন তুচ্ছ ঘটনায় আমাদের নিশানা করা হবে?” তাঁর কৌতূহল, খ্যাতনামীরা জীবনে সফল বলেই কি তাঁদের নিয়ে অসফল ব্যক্তিরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন? তাই যেনতেনপ্রকারেণ খুঁত ধরতে পারলেই নাকাল করেন? পাশাপাশি, ব্যক্তিজীবন নিয়ে অকারণ কাটাছেঁড়ারও বিরোধী তিনি। সুদীপ্তার সাফ জবাব, “আমার শ্বশুরবাড়ি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমি বিনোদন দুনিয়ায়। তা নিয়ে ওঁদের কোনও আপত্তি নেই। একই ভাবে শ্বশুরবাড়ির প্রভাব খাটিয়ে আমি কাজ পাই না।” তা হলে কেন বাছা বাছা কিছু বিশেষণে বিশেষিত করা হবে তাঁকে? প্রশ্ন তুললেন অভিনেত্রী। তাঁর মতে, তিনি জানেন ‘অটিস্টিক’ আক্রান্তদের কত কষ্ট বা সেই শিশুর মা-বাবার মানসিক অবস্থা কী হয়। তাই এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে কটাক্ষ বা রসিকতা করার প্রশ্নই ওঠে না।
কথাপ্রসঙ্গে উঠে এসেছে পরিচালক-অভিনেতা কঙ্গনা রনৌতের কথা। তিনি রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে ‘মেন্টাল হ্যায় ক্যায়া’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সেন্সর বোর্ড ছবির নাম বদলানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কারণ, ‘মেন্টাল’ শব্দটি কিছু বিশেষ মানসিকতার মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে। একই কারণে যশ-নুসরতের ‘মেন্টাল’ ছবির নাম বদলে ‘সেন্টিমেন্টাল’ রাখা হয়।
একই ভাবে সুদীপ্তার কথাও কি অজান্তে কিছু মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে উঠল? এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেননি অভিনেত্রী। অনুভব করতে পেরেছেন, আক্রান্তদের পরিবারের অনুভূতি। সেই অনুভূতি থেকেই আনন্দবাজার অনলাইন মারফত দুঃখপ্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, “আমাদের উচ্চারিত শব্দ অজান্তে এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে যদি কাউকে আঘাত করে থাকে তা হলে আমরা আন্তরিক দুঃখিত। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” আগামী দিনে আরও সাবধান এবং সংযত হয়ে শব্দপ্রয়োগ করবেন— এ কথা জানাতেও ভোলেননি সুদীপ্তা।