তাঁকে নিয়ে কোনও রকম হইচই হোক, সেটা চাইতেন না। অথচ মানুষটা নিজে খুব আমুদে ছিলেন। বাড়িতে বন্ধু-আত্মীয় সকলকে নিয়ে হইহুল্লোড় করতে ভালবাসতেন। বুধবার ভোরে সব কিছু থেকেই দূরে সরে গেলেন বাংলা ছবির বর্ষীয়ান অভিনেতা স্বরূপ দত্ত। মল্লিকবাজারের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
হাসপাতালের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, গত শনিবার স্বরূপ দত্ত হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই রাতে অভিনেতা তাঁর বালিগঞ্জের বাড়ির বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় তাঁর। চিকিৎসকেরা তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখেন।
সত্তরের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন স্বরূপ। স্কুলজীবন থেকেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। উৎপল দত্তের সঙ্গে আলাপই পরবর্তী কালে তাঁর অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে। প্রথমে সাউথ পয়েন্ট, পরে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যা মন্দির থেকে পড়াশোনা করেন। অর্থনীতি নিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে স্নাতক করেন অভিনেতা।
থিয়েটার দিয়ে শুরু করলেও পরে বড় পর্দাকেই বেছে নেন তিনি। তপন সিংহের মতো পরিচালকের নির্দেশনায় প্রথম ক্যামেরার সামনে আসেন স্বরূপ। ‘আপনজন’ তাঁর প্রথম ছবি। এখানে ছেনো গুন্ডার চরিত্রটি এখনও দর্শকের মনে রয়ে গিয়েছে। এর পরে ‘সাগিনা মাহাতো’তে কাজ করেন। দিলীপকুমারের মতো দাপুটে অভিনেতার পাশে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। সত্তরের দশকে অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন স্বরূপ— ‘পিতাপুত্র’, ‘মা ও মেয়ে’, ‘অন্ধ অতীত’। হিন্দিতে ‘উপহার’-এ কাজ করেন জয়া বচ্চনের সঙ্গে। আশির দশকেও পর্দায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। অনেক ছবিতেই খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-তাপস পালের সঙ্গে ‘চোখের আলোয়’ ছবিতে তাঁর খল চরিত্রের কথা বলতেই হয়।
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করলেও, সে ভাবে কোনও দিনই লাইমলাইট কেড়ে নিতে পারেননি। ঘনিষ্ঠদের মতে, একটু অন্তরালে থাকতেই পছন্দ করতেন অভিনেতা। তবে ধীরে ধীরে নিজেকে সিনেমার জগৎ থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
প্রয়াত অভিনেতার ছেলে সারণ দত্ত পরিচালনায় আসেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাবা খুব প্রাইভেট পার্সন ছিলেন। তাঁকে নিয়ে হইচই হোক, চাইতেন না।’’
প্রচারমুখী ছিলেন না বলেই হয়তো তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য অভিনেতার মতো তাঁকে নিয়ে আলোড়ন ছিল না। শেষ জীবনের মতো কেরিয়ারের চূড়ান্ত পর্যায়েও নিভৃতে থেকে গিয়েছেন।