শুটিংয়ে নুসরত জাহান। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তর কলকাতার লাহাবাড়ি। চৈত্র মাসে বনেদি বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন! সাদা পোশাক পরে ঢাকির দল উপস্থিত। দালানে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। আলপনা, আলো, লাল শালু, গামছা, লাল-সাদা কাপড়, কুলো, লাল ফুল, ফুলের মালা, কলাগাছ, আমের পল্লব— হিন্দুশাস্ত্র মেনে পুজোর উপকরণে চারদিক সাজানো। জ্বলছে ঝাড়বাতিও। বাড়ির আনাচকানাচে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে। লালপাড় সাদা শাড়ি, গয়নায় সেজেছেন মেয়েরা। ছেলেরা লাল-সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি।
চমক আরও আছে। খবর, এই পুজোয় এসেছেন নুসরত জাহান। বাড়ির ভিতরে দালানের এক পাশে রিকশা দাঁড়িয়ে। ভিতরে ফুচকা, সন্দেশ, রসগোল্লা— কী নেই!
এমন চমকপ্রদ খবর পেয়ে বনেদি বাড়িতে উপস্থিত আনন্দবাজার ডট কম। লাহাবাড়ির ভিতরে এ রকমই কাণ্ড ঘটছে। তবে, পুরোটাই বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক পাপনের মিউজ়িক ভিডিয়ো ‘ঠুমকিয়া’-র শুটিংয়ের কারণে। দফায় দফায় গায়কের রেকর্ড করা কণ্ঠ শোনাচ্ছে, ‘হাত পে লেহরায়ে কঙ্গন তেরা’ গান। সঙ্গে নারীকণ্ঠের ‘কমলা নেত্য করে থমকিয়া থমকিয়া’ গানের ফিউশন। এখানেই নুসরত শুটিং করবেন। সকাল থেকে তারই ব্যস্ততা। মিউজ়িক ভিডিয়ো দিয়েই বলিউডে খাতা খুললেন অভিনেত্রী।
মিউজ়িক ভিডিয়োর শুটিংয়ে নুসরত জাহান, প্রিয়ঙ্ক শর্মা।
সকাল গড়িয়ে ঘড়িতে বেলা বারোটা। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির উল্টো দিকের রাস্তায় সার দিয়ে মেকআপ ভ্যান, জেনারেটারের গাড়ি। নায়িকা কই? সেটে ফিসফাস, তিনিও পুজোর বেশে। লালপাড় সাদা শাড়িতে সাজছেন। বিপরীতে প্রিয়ঙ্ক শর্মা। নায়িকা আসার ফাঁকে সনাতনী সাজে সেজে ওঠা একদল নারী-পুরুষ এবং নায়ককে নিয়ে জোর মহড়া চলছে। ধাক্কাপাড় ধুতি, লাল সিল্কের জমিনে জরির কাজের অঙ্গরাখা পাঞ্জাবি। হাসিমুখে সেটে ঢুকে নিমেষে আপন করে নিলেন সকলকে।
মহড়া হতেই টুকরো টুকরো শট ক্যামেরাবন্দি। ফুচকার টক জলে, রসগোল্লার রসে অভিনেতাদের হাত-মুখ মাখামাখি। মিউজ়িক ভিডিয়ো পরিচালনায় স্নেহা শেট্টি কোহলি। প্রযোজনায় টিপ্স মিউজ়িকের তরফ থেকে কুমার তৌরানি। নায়িকা কখন আসবেন? গুঞ্জন সেটের ভিতরে। ছাতা মাথায়, দেহরক্ষীদের নিয়ে নুসরত যখন সেটে এলেন তখন সূর্য মধ্যগগনে। শুটিংয়ে এসেছিলেন সাদা টি-শার্ট, প্যান্ট পরে। রূপটানে, শাড়িতে, গয়নায় নায়িকা নিখুঁত বাঙালি মেয়ে। নায়কের পাশে ‘দেশি গার্ল’ সাজে তাঁকে ভারী মানিয়েছে। নুসরতের নাচ নিয়ে নিন্দকেরাও টুঁ শব্দ করতে পারবে না। এক-দু’বার মহড়া দিয়েই তিনি ক্যামেরার মুখোমুখি।
গুরু গুরু ঢাকের বোলে ঠাকুরদালান মুখরিত। পর্দার ‘কমলা’ মোটেই ‘থমকিয়া থমকিয়া নেত্য’ করলেন না। নুসরতের নাচের ছন্দে, ধুনোর গন্ধে চৈত্র মাসেও এক টুকরো শরৎ লাহাবাড়ির আঙিনায়।