রেণুকা-কাজল
অভিনয়ে তাঁরা কেউ নতুন, কেউ বা দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। নিজের মতো করে গল্প বলবেন বলেই ক্যামেরার নেপথ্যে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন তাঁরা। অভিনেতাদের পরিচালনায় আসার এই ট্রেন্ড অবশ্য নতুন নয়। তবে অভিনয়-জীবনের শুরুর দিকেই পরিচালনার দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন, এমন উদাহরণ ইদানীং চোখে পড়ছে বেশি করে। কেউ আবার কেরিয়ারের সেকেন্ড ইনিংসে হাতে তুলে নিচ্ছেন ক্যামেরা। এই সময়ের কয়েকজন অভিনেতা-পরিচালকের সাম্প্রতিক কাজে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
নতুন যাঁরা...
অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়ের কাজ দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘রোম রোম মে’ সম্প্রতি প্রদর্শিত হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। প্রিমিয়ার হয়েছিল বুসান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। হিন্দি, ইংরেজি ও ইটালিয়ান ভাষায় মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির মুখ্য চরিত্রে তন্নিষ্ঠা নিজে তো রয়েছেনই, পাশাপাশি রয়েছেন নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকিও। যাঁর উদ্যোগেই তন্নিষ্ঠা লিখে ফেলেছিলেন গল্পটা। ভাবনাটা তাঁর মাথায় এসেছিল বছর কয়েক আগে, ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে।
তন্নিষ্ঠা আবার সদ্য হাতে নিয়েছেন ‘লর্ড কার্জন কী হাভেলি’ ছবিটি, যা পরিচালনা করছেন আর এক নবীন অভিনেতা অংশুমান ঝা। ‘লাভ সেক্স অওর ধোঁকা’-খ্যাত অভিনেতা প্রথম পরিচালনার জন্য বেছে নিয়েছেন ব্ল্যাক কমেডি। শুধু সিনেমা নয়, থিয়েটারেও পরিচিত মুখ অংশুমান। পরিচালক সুভাষ ঘাইকে অ্যাসিস্ট করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।
নওয়াজ়ের সঙ্গে তন্নিষ্ঠা
প্রিয় ক্যামেরার আড়ালে
ক্যামেরা বরাবরই প্রিয় ছিল বোমান ইরানির। পেশাদার অভিনেতা হয়ে ওঠার আগে ফোটোগ্রাফিতে হাত পাকিয়েছিলেন বোমান। এ বার এত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ফিল্মমেকিংয়ে হাত পাকাতে চলেছেন তিনি। বাবা আর ছেলেকে নিয়ে একটি গল্পের স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়েই রয়েছে তাঁর হাতে, কাস্টিংয়ের কাজ চলছে। সম্প্রতি ছেলের একটি কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপনের কাজেরও অংশ হয়েছিলেন বোমান। নিজের এই নতুন ইনিংস সম্পর্কে অভিনেতা বলেছেন, ‘‘আমাকে ছাত্রাবস্থায় ফিরে যেতে হয়েছে ডিরেকশন দেওয়ার আগে। ছবির জন্য গল্প খুঁজতে গিয়ে বুঝেছিলাম, আসলে কাজটা কত কঠিন। আমি দাদু হয়ে গিয়েছি ইতিমধ্যেই! তবু এই বয়সে এসে আরও একবার ডেবিউ করতে পারব বলে উত্তেজিত লাগছে।’’
টেলিভিশন কিংবা বড় পর্দার আর এক চেনা মুখ রেণুকা সাহানেও কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে হাতে তুলে নিয়েছেন পরিচালনার দায়িত্ব। অজয় দেবগণের প্রথম নেটফ্লিক্স প্রযোজনাটি পরিচালনা করছেন রেণুকা। ‘ত্রিভঙ্গ’র মুখ্য চরিত্রে রেণুকা কাস্ট করেছেন কাজলকে। রয়েছেন মিথিলা পালকর, তন্বী আজ়মির মতো অভিনেতারাও। তবে এই প্রথম নয়, মা শান্তা গোখেলের লেখা কাহিনি নিয়ে বছর দশেক আগে মরাঠি ছবি ‘রিতা’ পরিচালনা করেছিলেন রেণুকা। মোহন আগাসে, পল্লবী জোশী, জ্যাকি শ্রফ, সুহাসিনী মুলে ছিলেন সে ছবিতে। নেটফ্লিক্সের জন্য ‘ত্রিভঙ্গ’র কাহিনি লিখেছেন রেণুকা নিজেই। আপাতত ছবির শুটিং চলছে।
বোমান ও সীমা
সেকেন্ড ইনিংসে ছক্কা
কেরিয়ারের সেকেন্ড ইনিংসে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন সীমা পহবা। বলিউডের সাম্প্রতিক অল্টারনেটিভ ছবির অন্যতম প্রধান মুখ সীমার প্রথম ছবি ‘রামপ্রসাদ কী তেরহবী’ সদ্য প্রদর্শিত হয়েছিল মুম্বইয়ের মামি চলচ্চিত্র উৎসবে। প্রশংসা পেয়ে উচ্ছ্বসিত সীমা বলেছিলেন, ‘‘আমার সব সময়ে মনে হত, কোনও সিরিয়াস বা ইমোশনাল ড্রামাকে ঠিকমতো বুঝতে গেলে একটা বয়সে পৌঁছতে হয় আগে। কিন্তু আমার প্রথম ছবিটা নতুনরাও খুব পছন্দ করেছে।’’ এ ছবিতে নাসিরউদ্দিন শাহ, সুপ্রিয়া পাঠক, কঙ্কণা সেন শর্মা ছাড়াও কাজ করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তন্নিষ্ঠার মতোই সীমাও তাঁর প্রথম ছবির রসদ খুঁজে পেয়েছিলেন বাস্তব ঘটনা থেকেই। বাবার মৃত্যুর পরে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে বহু আত্মীয়-স্বজন রয়ে গিয়েছিলেন সীমার বাড়িতে। সেই সময়কার অভিজ্ঞতাই অভিনেত্রীকে এ ছবির স্ক্রিপ্ট লিখতে সাহায্য করে। তাঁর হাতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি গল্প। সেগুলোও পর্দায় নিয়ে আসার ইচ্ছে রয়েছে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই অভিনেত্রীর।
যাঁরা পরিচালনার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন সম্প্রতি, তাঁদের কারও ছবি সদ্য মুক্তি পেয়েছে, কারও ছবি আবার প্রাথমিক স্তরে। রিপোর্ট কার্ড যেমনই হোক, এটুকু অন্তত স্পষ্ট, নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে এগিয়ে আসছেন অভিনেতারাও।