চেহারায় শিশুসুলভ ভাব থাকলেও নায়ক হিসেবে ছিলেন সুদর্শন। কিন্তু কেরিয়ার সে ভাবে তৈরি হল না। প্রতিশ্রুতিমান হয়েও অকালে ঝরে গিয়েছিলেন অভিনেতা কুণাল সিংহ। তাঁর আত্মহননের কারণ এখনও রহস্যাবৃত। ১৯৭৭-এর ২৯ সেপ্টেম্বর কুণালের জন্ম হরিয়ানায়। মডেলিং-এর পরে আসেন অভিনয়ে। নায়ক হিসেবে প্রথম ছবি ১৯৯৯ সালে, ‘কধলর ধিনম’।
পরের বছরই মুক্তি পায় এই ছবির হিন্দি সংস্করণ, ‘দিল হি দিল মে’। সেখানেও নায়ক কুণাল। চরিত্রের নামও একই, ‘রাজা’। নায়িকা সোনালি বেন্দ্রে। ছবির বিষয়বস্তু ছিল সময়ের থেকে বেশ এগিয়ে। ইন্টারেনেটের চ্যাটরুমে প্রেম। তখন ‘অনলাইন’ শব্দটাই অধিকাংশ দর্শকের কাছে ছিল সম্পূর্ণ অজানা।
‘দিল হি দিল মে’ ছবিতে সোনালি বেন্দ্রের বিপরীতে কপালের উপর লম্বা চুল আর রোমান্টিক লুকের নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান কুণাল। কিন্তু বলিউডে কেরিয়ারে সুবিধে হয়নি। তাঁকে দেখা গিয়েছিল মূলত দক্ষিণের ছবিতেই।
কিছু ছবি বক্স অফিসে সাফল্যও পেয়েছিল। কিন্তু এক সময়ে দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতেও নায়কের ভূমিকায় তাঁর সুযোগ কমতে থাকে। তাঁর অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি ছিল ‘নানবানিন কধালি’। মুক্তি পেয়েছিল ২০০৭ সালে।
অভিনয়ের সুযোগ না পেয়ে কুণাল এক সময়ে সহকারী পরিচালক হয়ে যান। তারপর শুরু করেন প্রযোজনা। তাঁর প্রোডাকশন হাউজও ছিল।
২০০৮ সালের গোড়ায় তাঁর সংস্থা ‘যোগী’ বলে একটি ছবি করার প্রস্তুতি পর্বে ছিল। সে বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে মুম্বইয়ের ওশিয়াড়ায় নিজের ফ্ল্যাটে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
সে সময় কুণালের স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে নিজের বাবা মায়ের কাছে গিয়েছিলেন। সিলিং ফ্যান থেকে অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ প্রথম দেখতে পান উঠতি নায়িকা লাভিনা ভাটিয়া। তিনি প্রথমে দারোয়ানকে খবর দেন। তারপর জানানো হয় পুলিশকে। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে পাঠায় জুহুর কুপার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা কুণালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লাভিনাকে আটক করে পুলিশ। তিনি জানান, ছবি নিয়ে আলোচনা করতেই তিনি কুণালের ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। দশ মিনিটের জন্য বাথরুমে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন কুণাল সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছেন।
তবে তাঁর এই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কুণালের পরিবারের তরফে। কুণালের স্ত্রী অনুরাধার অভিযোগ ছিল, লাভিনার সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই তিনি বাড়ি ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে কুণালের উত্তপ্ত বাদানুবাদও হয়েছিল বলে তদন্তে জানতে পারে পুলিশ। ছেলের আত্মহত্যার তত্ত্ব মানতে রাজি ছিলেন না কুণালের বাবাও। তাঁর অভিযোগ, কুণালের দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
কিন্তু লাভিনার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। তদন্তকারীরা তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মোটিভও খুঁজে পাননি। সে সময় কুণলারে ফ্ল্যাটে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি উপস্থিত থাকারও প্রমাণ মেলেনি। তা ছাড়া ঘটনার কয়েক মাস আগে কুণাল একবার হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন।
তাঁর রহস্যমৃত্যুর তদন্ত করে সিবিআই। সুইসাইড নোট পাওয়া না গেলেও তাঁর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলেই চিহ্নিত করা হয়। এমস-এর বিশেষজ্ঞরাও তাঁর নিথর দেহ পরীক্ষা করে আত্মহননের কথাই জানান।