ডিএসপি-র গেটের সামনে প্রচারে কংগ্রেস ও সিপিএম। নিজস্ব চিত্র।
সকাল-সকাল কারখানার গেটে পৌঁছে গিয়েছিলেন দুই প্রার্থী। পথসভা করলেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। কর্মীরা কাজে ঢোকার সময়ে ভোটও চাইলেন দুর্গাপুর পশ্চিমের কংগ্রেস প্রার্থী এবং দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী।
সকাল সাড়ে ৮টার শিফ্টে সব থেকে বেশি কর্মী কাজে ঢোকেন ডিএসপি-তে। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের অনেকটা অংশে রয়েছে স্টিল টাউনশিপ। আবার দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্র এলাকায় অনেক ঠিকা শ্রমিক থাকেন। অনেক স্থায়ী কর্মীও সেখানে বাড়ি করে রয়েছেন। কংগ্রেস এবং সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার আইএনটিইউসি এবং সিটু সমর্থক শ্রমিক-কর্মীদের সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে তবে তাঁরা নিশ্চিত। তার সঙ্গে এ দিন আইএনটিটিইউসি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রচার করাও ছিল তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। গত সাড়ে চার বছরে যে ভাবে সাড়ে তিন হাজার ঠিকা শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, সেই খাঁড়া কোনও দিন তাঁদের উপরেও নেমে আসতে পারে বলে বোঝানোর চেষ্টা হয়। সে জন্যই বাম ও কংগ্রেসের প্রার্থীদের জেতানো জরুরি বলেও দাবি করা হয়।
হাতে হাত মিলিয়ে বাম-কংগ্রেসের প্রচার অবশ্য এই শহরে আগেই শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুর্গাপুর পশ্চিমের কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের সমর্থনে পদযাত্রা করে গিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। এ দিন সকাল সকাল এক সঙ্গে ডিএসপি-র গেটে পৌঁছে যান কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বনাথবাবু ও দুর্গাপুর পূর্বের সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ দেবরায়। কারখানার গেটে তাঁরা বক্তব্য রাখেন। কাজে যোগ দিতে যাওয়া কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সিপিএম নেতাদের দাবি, এ ভাবে পাশাপাশি দুই প্রার্থীর এক সঙ্গে প্রচারে জোট-বার্তা আরও জোরালো হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক জানিয়েছেন, মানুষ যা চাইছেন সে ভাবেই জোট এগোচ্ছে।
এর মধ্যে বুধবারই আবার সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার কুলটি ও দুর্গাপুরে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সভায় হাজির থাকবেন সিপিএম নেতারা। দুর্গাপুরের সভায় পাণ্ডবেশ্বরের প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় ও কুলটির সভায় আসানসোলের সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী হাজির থাকবেন। এ দিন রাহুল গাঁধীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যেরা দুর্গাপুরে সভার মাঠ পরিদর্শনে আসেন। সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা। প্রথমে গাঁধী মোড় ময়দানে সভাস্থল ঠিক হয়েছিল। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া মাঠে সভা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাহুল গাঁধী অন্ডাল বিমানবন্দরে নামবেন। সেখান থেকে তিনি প্রথমে কুলটি যাবেন। সেখানে সভা সেরে যাবেন বাঁকুড়ায়। সেখান থেকে আসবেন দুর্গাপুরে। সভা শেষে অন্ডাল থেকে দিল্লি উড়ে যাবেন। কংগ্রেস নেতারা মনে করেছিলেন, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া গাঁধী মোড় ময়দানে সভা হলে সহজেই কর্মী-সমর্থকরা পৌঁছতে পারেবন। কিন্তু এ দিন বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যেরা মাঠ পরিদর্শনের পরে জানান, আশপাশে বহুতল, শপিংমল, বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। হেলিকপ্টার নামায় অসুবিধা হতে পারে। তাই এখানে সভা করা যাবে না। এর পরেই তাঁরা যান স্টেশনের কাছে গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া মাঠে। সেখানে আশপাশে কোনও উঁচু বাড়ি নেই। মাঠটিও বড়। ঠিক হয়, সেখানেই সভা হবে।
কংগ্রেসের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী জানান, দুর্গাপুরের সভায় দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম, পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রের প্রার্থীরা থাকবেন। এর মধ্যে দু’টি কেন্দ্রের প্রার্থী সিপিএমের। তিনি বলেন, ‘‘সভায় থাকার জন্য সিপিএম নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’’ সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলটির সভায় সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী এবং দুর্গাপুরের সভায় গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় দলের তরফে উপস্থিত থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।