বলিউডে কে এগিয়ে

এক মাসের মধ্যে দুই বাঙালি নায়িকার অভিষেক। পত্রলেখা ও মিষ্টি। দুই কন্যের রিপোটর্র্ কার্ড দেখে লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০০:০২
Share:

পত্রলেখা

Advertisement

বলিউডে অভিষেক

হনসল মেহতার ছবি ‘সিটিলাইটস্’। ছবির ক্রেডিট লিস্টে অন্তত ৬ বার লেখা আছে যে, হনসলের ছবিটি ‘মেট্রো ম্যানিলা’ ফিল্মের অফিশিয়াল রিমেক। হিন্দি ফিল্ম মুক্তি পেয়েছে ৩০ মে। আর সেখানে বাঘা বাঘা অভিনেতাদের পাশে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন শিলংয়ে বড় হয়ে ওঠা বাঙালি অভিনেত্রী পত্রলেখা। ছবিতে তিনি রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামের এক মেয়ের ভূমিকায়। যিনি স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন মুম্বই শহরে। যেখানে অভাব অনটনের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তাঁকে রাজি হতে হয়, বারডান্সার হয়ে জীবিকা অর্জনে।

Advertisement

প্রথম ছবির রিপোর্ট কার্ড

এই ধরনের ছবির বক্স অফিস সাফল্য বোঝার সময় এখনও আসেনি। ওয়ার্ড অব মাউথের জোরেই এ ছবি দর্শককে টানে। তবে ছবিতে পত্রলেখার অভিনয় নিয়ে প্রচুর প্রশংসা হয়েছে। হাবেভাবে, পোশাকেআশাকে পত্রলেখা যেন পুরোপুরি তাঁর চরিত্রই হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বিপরীতে রাজকুমার রাও। যিনি এ বছর ‘শাহিদ’য়ে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তবে এই রাজকুমারের সঙ্গে তর্কাতর্কির দৃশ্যে পত্রলেখা খুব স্বাভাবিক। বলে দিতে হবে যে এটাই তাঁর প্রথম ছবি। পত্রলেখা অবশ্য বলছেন, “আমি সব সমালোচনা পড়েছি। ভালটা শুনতে দারুণ লাগছে। তবে খারাপ কিছু লিখলেও তা মন দিয়ে পড়ছি। কারণ আমি নিজেও বিশ্বাস করি যে আমাকে অনেকটা শিখতে হবে। অভিনয়টা আরও ভাল করা দরকার। হিন্দিটা আরও ভাল ভাবে বলা শিখতে হবে।”

কোথায় পাল্টাতে হবে

তবু কেউ কেউ পত্রলেখার চেহারার আদল দেখে বলছেন যে তিনি খুব বেশি শহুরে দেখতে। কিন্তু পত্রলেখা তা মানতে নারাজ। “কেউ যদি আমাকে বলেন যে ছবিতে আমাকে শহুরে দেখতে লাগছে সেটা আমি মানতে নারাজ। আমি তিন সপ্তাহ রাজস্থানে গিয়ে থেকেছি। ওখানকার মেয়েরা কী ভাবে হাঁটে, চলে তা লক্ষ করেছি। কথা বলার ধরনটা দেখেছি। এমনকী কানের দুল কিনে এনে পরেছি। যাতে আমাকে দেখতে রাজস্থানী মেয়েদের মতোই লাগে,” বলছেন তিনি। আর এই সব শুনে পত্রলেখার সহঅভিনেতা (যিনি বাস্তব জীবনে তাঁর বয়ফ্রেন্ডও) নাকি খানিকটা খাপ্পা! “ও আমাকে ভালবাসে তো! তাই এই ধরনের সমালোচনা শুনলে ওর ভাল লাগে না,” বলছেন পত্রলেখা।


‘সিটিলাইটস’-য়ে পত্রলেখা ও রাজকুমার

এর পর কী?

মনে আছে ‘লাঞ্চবক্স’য়ের নিমরত কৌরকে? ছবি মুক্তির পরে তিনি প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পর তাঁকে আর কোনও ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়নি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এক অদ্ভুত জায়গা। অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পেলেও তার মানে এই নয় যে পর পর সব ছবিতে তাঁকে কাস্ট করা হবে। পত্রলেখার এখন একটাই ইচ্ছে।

“সারাক্ষণ প্রার্থনা করছি যাতে আমার অভিনয়টা যেন পরিচালকদের ভাল লাগে। আর তাঁরা যেন আমার কাছে ভাল চিত্রনাট্য নিয়ে আসেন। ভাল কাজ করার জন্য আমি উদগ্রীব।” বলছেন তিনি।

পত্রলেখার চোখে মিষ্টি

এখনও পর্যন্ত ‘কাঞ্চি’ দেখেননি পত্রলেখা। তবে ট্রেলর দেখেছেন। বলছেন “ট্রেলর দেখে মনে হয় ও ওর নামের মতোই মিষ্টি দেখতে। আমার দ্ৃঢ় ধারণা ও বলিউডে বেশ ভাল কাজ করবে।”

মিষ্টি

বলিউডে অভিষেক

সুভাষ ঘাই-য়ের ছবি ‘কাঞ্চি’। মুক্তি পেয়েছিল ২৫ এপ্রিল। আর সেখানে মুখ্যচরিত্রে কলকাতার মেয়ে মিষ্টি। ছবি মুক্তির আগে তাঁকে নিয়ে প্রচার মাধ্যমে দারুণ হইচই। সুভাষ ঘাই-য়ের নতুন আবিষ্কার বলে মিষ্টিকে নিয়ে চারিদিকে চর্চা

শুরু হয়ে যায়। এমনকী তুলনা হয় ঐশ্বর্যা রাই-য়ের সঙ্গেও।

প্রথম ছবির রিপোর্ট কার্ড

কিন্তু ছবি মুক্তির পরে বক্স অফিসে সেরকম সাফল্য পায়নি। বড় পর্দায় মিষ্টিকে দারুণ সুন্দর লেগেছে ঠিকই। তবে যে সিনেমায় তাঁকে দেখা গিয়েছে তার চিত্রনাট্য আর মেকিং নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। ঐশ্বর্যার সঙ্গে তুলনা নিয়ে মিষ্টির মাথাব্যথা নেই। সেটা নাকি ওঁকে মোটিভেট করে। বলছেন, কোনও লাইট-আইড মেয়েকেই তো এ দেশে ঐশ্বর্যার সঙ্গে তুলনা করা হয়। “যাঁরা ভাল রিভিউ লিখেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। যাঁরা খারাপ লিখেছেন, তাঁদেরকেও।তাঁরা নিশ্চয়ই ছবিটা খুঁটিয়ে দেখে, আমার ত্রুটিগুলো বুঝতে পেরেছেন। বক্স অফিসে ছবিটা আরও ভাল করলে বেশ লাগত। তবে কি জানেন, পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ানোর মধ্যেও একটা চ্যালেঞ্জ আছে। তার সঙ্গে এটাও বলব যে, আজকাল রাস্তায় বেরোলে লোকে আমাকে কাঞ্চি বলে ডাকে। সেটা দারুণ লাগে,” বলছেন তিনি।

‘কাঞ্চি’ ছবিতে মিষ্টি (বাঁ দিকে)

কোথায় পাল্টাতে হবে

স্ক্রিন প্রেজেন্স ভাল। অভিনয় শেখার সুযোগ হয়তো ভবিষ্যতে আরও আসবে। তবে গলার স্বরটা আরও সুন্দর করে মডুলেট করতে হবে। খুব উঁচু স্বরে কথা বললে, সেটা শ্রুতিমধুর হওয়াটা মিষ্টিকে রপ্ত করতে হবে।

এর পর কী

‘কাঞ্চি’র বক্স অফিস সাফল্য যা-ই হোক না কেন, মিষ্টি কিন্তু বলিউডেই কাজ করে যেতে চান। আপাতত টলিউডে এসে কাজ করার কোনও প্ল্যান নেই। “কর্ণ জোহর, সঞ্জয় লীলা বনশালি আর ইমতিয়াজ আলি এঁদের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন দেখছি। আর হ্যাঁ, নতুন স্ক্রিপ্ট এলে অনেক ভেবে সেটা বাছাই করব ঠিক করেছি,” বলছেন তিনি। আগামী ২ জুন থেকে মিষ্টি এক তেলুগু ছবির শু্যটিং করবেন। পরিচালক করুণাকরণ। সহ-অভিনেতা নীতিন।

মিষ্টির চোখে পত্রলেখা

‘সিটিলাইটস্’ দেখেননি। তবে ট্রেলারটা ভাল লেগেছে। বলছেন পত্রলেখার ছবির গানগুলো তাঁর খুব পছন্দের। বিশেষ করে ‘মুসকুরানে কি’ গানটা। প্রতিযোগিতায় কাকে এগিয়ে রাখবেন তিনি? “প্রতিযোগী নয়। পত্রলেখা আমার সহকর্মী,” বলছেন মিষ্টি। আর তাঁর সঙ্গে হেসে বলছেন, “আমার একটু সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স আছে। বলতে পারেন, আমি নিজেকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে আপাতত ভাবছি না।”

ইন্ডাস্ট্রি কী বলছে

এক দিকে হনসল মেহতার ছবি। অন্য দিকে সুভাষ ঘাই। দু’টো ছবির বাজেট আলাদা। মেকিংটাও ভিন্ন। তবু যদি দুই বাঙালি নায়িকার মধ্যে তুলনা করতে হয়, তা হলে হয়তো মিষ্টিকে স্ক্রিন প্রেজেন্সে এগিয়ে রাখা যাবে। আর পত্রলেখার পুঁজি হল তাঁর অভিনয়। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ তরণ আদর্শ বলছেন, “পত্রলেখা আর মিষ্টি দু’জনেই বেশ ইন্টারেস্টিং অভিনেত্রী। মিষ্টি ট্যালেন্টেড। পত্রলেখা আমাকে খুব অবাক করেছে। রাজকুমার রাও এবং মানব কউল-এর মতো অভিনেতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রথম ছবিতে এ ভাবে অভিনয় করাটা তারিফের যোগ্য।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement