মনামী ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তবুও মনামী ঘোষের কাছে ছবির প্রস্তাব নেই! সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পদাতিক’ ছবিতে তিনি মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের চরিত্রে। সমাজমাধ্যম বনাম অভিনয়, শখ-শৌখিনতা থেকে সংসার। সম্প্রতি এক সকালে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তর দিলেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: অনেক দিন পর আপনি আবার কোনও ছবির প্রচারে।
মনামী: (হেসে) শুধু ছবি নয়, অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও প্রচার করতে খুব ভাল লাগে। মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য আমি অনেক কিছু করতেই পছন্দ করি।
প্রশ্ন: এই ছবিতে আপনি গীতা সেনের চরিত্রে। ফার্স্ট লুক প্রকাশের পর থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
মনামী: দু’রকমের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। লুক দেখে একদল প্রশংসা করেছেন। আর যাঁরা ছবি দেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার ফোন করে প্রশংসা করেছেন।
প্রশ্ন: প্রস্তাব পাওয়ার পর মনের অবস্থা কী রকম ছিল?
মনামী: সৃজিতদাই আমাকে ফোন করে অফিসে আসতে বলেছিলেন। তার পর শুনলাম, মৃণাল সেনের স্ত্রীর চরিত্রে তিনি আমাকে ভেবেছেন! খুব অবাক হই। আমি কেন? সম্ভবত, ছবির বাকি অভিনেতারা চূড়ান্ত হয়ে যান, শুধু গীতা সেনের চরিত্রাভিনেত্রীর নির্বাচন বাকি ছিল। শুনেছিলাম, সৃজিতদার এক সহকারীই নাকি আমার নাম প্রস্তাব করেন।
‘পদাতিক’ ছবির একটি দৃশ্যে মনামী ঘোষ এবং চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: চরিত্রের জন্য আপনি নিজেকে কী ভাবে তৈরি করেছিলেন?
মনামী: সৃজিতদা কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। যেমন, মৃণাল সেনের যে ছবিগুলিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন। মৃণাল সেনের সঙ্গে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার ছিল। সেটা দেখেও কিছুটা সুবিধা হয়। বাকিটা অন্যদের থেকে শুনে, বুঝে তার পর অভিনয় করেছি।
প্রশ্ন: শুটিং ফ্লোরে চঞ্চল চৌধুরীকে কেমন লাগল?
মনামী: খুবই ভাল মানুষ। সব সময়ে তিনি চরিত্রের মধ্যে থাকতেন। ফ্লোরে শটের ফাঁকে আমরা একসঙ্গে চিত্রনাট্য পড়তাম। তবে ফ্লোরে টুকটাক আড্ডাও হত। মনে আছে, সকালে ফ্লোরে এসেই আমার দিকে তাকিয়ে বলতেন, ‘‘গুড মর্নিং, গিন্নি। কেমন আছ?’’
প্রশ্ন: অঞ্জন দত্তের ‘চালচিত্র এখন’ দেখেছেন?
মনামী: না, এখনও দেখা হয়নি।
প্রশ্ন: তুলনার ভয় পাননি?
মনামী: দর্শক এখন সব কিছুতেই জাজ করেন। সেখানে এত বড় একটা ছবিতে অভিনয় করলাম। নিশ্চয়ই তুলনা হবে। তবে আশা করি, দর্শকের পছন্দ হবে।
প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হয়েছিল?
মনামী: (হেসে) সৃজিতদা খুব কড়া। তিনি যেটা চাইবেন, সেটাই ফ্লোরে হবে। আমি তো বলেছিলাম যে, ফ্লোরে ওঁর বকাবকি করার গল্প আমি জানি। তখন সৃজিতদা বলেন, ‘‘তুই লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে ফ্লোরে এলেই আর বকাবকি করব না।’’ অর্থাৎ, প্রস্তুতি নিয়ে ফ্লোরে আসতে হবে। আমি কিন্তু লক্ষ্মী হয়েই শুটিং করেছি। তাই এতটুকুও বকুনি খেতে হয়নি। প্রথম দিন হাসপাতালের একটা দৃশ্যের শুটিং ছিল। কয়েকটা শটের পর সৃজিতদা নিজেই বলেছিলেন যে, সব যদি ঠিকঠাক করে দিই, তা হলে তিনি আর কী করবেন। আমার কাছে এটা খুব বড় প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের প্রশংসা, সেই সঙ্গে নিজেই বলছেন, আপনি পরিশ্রমী অভিনেত্রী। তার পরেও আপনাকে এত কম ছবিতে দেখা যায় কেন?
মনামী: সেটা পরিচালকেরাই বলতে পারবেন। আমি মনে করি, আমি খুব ভাল অভিনেত্রী। ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকেরাও সেটাই মনে করেন। আমি ভাল নাচ করতে পারি। লোকে বলে আমি নাকি সুন্দরী। তা হলে নায়িকা হওয়ার জন্য আর কী চাই! তার পরেও কেন প্রস্তাব আসে না, আমিও জানতে চাই।
প্রশ্ন: আপনি কি নিজে থেকে কাজ চেয়েছেন?
মনামী: আমার পিআর খারাপ। দীর্ঘ দিন নিজে থেকে কাজ চাইতে পারতাম না। কিন্তু পরে বুঝলাম, আমি যে কাজ করতে চাই, সেটা জানানোও জরুরি। মাঝে ধারাবাহিকের জন্য একটা সময়ে অনেক কাজের প্রস্তাব ফিরিয়েছিলাম। এক বার ইন্ডাস্ট্রির এক প্রথম সারির পরিচালক বললেন যে, তিনি জানেন আমি ভাল অভিনেত্রী, কিন্তু কাজের অনুরোধ যেন না করি। বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দুর্ভাগ্য, তোকে সুযোগ দিতে পারছি না।’’
প্রশ্ন: আপনার মিউজ়িক ভিডিয়ো ও রিল ভাইরাল হতে সময় নেয় না। তাতে অভিনেত্রী মনামী কি কোথাও আড়াল হয়ে যাচ্ছেন?
মনামী: আমার সেটা মনে হয় না। কারণ, দুটো আলাদা দিক। ‘আইলো উমা বাড়িতে’ মুক্তি না পেলেও যেটা হত, এখনও অভিনেত্রী মনামী সেটাই রয়েছে। ওখানেও তো আমাকে অভিনয়ই করতে হয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু, আপনাকেও তো ‘সোশ্যাল মিডিয়া স্টার’ বলা হচ্ছে।
মনামী: আমার মনে হয়, ‘মনামী ঘোষ’ একটা ব্র্যান্ড। দর্শক সেটা পছন্দ করছেন। এই ব্র্যান্ডের অধীনে অভিনয়, গান, নাচ, ফ্যাশন— অনেক কিছু রয়েছে। এখন অনেকেই তো সমাজমাধ্যম প্রভাবী। অভিনয় না করেও তাঁরা অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে অনেক অভিনেতার থেকেই বেশি অর্থ উপার্জন করছেন। তাই কোনও অভিনেত্রী সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয় হলে তখন মানুষ হয়তো মনে করেন, তিনিও সমাজমাধ্যমের দিকেই বেশ মনোনিবেশ করছেন। গান থেকে শুরু করে ছবির ট্রেলার যখন সমাজমাধ্যমে মুক্তি পাচ্ছে, তখন দোষ নেই। এ দিকে অভিনেত্রী সমাজমাধ্যম ব্যবহার করলে, তখন তাঁকে ‘সোশ্যাল মিডিয়া স্টার’ বলা হচ্ছে! এটা তো দ্বিচারিতা!
প্রশ্ন: মাঝেমধ্যেই পোশাকের কারণে আপনাকে ট্রোলিংয়ের স্বীকার হতে হয়। কী বলবেন?
মনামী: অভিনয়ের জন্য আজ পর্যন্ত ট্রোল্ড হইনি। যাঁরা ট্রোলিং করেন, তাঁরাই কিন্তু আবার প্রশংসাও করেন। আজকের সমাজে এগুলো কোনও বড় বিষয় নয়। আমি ভাল কাজ করার চেষ্টা করি। দেখুন, আমার মনে হয়, পৃথিবীতে দুই শ্রেণির মানুষ রয়েছেন। একদল মানুষ কাজ করেন এবং সমালোচিত হন। অন্য দল বাড়িতে বসে প্রথম দলের সমালোচনা করেন! সৌভাগ্যবশত আমি প্রথম শ্রেণিতে রয়েছি।
প্রশ্ন: ‘ইরাবতীর চুপকথা’র পর বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। ধারাবাহিকে ফেরার ইচ্ছে নেই?
মনামী: এই মুহূর্তে আমি নিজেকে বিভিন্ন ভাবে এক্সপ্লোর করতে চাইছি। ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্র ছাড়া করব না। তাই রাজি হওয়ার অর্থ, মাসে ২৬ দিন সময় দিতে হবে। ধারাবাহিক থেকে বিরতি না নিলে আজকে মিউজ়িক ভিডিয়ো, ছবি, নিজের প্রযোজনা সংস্থার মতো অন্য কাজগুলো তো করতে পারতাম না! তাই আপাতত ধারাবাহিক নিয়ে কিছু ভাবছি না।
প্রশ্ন: আপনি তো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরছেন।
মনামী: (হেসে) লকডাউনের পর আমি ‘কে ড্রামা’র ভক্ত হয়ে উঠি। দেশগুলো নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনাও করি। তার পর গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছিলাম। এ বছর জাপানে। আসলে ইউরোপ আগেই ঘোরা। আর মানুষ যে জায়গাগুলোয় একটু কম ঘুরতে যান, আমি সেখানে যেতে বেশি পছন্দ করি। আমি উত্তর কোরিয়াতেও ঘুরতে যেতে চাই।
প্রশ্ন: বিয়ে কবে করছেন?
মনামী: এই মুহূর্তে কোনও পরিকল্পনা নেই (হাসি)। আমার আরও বড় বড় কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু মাঝেমধ্যেই শোনা যায়, সৈকতের (সৈকত বারুরি) সঙ্গে আপনি নাকি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন।
মনামী: আজকে যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, তার জন্য কিন্তু আমার পরিবার এবং কাছের মানুষেরা অনেক সাপোর্ট করেছেন। বিয়ে তো একটা প্রতিষ্ঠান। আমি কাজের ক্ষেত্রে নিজের দু’শো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করি। তেমনই বিয়ে করলেও কাজের মতোই আমি নিজের দু’শো শতাংশ দিতে চাই। একটু সংসার করলাম, একটু শুটিং করলাম, সেটা পারব না।
প্রশ্ন: বাড়ি থেকে চাপ আসে না?
মনামী: না। দূরসম্পর্কের আত্মীয়েরা দেখা হলে একটু-আধটু জানতে চান (হাসি)। কিন্তু আমার বাড়ি থেকে মা বা নিকট আত্মীয়দের তরফে কোনও চাপ আসে না।
প্রশ্ন: আর সৈকত কী চাইছেন?
মনামী: আমরা নিজেদের বিভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করি। বিয়ে করা, বা আমাদের সন্তান হবে— সে সব ভাবনা এখনও আমাদের আসেনি।