Celebrity Interview

যে দিন একঘেয়েমি চলে আসবে, সে দিন একেনবাবুর চরিত্র থেকে সরে দাঁড়াব: অনির্বাণ

বছর শেষে আবার পর্দায় একেনবাবু। ‘টুংকুলুং-এ একেন’ ওয়েব সিরিজ় মুক্তির প্রাক্কালে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি চরিত্রাভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:০৭
Share:
A candid chat with Tollywood actor Anirban Chakrabarti before the release of his new Eken web series

অনির্বাণ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

শুধু একেন নয়, এই মুহূর্তে নানা স্বাদের চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী। কিন্তু তার পরেও তাঁর কাছে একেনবাবুর পাল্লা ভারী। ঘড়ি ধরে সঠিক সময়ে তিনি হাজির। সাক্ষাৎকার দিতে বসে সোজাসাপটা কথা বলাই তাঁর পছন্দ। একেনবাবুর নতুন ওয়েব সিরিজ় ‘টুংকুলুং-এ একেন’ মুক্তির আগে সম্প্রতি এক সকালে পাওয়া গেল অনির্বাণকে। কফির কাপে চুমুক দিয়ে শুরু হল কথোপকথন।

Advertisement

প্রশ্ন: বছরের প্রথম ভাগে একেনের ছবি। বছর শেষে আবার ওয়েব সিরিজ়। আপনার মনের মধ্যে কী চলছে?

অনির্বাণ: প্রথম যখন ওয়েব সিরিজ় থেকে একেন বড় পর্দায় পা রাখে, তখন একটা আশঙ্কা ছিল যে দর্শক পছন্দ করবেন কি না। পরে সেই ভয়টা কেটে যায়। ওয়েব সিরিজ়ে দর্শক একেনকে এই নিয়ে সপ্তম বার দেখবেন। তাই বলা যায়, আমাদের চেনা মাঠ। সময়ের সঙ্গে একেনের প্রতি মানুষের ভালবাসা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে আমাদের দায়িত্ব। তাই সব মিলিয়ে আগের বারের থেকে যেন আলাদা কিছু হাজির করতে পারি সেই চেষ্টাই থাকে।

Advertisement

প্রশ্ন: এ বার তো একেনবাবুর অভিযান জঙ্গলে। ট্রেলারে আপনি সেনার পোশাকে! কী ব্যাপার বলুন তো?

অনির্বাণ: (হেসে) অনেকেই দেখছি, সমাজমাধ্যমে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছেন। একেনবাবুর তো সব কিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি। এখানেও জঙ্গলে গিয়েছে বলে সেই ভাবে ছদ্মবেশ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আরও অনেক মজার জিনিস রয়েছে, সেটা সিরিজ় দেখলে স্পষ্ট হবে।

প্রশ্ন: প্রত্যেক বার একই চরিত্রে অভিনয় করাটা কি সহজ না কঠিন?

অনির্বাণ: সময়ের সঙ্গে একেনবাবুতে আমার অভিনয়ের ধরন কিন্তু বদলেছে। সেটা না হলে আমার মনে হয়, দর্শকের কিন্তু একঘেয়েমি চলে আসত। একটু কঠিন তো বটেই। কারণ, আমার মনে হয়েছে একেনের গল্পে চরিত্রটার আবেগের কোনও জায়গা নেই। লোকটার পরিবার নেই। স্ত্রীর সঙ্গে একটু-আধটু যা কথা হয়, সেটাও মজার। একটা কেস এবং দুই সঙ্গী— এর মধ্যেই আমাকে সীমিত থাকতে হয়। অর্থাৎ অভিনেতা হিসাবে একটা বড় অংশ আবিষ্কার করার কোনও সুযোগ নেই।

‘টুংকুলুং-এ একেন’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে অনির্বাণ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনার একঘেয়েমি আসেনি?

অনির্বাণ: এখনও পর্যন্ত আসেনি। এখনও চরিত্রটার ছোট ছোট দিকগুলোকে আবিষ্কার করছি। উপভোগ করছি। (একটু ভেবে) যে দিন মনে হবে আমার একঘেয়েমি চলে এসেছে, সে দিন একেন চরিত্রে অভিনয় বন্ধ করে দেব।

প্রশ্ন: সম্প্রতি অনির্বাণ ভট্টাচার্যও ব্যোমকেশ চরিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

অনির্বাণ: ও কিন্তু একঘেয়েমির কথা বলেনি। সরে যাওয়ার নেপথ্যে ও কিন্তু খাঁটি যুক্তি দিয়েছে। ও বলেছে অভিনেতা হিসাবে চরিত্রটাকে ওর আর নতুন কিছু দেওয়ার নেই।

প্রশ্ন: আপনি কি অনির্বাণের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন?

অনির্বাণ: এটা ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেটা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু এক জন অভিনেতা হিসাবে ওর এই দর্শনের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। প্রযোজক বলছেন এবং শুধুই টাকার কথা ভেবে একই চরিত্রে দিনের পর দিন অভিনয় করে চলেছি, এটা ঠিক নয়। অনেকেই এটা করতে পারে না। অনির্বাণ যে এটা করতে পেরেছে সেটা খুবই আনন্দের বিষয়।

ব্যোমকেশ চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকটা দেরিতে এসেছেন। প্রথম চরিত্রেই পরিচিতি এবং অন্যান্য চরিত্রের পরিবর্তে এখনও মানুষ একেনের জন্যই আপনাকে চেনেন। অভিনেতা হিসাবে কি কখনও খারাপ লাগে?

অনির্বাণ: এটা আমিও ভেবে দেখেছি। কিন্তু কখনও খারাপ লাগেনি। শুরুতে খুবই ভাল লাগত। কারণ মানুষ আমাকে চিনতে পারছেন। মাঝে একটা সময় মনে হয় যে, আমি তো এত কাজ করছি। সেখানে একেনই কি আমার একমাত্র পরিচয়! তারও পরে বুঝতে পারলাম, এটা আসলে মানুষের ভালবাসার প্রকাশ। আমি কিন্তু অন্য কোনও চরিত্রে ন’বার অভিনয় করিনি। দর্শক আমাকে সেখানে দেখেছেন এবং পছন্দ করেছেন, এটাও তো ভেবে দেখতে হবে।

প্রশ্ন: একেন ছাড়া অন্য প্রোজেক্টে লাগাতার আপনাকে খল চরিত্রে দেখা যাচ্ছে এমনকি ‘প্রধান’ ছবিতেও আপনি খলনায়ক!

অনির্বাণ: (হেসে) প্রতিটা চরিত্র কিন্তু একে অন্যের থেকে আলাদা। ‘মুখোশ’, কাকাবাবু, ‘লালবাজার’— সব চরিত্রগুলো কিন্তু এক রকমের নয়। প্রতিমের (পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্ত) সঙ্গে তিনটে কাজ করেছি। তিনটেই আলাদা ধরনের।

প্রশ্ন: তার মানে পরিচালকদের সিদ্ধান্তে আপনি খুশি?

অনির্বাণ: অবশ্যই। একেনবাবু সফল হওয়ার পর তখন ওর কাছাকাছি চরিত্রের প্রস্তাব আসত। এখন সেটা আর হয় না। প্রযোজকেরা সেখানে আমাকে বিভিন্ন রকমের চরিত্রের প্রস্তাব দিচ্ছেন বলেও ভাল লাগে।

প্রশ্ন: বড় পর্দায় একেনবাবু সফল। এ দিকে বগলামামার থেকে দর্শক মুখ ফেরালেন। কারণটা কী?

অনির্বাণ: আমি এখনও ছবিটা দেখিনি। কারণটা আমি জানি না। একেনবাবু চরিত্রটা আগে দর্শক ওয়েব সিরিজ়ে দেখেছিলেন বলে হয়তো আমাদের একটু সুবিধা হয়েছিল। বগলামামার তো এটা প্রথম ছবি। খরাজদার (খরাজ মুখোপাধ্যায়) মতো গুণী অভিনেতা রয়েছেন মুখ্য চরিত্রে। আরও বেশি সংখ্যায় দর্শক হওয়া উচিত ছিল। খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

‘টুংকুলুং-এ একেন’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে সোমক এবং সুহোত্র। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ‘প্রধান’-এ আপনিই তো প্রধান। ছবির পোস্টারে দেবের সঙ্গে আপনার ছবি। দেবের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কী রকম?

অনির্বাণ: (হেসে) কেউই প্রধান নয়, সকলেই এই ছবিতে প্রধান। ছবির ট্রেলার দেখে আশা করি, দর্শক এত ক্ষণে সেটা টের পেয়েছেন। চিত্রনাট্য পড়ার সময়ে দেবের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। এমনিতেই দেব সম্পর্কে আমার আগে থেকেই একটা ইতিবাচক ধারণা ছিলই। ওর সঙ্গে কাজ করে সেটা আরও বেড়েছে।

প্রশ্ন: একেন ছাড়াও জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দুটো চরিত্রের মধ্যে আপনার কাছে প্রিয় কোনটি?

অনির্বাণ: (হেসে) একেন ন’বার, জটায়ু তিন বার। তাই সংখ্যার বিচারে আমি একেনকেই এগিয়ে রাখব। আরও একটা কারণ, এখনও পর্যন্ত একেন চরিত্রে একমাত্র আমি অভিনয় করেছি। জটায়ু চরিত্রে কিন্তু আরও অনেকে অভিনয় করেছেন।

প্রশ্ন: এর পর কী কী কাজ আছে?

অনির্বাণ: জয়দীপদারই (পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়) ‘অপরিচিত’ ছবিটা রয়েছে। ‘চালচিত্র’ রয়েছে। হিন্দিতে একটা কাজ তৈরি আছে। সব মিলিয়ে পাঁচ-ছ’টা ছবি মুক্তির অপেক্ষায়।

প্রশ্ন: এখন আপনার এই কাজের এই ব্যস্ততা, সেটাকে কতটা উপভোগ করেন?

অনির্বাণ: খুবই। বিগত পাঁচ-ছ’মাসে মেরেকেটে হয়তো দু’সপ্তাহ ছুটি পেয়েছি। আমি তো এই পেশায় একটা অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। কারণ, আমার চারপাশের পরিচিত কেউই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত নন। অভিনয় করতে ভাল লাগে, এটুকুই। খুব যে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, সেটাও নয়। সেখানে এখন মঞ্চ থেকে শুরু করে ছবি, ওয়েব সিরিজ়— সব মাধ্যমে অভিনয় করতে পারছি, সেটা ভাল লাগছে এবং অনেক কিছু শিখতে পারছি।

প্রশ্ন: অল্প সময়ে এতটা জনপ্রিয়তা। কখনও মনে হয়েছে যে, আপনি ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকের হিংসের পাত্র হয়ে উঠেছেন?

অনির্বাণ: আমি তো শুরু থেকেই এক জন ‘আউটসাইডার’। এত কাজ করেছি তো সুযোগ পেয়েছি বলে। আর যাঁরা সুযোগ দিয়েছেন, তাঁরা তো কেউ আমার পরিচত ছিলেন না। ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও পর্যন্ত আমি যে ভালবাসা পেয়েছি, তাতে এ রকম কোনও নেতিবাচক ধারণা আমার মনে দানা বাঁধেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement