Celebrity Interview

গা থেকে ‘মশালা ছবি’র ছাপ্পা মুছতে দু’বছর লেগেছে, বললেন ‘দাবাড়ু’র পরিচালক পথিকৃৎ

‘কাছের মানুষ’-এ প্রসেনজিৎ-দেব। ‘দাবাড়ু’ দর্শক পছন্দ করছেন। ‘শাস্ত্রী’-তে মিঠুন চক্রবর্তী। ইন্ডাস্ট্রিতে কি শত্রুর সংখ্যা বাড়ল? উত্তরে কী বললেন পরিচালক? শুনল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ১৫:৫৯
Share:

পরিচালক পথিকৃৎ বসু। ছবি: সংগৃহীত।

ক্রিকেট বা ফুটবলের পরিবর্তে দাবা! ঝুঁকি নিলেও ‘দাবাড়ু’ ছবিটি পরিচালক পথিকৃৎ বসুর পায়ের নীচের জমি শক্ত করেছে। এক সময়ের রিমেক ছবির পরিচালক এখন মৌলিক গল্পে বিশ্বাসী। ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের লড়াই থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবন এবং সর্বোপরি তাঁর ‘ইমেজ’ নিয়েও আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় অকপট পরিচালক।

Advertisement

প্রশ্ন: টলিপাড়ার একাংশ বলছে আপনি নাকি এখন পাকা দাবাড়ুহয়ে উঠেছেন!

পথিকৃৎ: এই রে! কোন অর্থে প্রশ্নটা করলেন, তার উপর উত্তরটা নির্ভর করবে। তবে এটা ঠিক, আগে যেটুকু খেলাটা জানতাম, এই ছবিটার পর দাবা নিয়ে আমার জ্ঞান অনেকটাই বেড়েছে।

Advertisement

প্রশ্ন: দাবাড়ু প্রেক্ষাগৃহে দর্শক দেখছেন। আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

পথিকৃৎ: একাধিক শো হাউসফুল। নিজে বেশ কিছু হলে গিয়েছি। দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে আমি খুব খুশি। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রশ্ন: আপনি বাণিজ্যিক ছবি থেকে উঠে এসেছেন। হঠাৎ দাবা নিয়ে ছবি কেন করতে গেলেন কেন?

পথিকৃৎ: আসলে উইন্ডোজ়-এর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজের কথা চলছিল। ওদের একটা নিজস্ব দর্শক রয়েছে। শিবুদাই (ছবির অন্যতম প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) আমাকে সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বলেছিলেন। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে আমারও বিষয়টা আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। পরে সূর্যের মুখ থেকে ওর জীবনের লড়াইয়ের গল্প শুনে আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, এ রকম একটা গল্প নিয়ে ছবি হতেই পারে।

প্রশ্ন: কিন্তু দাবা তো ক্রিকেট ফুটবলের তুলনায় কম জনপ্রিয়।

পথিকৃৎ: আমি একটু অন্য ধরনের গল্প বলতে ভালবাসি। ফুটবল বা ক্রিকেট নিয়ে ছবি তৈরি হলে হয়তো এই ‘ইউএসপি’টা থাকত না। শিবুদা আমাকে এক বার বলেছিলেন, ‘‘ছবি কখনও ব্যালকনির কথা চিন্তা করে তৈরি করবি না, সব সময়ের রিয়ার স্টলের দর্শকের কথা ভেবে তৈরি করবি।’’ এই কথা মেনে সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারেন, সেই সরল দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ছবিটা তৈরি করেছি। অথচ কেউ ছবিটা দেখে বলতে পারবেন না যে, একটা চালও ভুল দেখানো হয়েছে।

প্রশ্ন: শুনেছিলাম এই ছবিতে ভাইচুং ভুটিয়ার ক্যামিয়ো চরিত্রে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। হল না কেন?

পথিকৃৎ: একটা দৃশ্যে ওঁকে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা শেষ পর্যন্ত হয়নি।

প্রশ্ন: বাণিজ্যিক ছবির হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন। আজকে পরিচালক হিসাবে নিজের মধ্যে কতটা বদল এসেছে বলে মনে হয়?

পথিকৃৎ: পরিচালক রবি কিনাগীর সহকারী ছিলাম। শ্রীকান্তদা (প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা) আমাকে যখন ছবির প্রস্তাব দেন, তখন আমার মাত্র ২৩ বছর বয়স। ইন্ডাস্ট্রির বাইরের লোক আমি। তখন আমার পক্ষে ‘দাবাড়ু’ বা ‘শাস্ত্রী’ করা সম্ভব ছিল না। ইন্ডাস্ট্রি সব সময় একটা প্রচলিত ধারাকে অনুসরণ করে। তাই আমিও রিমেক ছবি করেছিলাম।

প্রশ্ন: কিন্তু এখন হরিপদ ব্যান্ডওয়ালারকথা ভাবলে কি...

পথিকৃৎ: আমি ওই ছবিটা নিয়ে গর্ববোধ করি। শিবুদা এক বার বলেছিলেন, ‘‘তুই কী এমন ছবি তৈরি করেছিস রে, যেটা ‘হামি’র টিআরপি-কে ছাপিয়ে যেতে পারে।’’ কিন্তু দেখুন, ছবিটা এখনও টিভিতে দুপুরেও সব থেকে বেশি টিআরপি দেয়! আমাকে অনেকেই একাধিক বার ছবিটার সিক্যুয়েল করতে বলেছেন। কিন্তু রাজি হইনি।

প্রশ্ন: কেন?

পথিকৃৎ: কারণ ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’ এই নামটা আমার জীবন থেকে মুছতে ২ বছর সময় লেগেছে!

প্রশ্ন: সে কী! এক দিকে বলছেন গর্বিত। অন্য দিকে ছবি ভুলতে চাইছিলেন।

পথিকৃৎ: কারণ আমি যে অন্য ধরনের ছবিও তৈরি করতে পারি, সেটা কেউ বিশ্বাস করত না।

প্রশ্ন: তার মানে সেই দুবছর তো অনেকটা লড়াই করতে হয়েছিল?

পথিকৃৎ: কেউ দেখাই করতে চাইত না। অনেক প্রযোজনা সংস্থার বাইরে সারা দিন বসে থেকেও কেউ দেখা করেনি। বয়স কম। হয়তো ভরসা পেতেন না। এর জন্য আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। কিন্তু ওই সময়ে ইন্ডাস্ট্রির গুটিকয়েক মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। সেটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।

‘দাবাড়ু’ ছবির সেটে পরিচালকের সঙ্গে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: পরিচালক হতে এসেছিলেন। অথচ আপনার কাজই আপনার পথের কাঁটা! খারাপ লাগত না?

পথিকৃৎ: অস্বীকার করব না, খুব দুঃখ হত। দেখুন, মশালা ছবি তখন যাঁরা তৈরি করতেন, তাঁদের মধ্যে এখন অনেকেই কিন্তু আর দৌড়ে নেই। বাণিজ্যিক ছবি এখনও দর্শক দেখেন। টিভিতে ভাল টিআরপি দেয়।

প্রশ্ন: এখন তা হলে আত্মবিশ্বাস কতটা বেড়েছে?

পথিকৃৎ: একটু হলেও বেড়েছে। এখন অনেকেই একটু-আধটু গুরুত্ব দেন। ভাল লাগে। আমি এখনও বলছি, আমার কাছে গল্পের কমতি নেই। বাজি ধরে বলতে পারি, এখনও কোনও প্রযোজক আমার সঙ্গে আলোচনায় বসলে আমি ১০০টা গল্প বলব এবং প্রত্যেকটা গল্পেই তাঁকে ১৫ মিনিট করে বসিয়ে রাখব! কিন্তু এই ১৫ মিনিটের জন্য আমি দু’বছর ঘুরেছিলাম।

প্রশ্ন: নিশ্চয়ই গর্ব হয়?

পথিকৃৎ: গর্ব হয় না। তবে বুঝতে পারি, আরও কিছু ছবি পরিচালনা করতে পারব।

প্রশ্ন: এখন আবার প্রস্তাব দেওয়া হলে মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি তৈরি করবেন?

পথিকৃৎ: দু’টি ফ্যামিলি ড্রামা চলছে বলেই সব ছবি এখন ঘরের মধ্যে শুট করতে হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু সেখানে আবেগ থাকতে হবে। গল্পে বাঙালিয়ানা থাকতে হবে। তা না হলে, যিনিই পরিচালনা করুন না কেন, ছবিটা চলবে না।

প্রশ্ন: কাছের মানুষ’-এ প্রসেনজিৎ-দেব। দাবাড়ুদর্শক পছন্দ করছেন। শাস্ত্রী ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার শত্রুর সংখ্যা বাড়ল?

পথিকৃৎ: (একটু ভেবে) আমি এই ভাবে ‘শত্রু’ বিচার করি না। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে বহু বিপরীত মেরুর মানুষকে কাছাকাছি আসতে দেখেছি। রাতারাতি বহু সমীকরণ পাল্টে যেতে দেখেছি। তাই শত্রু কেউ হলেও সেটা সাময়িক। দিনের শেষে সাফল্যই সব মাপকাঠি ঠিক করে দেয়। সাফল্য থাকলে সব কিছু থাকে, না হলে কিছুই থাকে না।

প্রশ্ন: একটু অন্য প্রসঙ্গে আসছি। বক্স অফিসে কিস্তিমাত করলেন। কিন্তু প্রেমজীবনে কিস্তিমাত করতে পারছেন না কেন?

পথিকৃৎ: (হেসে) কারণটা জানি না। গত দেড় বছর আমি ‘দাবাড়ু’ নিয়ে ব্যস্ত। তার পর মিঠুনদাকে নিয়ে ‘শাস্ত্রী’। তাই এখন প্রেম করার সময় নেই।

প্রশ্ন: এ বার তা হলে চেষ্টা করবেন?

পথিকৃৎ: (হাসত হাসতে) আমি তো নব্বই দশক জুড়ে বড় হয়েছি, তখন ছবিতে দেখানো হত, জীবনে প্রেম একটাই হয়। প্রকৃত প্রেম ফিরে ফিরে আসে। আমরা হয়তো সেই ধারণাতেই বিশ্বাস করি।

প্রশ্ন: তার মানে জীবনে প্রেম এসেছিল। কারও প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

পথিকৃৎ: হয়েছে। কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

প্রশ্ন: এই যে ইন্ডাস্ট্রিতে শোনা যায়, আপনি নাকি অভিনেত্রীদের বিভিন্ন ছুতোয় ফোন করে বিরক্ত করেন। এটা কি অপপ্রচার?

পথিকৃৎ: (জোর গলায়) বাজে কথা! যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি বা করতে চাই, তাঁদের সঙ্গেই কথা বলেছি। আমার তো অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। আমি এই বিষয়গুলি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। এত অল্প বয়সে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ছবি করে ফেললেন। ওঁর থেকে কী শিখলেন?

পথিকৃৎ: সহকারী পরিচালক হিসেবে যখন কেরিয়ার শুরু করি, তখন যে দিন ফ্লোরে প্রথম বার মিঠুনদাকে চিত্রনাট্য পড়ে শোনাই সত্যি বলছি আমার পা একটু কেঁপে যায়। একটু ‘নার্ভাস’ হয়ে পড়ি। জীবনে একবারই এ রকম ঘটেছিল! সেই ছবির নাম ‘নকশাল’। এ বার ‘শাস্ত্রী’-তে দাদাকে পরিচালনা করা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা হয়ে রয়ে যাবে। মিঠুনদা যুক্তি ছাড়া অভিনয় করেন না। দাদার মজা হল, শুরুতে উনি ফ্লোরে সব কিছুতেই ‘না’ বলবেন। কিন্তু শেষে প্রতিটা জিনিস করে দেবেন। কেউ ওঁর উপর রেগে থাকতে পারবেন না। এই বয়সেও মিঠুনদার সঙ্গে কোনও পরিচালক এক বার কাজ করলে আমি নিশ্চিত, তিনি বার বার কাজ করতে চাইবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement