দু’টিতে। অসমের ধেমাজি জেলার জোনাইয়ে। — নিজস্ব চিত্র
মাথায় কালো ব্যান্ডানা, চোখে রোদচশমা। এক গাল দাড়ি। পরনে কালো চেক শার্ট। খাকি রঙা প্যান্ট। লোকটি স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে ধাবায় খেতে ঢুকলেন। আশপাশে ভিড় নেই তেমন। লোকটির সঙ্গে অবশ্য কয়েক জন দেহরক্ষী। ধাবার মালিক-মালকিনরা বুঝেছিলেন বাইরে থেকে নামকরা কেউ এসেছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু পর্দার ভুবন, পিকে বা মহাবীর সিংহ ফোগতকে প্রথম বার দেখে চিনতে পারেননি কেউই।
একই অবস্থা ডিব্রুগড় থেকে ধেমাজি—সর্বত্র। হাতেগোনা দেহরক্ষী নিয়ে অসমে ঘুরলেন আমির খান। অথচ প্রথমটায় টেরই পায়নি আম জনতা বা সংবাদমাধ্যম! নিজের ছবির জন্য ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর আগেও প্রচারে গিয়েছেন ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট'। চমকে দিয়েছেন মানুষকে। কিন্তু এ বারের ছদ্মবেশ বা গোপনীয়তার কারণটা ছিল একটু অন্য। আসলে প্রচার থেকে দূরে, সপরিবার নির্ঝঞ্ঝাটে ঘুরতে চেয়েছিলেন আমির। তাই এত লুকোচুরি। শেষমেশ বগিবিলে ধরা পড়ে গেলেন তিনি। জনাইয়ের ধাবায় পরিচয় বোঝার পরেই শুরু হল নিজস্বীর আবদার। পর্দার ‘মহাবীর সিংহ ফোগত’কে জড়িয়ে ধরতে থাকেন সকলে। পাশে স্ত্রী কিরণ ছিলেন। তবে হাসি মুখে, নীরব দর্শক হয়ে। চিনে ফেলার পরে আমির আর কিরণকে ‘গামোছা’ দিয়ে বরণও করে নেওয়া হয়।
পুলিশ-প্রশাসনকে এক রকম অন্ধকারে রেখেই গোপনে দ্বিতীয় বার অসমে এলেন আমির খান। ২০১৩-তে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আমির কাজিরাঙা সফরে এসেছিলেন। সপরিবার। তখন তাঁকে নিয়ে উন্মাদনা চরমে ওঠে। বেড়ানোর আনন্দই মাটি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তখনই ফের অসম আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত কাল ডিব্রুগড় বিমানবন্দরে নামেন আমির। সঙ্গে স্ত্রী কিরণ রাও ও তাঁদের পুত্র আজাদ রাও খান। রাতটা ডিব্রুগড়ে কাটিয়ে আজ সকালে বগিবিল থেকে নৌকায় উঠে জনাই যান আমির। সেখান থেকে সড়কপথে যান অরুণাচলপ্রদেশের পাসিঘাট। তাঁর বেড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকে বেশি কাউকে জানানো হয়নি। পুলিশ জানায়, আমির একেবারে ব্যক্তিগত সফরে এসেছেন। তাই সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন। মাত্র কয়েক জন তাঁর এই সফরের কথা জানতেন। একটি অসমিয়া উপজাতি পরিবার অবশ্য তাঁদের সঙ্গ দিচ্ছে। পাসিঘাট থেকে আমিরদের মেচুকা যাওয়ার কথা। ৭ থেকে ৯ নভেম্বর মেচুকায় ‘অ্যাডভেঞ্চার ফেস্টিভ্যাল’ হওয়ার কথা। সেখানে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর খেলার পাশাপাশি থাকছে ‘নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া ফ্যাশন উইক’ও। গুজব, তত দিন আমির সেখানেই থাকবেন। উৎসবের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা পরিষদীয় সচিব পাসাং ডি সোনা অবশ্য আজ সকালে স্পষ্টই বলেন, ‘‘আমিররা সন্ধ্যার মধ্যে মেচুকা পৌঁছবেন। তবে এটা নেহাতই তাঁদের পারিবারিক ভ্রমণ। মেচুকা এলেও উৎসব পর্যন্ত তাঁরা থাকবেন কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়।’’ খান পরিবারের পরবর্তী গন্তব্যগুলিও পুরোপুরি গোপন রাখা হয়েছে।