তৃণমূল নেত্রীকে দেওয়া শো-কজ নোটিসের জবাব কেন দেবেন মুখ্য সচিব? তীব্র সমালোচনার সুরে প্রশ্ন তুললেন নরেন্দ্র মোদীও। কৃষ্ণনগরে আজ নির্বাচনী জনসভায় মোদীর বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে ছিল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মমতার কটূক্তির তীব্র সমালোচনাও।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, কোনও দলের নেত্রীকে দেওয়া নোটিসের জবাব একজন সরকারি আমলা দিতে পারেন না। এটা প্রশাসনের অপব্যবহার। ইতিমধ্যেই মমতার হয়ে দেওয়া মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। নির্বাচনী সভায় গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন, কেন মুখ্যসচিব তার হয়ে সাফাই গাইবেন! কেন নতি স্বীকার করবেন রাজনৈতিক চাপের কাছে! এ প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। উঠে আসছে প্রাক্তন মুখ্যসচিব সমর ঘোষের উদাহরণ, যিনি এক সময় রুল বুক দেখিয়ে বলে দিয়েছিলেন কেন মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া একটি নির্দিষ্ট নির্দেশ মানা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সমর ঘোষের মতো মেরুদণ্ড সোজা করে কেন দাঁড়াতে পারলেন না বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, সে প্রশ্ন উঠেছে আমলা মহলেও।
এই সব প্রশ্নই আবার জোরের সঙ্গে উস্কে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। যে ভাবে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়েও তোপ দেগেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ভোটের আগেই হেরে বসে আছেন মমতা। তিনি আর তাঁর দল এখন আর নির্বাচন লড়ছে না। লড়ছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। মোদীর ব্যাখ্যা, আসলে গণতন্ত্রের প্রতি মমতার কোনও আস্থা নেই। থাকলে নির্বাচন কমিশনের মতো এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ভাবে আক্রমণ শানাতেন না। ‘‘মমতা বলছেন ১৯ মে’র পর নির্বাচন কমিশনকে দেখে নেব। গত পাঁচ বছরে উনি যদি রাজ্যের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দিকটা দেখতেন, তা হলে ১৯ তারিখের পর কমিশনকে দেখে নেওয়ার কথা বলতে হত না’’- বলেন নরেন্দ্র মোদী।
এ দিকে মুখ্যসচিব কাণ্ডে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আঙুল তুলেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তর ভূমিকা নিয়েও। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর কাছে তাঁদের অভিযোগ, মমতা তৃণমূল নেত্রী হিসেবে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি ভেঙেছেন। তা হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে কেন শো-কজের চিঠি পাঠালেন সুনীল! মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছেন না বলেও অভিযোগ বিজেপির। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির দাবি, অবিলম্বে সুনীলকে তাঁর পদ থেকে সরানো হোক।
আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল জৈদীর কাছে দরবার করেন। তাঁরা যুক্তি দেন, তৃণমূলনেত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙছেন দেখে নির্বাচন কমিশন তাঁকে শো-কজ নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলনেত্রী বা তৃণমূলকে সেই শো-কজ নোটিস না পাঠিয়ে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ইচ্ছাকৃত ভাবে, কায়দা করে সে’টি মুখ্যমন্ত্রী মমতার নামে পাঠিয়েছেন। নির্মলাদের অভিযোগ, এ’টি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ স্পষ্টতই অমান্য করা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির চোখকে ফাঁকি দেওয়া। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এই প্রথম এই ধরনের পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ করেছেন, তা নয়। এর আগে এই ধরনের কাজকর্মের উদাহরণও কমিশনের সামনে পেশ করা হয়েছিল। জৈদীর কাছে বিজেপির নেতারা দাবি করেন, যেভাবে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক তৃণমূলকে নির্বাচনী বিধি ভাঙার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তারপরে দেরি না করে এখনই তাঁকে সরানো হোক।
আজ জৈদীর কাছে তৃণমূলকে কমিশনের তরফে সতর্ক করারও দাবি জানিয়েছে বিজেপি। তাঁদের যুক্তি, মমতা নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। রাজ্যের মানুষকে তিনি কমিশনকে অমান্য করার ডাক দিচ্ছেন। মমতার প্ররোচনাতেই অনুব্রত মণ্ডল কমিশনের নির্দেশ ভেঙে সন্ত্রাস ও বেআইনি কাজ চালাচ্ছেন। বীরভূমের ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের খবর মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে বীরভূম জেলায় ভোটগ্রহণ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। বিজেপির প্রতিনিধি দলের সদস্য শ্রীকান্ত শর্মা বলেন, ‘‘আসলে মমতার পায়ের তলার জমি সরছে। তিনি বুঝতে পারছেন, আগের মতো জনসমর্থন মিলছে না। তাই নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। কিন্তু এসব করে অরাজকতা তৈরি করছেন উনি।’’