সৌরভ দাস ও দর্শনা বণিক। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ছোটবেলার পুজো আজও মনে আছে। পুজো নিয়ে আমার উত্তেজনায় কোনও ঘাটতি ছিল না। খুবই হইহই করতাম। প্রচুর মণ্ডপে ঘুরতাম, ঠাকুর দেখতাম। পুজোর সময় ঘরমুখো হতে ইচ্ছেই করত না। যত ক্ষণ না পা অসাড় হয়ে আসছে অথবা চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তত ক্ষণ বাড়িতে ঢোকার কথা মাথায় মনেই হত না। পুজো মানেই পড়াশোনা থেকে ছুটি। এর চেয়ে বড় উৎসবের কারণ আর কী হতে পারে! মা মর্ত্যে আসছেন মানে সুসময় শুরু। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হইহই করা আর ঘরমুখো না হওয়ার একটা অদৃশ্য ছাড়পত্র এই সময় অনায়াসেই পাওয়া যেত। এই বিষয়গুলো সত্যিই আজও মনে পড়ে।
এখনও রাস্তায় পুজো দেখতে বেরোতেই পারি। এমন নয়, বেরোলেই মানুষ ছেঁকে ধরবে। হয়তো কিছু মানুষ চিনে ফেলবেন। সেটা ভালই লাগে। কিন্তু তা-ও নিয়ম করে পুজোর দিনগুলোয় এখন এর আর বেরোনো হয় না। আগে সারা বছর পরিবারের সঙ্গে থাকতাম। এই পাঁচটা দিন নিজের মতো করে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কাটত। এখন বিষয়টা ঠিক উল্টো হয়ে গিয়েছে। এখন সারা বছর কাজের জন্য পরিবারকে সময় দিতে পারি না। তাই এই পাঁচটা দিন বাবা-মা ও বোন, পুরনো বন্ধুবান্ধবের জন্য রাখা থাকে।
আমার কাছে পুজো মানেই এখন কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো। হয়তো এক দিন কারও বাড়িতে জমায়য়েত হবে। অন্য দিকে পুজো ও উৎসব উদ্যাপনের ক্ষেত্রেও কিছু বদল এসেছে। আমার মনে হয়, আগে খুব সাধারণ ভাবেই সবটা হত। এখন যে সব কিছু খুব জটিল হয়ে গিয়েছে, তা বলছি না। হয়তো কিছু বিষয় অতিরঞ্জিত থাকে। তবে পুজোয় নানা রকমের থিমের পিছনে বহু গবেষণা, পরিশ্রম থাকে। সময় বদলাচ্ছে, মানুষ বদলাচ্ছে। তাই দুটো সময়ের পুজোর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে, থাকবেই। কিন্তু দুটোই নিজের মতো করে সুন্দর।
অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন, বিয়ের পরে প্রথম পুজোর অনুভূতি কেমন? আলাদা করে আমাদের এমন কিছু মনে হচ্ছে না। একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটাব। একসঙ্গে অঞ্জলি দেব। দর্শনা যখন সিঁদুর খেলতে যাবে, ওর সঙ্গে যাব। এই মুহূর্তগুলোই আমার কাছে বিশেষ। আমার মনে হয়, সাদামাঠা ও সহজ বিষয়গুলোই আমাদের জীবনে বিশেষ জায়গা নিয়ে থাকে। সহজ হয়ে ওঠাই কিন্তু সবচেয়ে কঠিন।
তাই দর্শনা-সহ পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটানোই এ বার মূল লক্ষ্য। বেশ কিছুটা সময় হয়তো আমার ক্যাফে হোদলস্-এ থাকব। ওই ক্যাফেতেই বন্ধুদের ডেকে নেব এক দিন। আলাদা করে মণ্ডপ ঘুরে দেখার কোনও পরিকল্পনা নেই। আসলে পুজো পরিক্রমা করার সময়ই অনেক ঠাকুর দেখা হয়ে যায়। তবে দর্শনা কিন্তু পুজোয় ঘুরতে খুব ভালবাসে। আমার পুজো অত আড়ম্বরপূর্ণ নয়। অন্য দিকে কলা বৌ স্নান করানো থেকে দশমীর বিসর্জন—সব পছন্দ দর্শনার। তাই ওর সঙ্গে কয়েকটা ঠাকুর দেখতে পারি হয়তো।
ছোটবেলায় আমার হইহই কম ছিল না। জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে বেহালা পর্ণশ্রীতে। ভাসানের নাচ থেকে আমার ব্রেকআপ, বেহালা পর্ণশ্রী আমার সবটা দেখেছে। মনে আছে, ভাসানে নাচার জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকতাম। কেউ কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়ে নাচত। আমার নাচও মনে হয় বেহালা পর্ণশ্রী মনে রেখেছে।
আসলে পুজো আসছে আসছে এটাই খুব ভাল লাগে। পুজোর পোশাক নিয়ে আলাদা করে তেমন আগ্রহ ছিল না কখনওই। তবে পুজোর খাওয়া দাওয়া আমার আজও খুব ভাল লাগে।