আচ্ছা, ধুতি পরে দৌড়ঝাপ করলেন কী করে বলুন তো?
দৌড় কী বলছেন! প্রথমে বলুন হাঁটলাম কেমন করে (হাসি)! দৌড়নো তো দূরের কথা, ধুতি পরে হাঁটাও যায় না। তিন-চার সপ্তাহ তো লেগেছিল শুধু ধুতি পরার মেকানিজমটা বুঝতে। এক মাসের পর মোটামুটি আয়ত্তে এসে যায়। পরে ধুতিতে এত অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে, শ্যুটের পর প্যান্ট পরতে অসুবিধা হত। ধুতির ওই খোলামেলা ব্যাপারটা তো আর জিন্স-ট্রাউজার্সে পাওয়া যাবে না...
তা, ধুতি খুলে যাওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি?
ঘটেনি আবার... তবে একটাই রক্ষে সে সব ঝামেলা ড্রেসিং রুমে হয়ে গিয়েছে। সেটে কোনও দিন বেকায়দায় পড়তে হয়নি। আসলে ওই তিন-চার সপ্তাহের প্র্যাকটিসটা খুব কাজে দিয়েছে। আর অসম্ভব সাহায্য করেছে দিবাকর (পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়)। প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি ব্যাপার এমন ভাবে দেখিয়ে দিত যে, শ্যুটিং একবার শুরু হয়ে গেলে আর পোশাক নিয়ে ভাবতে হত না।
পোশাক নিয়ে না ভাবলেও বাঙালি আদবকায়দা নিয়ে তো ভাবতে হয়েছে?
সে তো হয়েছে। আমি আর দিবাকর রেকি করতে কলকাতা গিয়ে প্রায় চার-পাঁচ মাস কাটিয়েছিলাম। ভাল করে লক্ষ করেছি বাঙালিদের হাঁটাচলা, কথাবার্তা... আসলে আমরা যে সময়টাকে ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’তে ধরতে চেয়েছি, সেটা এখন পুরোপুরি না পাওয়া গেলেও বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা বোঝার জন্য রিসার্চে ওই সময়টা দিতেই হত। আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি তার থেকে বাঙালি আদবকায়দা তো পুরোপুরি আলাদা...
আপনি ‘চিড়িয়াখানা’ দেখেছেন? সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় যাতে উত্তমকুমার ব্যোমকেশ হয়েছিলেন...
হ্যাঁ, দেখেছি। তবে ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’র শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পর। দিবাকর সেটাই চেয়েছিল। উত্তমকুমার কী রজিত কপূর— কারও ছায়া যেন আমার চরিত্রের মধ্যে দেখা না যায়। (হেসে) আমি তো মনে হয় ছিয়াত্তরতম ব্যোমকেশ। তবে লক্ষ করলে দেখবেন প্রত্যেকটা ব্যোমকেশ কিন্তু অন্যটার চেয়ে আলাদা। সেটাই পরিচালকরা চান। আর অভিনেতাদের উচিত পরিচালকের সেই ভাবনাটাকে পর্দায় তুলে ধরা। সে জন্যই রেকিতে অতটা সময় দিয়েছি। কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ছদ্মবেশে ঘুরেছি। কফি হাউজ, লালবাজার থেকে চায়না টাউন, বোসপুকুর কিচ্ছু বাদ দিইনি। রাস্তার দোকানে বেঞ্চে বসে চা খেয়েছি। লক্ষ করেছি বাঙালিরা কেমন চা খাওয়ার সময় বাঁ-পায়ের উপর ডান-পা ক্রস লেগড্ হয়ে বসে, ওটা কিন্তু অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। এই রকম ছোট ছোট ইউনিক বাঙালিয়ানা বোঝার চেষ্টা করেছি।
ট্রেলারে আপনার আর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের চুমুর দৃশ্য নিয়ে তো বেশ আলোচনা হচ্ছে...
হ্যাঁ, এত দিনে আমিও প্রত্যেকটা ইন্টারভিউতে অপেক্ষা করি কখন এই প্রসঙ্গটা আসবে...
আমার কিন্তু একটা অন্য প্রশ্ন আছে...
আচ্ছা... করুন...
‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’য়ে ২৭ বার, ‘পিকে’তে অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে ‘লিপ লক’, ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’তেও আবার— আপনি কি বলিউডে পরবর্তী ইমরান হসমি?
হা হা হা হা। এটা ভাল প্রশ্ন। হলে খারাপ হয় না। চুমু খেতে তো ভালই লাগে। উদাহরণগুলো শুনে কিন্তু নিজেকে বেশ একটা চুমু স্পেশালিস্ট বলে মনে হচ্ছে।
আচ্ছা, ‘পিকে’র ট্রেলারে, টিজারে, গানে, আপনার উপস্থিতি দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন পর্দাতেও অনেকটা সময় থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে একেবারে উল্টোটা হয়েছে। আপনার নিজের খারাপ লাগেনি?
না না না... একদম না। আমি তো স্ক্রিপ্টটা আগেই পড়েছিলাম। জানতাম আমি পর্দায় কত সময় থাকছি। আমার কোনও খারাপ লাগা নেই। চেয়েছিলাম হিরানিজি (রাজু হিরানি)-র সঙ্গে কাজ করতে। সেটা হয়েছে। এটাই সব থেকে বড় কথা। আর স্ট্যানিস্লোভস্কির একটা কথা আছে, ‘ছোট রোল বলে কিছু হয় না’— এই কথাটা আমার জীবনের মোটো। আমি কোনও রোলকে তার দৈর্ঘ্য দিয়ে মাপতে চাই না।
আপনার কথাবার্তা কিন্তু বেশ পরিণত। ট্যুইটার বায়োতে সক্রেটিসের উক্তি। ২৯ বছর বয়সে এগুলো এল কী করে?
হয়তো স্ট্রাগল শিখিয়েছে। দেখুন, আমি পটনার ছেলে। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি। অভিনয় করব মনে করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকেও বেরিয়ে এসেছি। অনেক খারাপ সময় দেখেছি। একটা বার্গার খেয়ে সারাদিন কাটিয়েছি। অনেক দিন না খেয়েও...
আপনার একটা সাক্ষাৎকারে পড়েছি আপনি বলেছেন ‘সম্পর্ক আর টাকা ছাড়া বলিউডে প্রতিষ্ঠা পাওয়া শক্ত’...
সে তো এখনও বলি। আমি তো নিজেই সেটা প্রত্যক্ষ করেছি। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কোনও কাকা-দাদা-বাবা ছিল না, টাকাও ছিল না যে একটা সিনেমা প্রোডিউস করে ফেলব। কখনও কখনও সেটা খুব খারাপ। ট্যালেন্টের বদলে যখন অন্য ফ্যাক্টরগুলো প্রাধান্য পেয়ে যায়— সেটা দেখতে খুব খারাপ লাগে। কান্না পায়।
বরুণ ধবন বা অর্জুন কপূরকে দেখে খারাপ লাগে?
না না। ওরা তো ট্যালেন্টেড। ‘বদলাপুর’য়ে বরুণ কী ভাল অভিনয় করেছে! আমার কোনও খারাপ লাগা নেই ওদের নিয়ে। যাই হোক, একটা ব্যাপার বুঝেছি, কোনও বিষয়ে প্যাশনেট হলে, একদিন না একদিন সেটা লোকে বুঝতে পারবে।
আপনি কীসে সব থেকে বেশি প্যাশনেট?
(একটু ভেবে) হিউম্যান ইমোশন। মানুষের অনুভুতিগুলো বুঝতেই সব থেকে ভাল লাগে। অভিনয়েও সেটা কাজে লাগে। এটা ছাড়া নাচ, ব্ল্যাক কফি আর সিগারেট...
আর ক্রিকেট?
ওহ্, হ্যাঁ হ্যাঁ, ওটা তো আছেই। ইন্ডিয়ার প্রত্যেকটা ম্যাচ দেখছি। ক্রিকেট না দেখলে আমার ভাতও হজম হয় না।
‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তে ধোনির রোলটা করাও কি সেই প্যাশন থেকে?
ক্রিকেট অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। তবে চিত্রনাট্যটাও খুব ভাল লেগেছিল। ‘কাই পো ছে’র পরে আবার ক্রিকেটার। তবে ধোনির ছবিটা তো একেবারে প্রিলিমিনারি স্টেজে আছে, ওটা নিয়ে এর থেকে বেশি কিছু না বলাই ভাল।
ঠিক আছে, শেষ প্রশ্ন করছি। আপনি তো নিজের সম্পর্ক নিয়ে কোনও রাখঢাক করেন না। শোনা যাচ্ছে মাস কয়েকের মধ্যেই অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে আপনার বিয়ে হতে চলেছে। ছবির প্রোমোশন, নাকি বিয়ের কেনাকাটা— কীসে এখন বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে?
(হেসে) অবশ্যই মার্কেটিং।