ঝালদায় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। নিজস্ব চিত্র।
নীলবাড়ির লড়াইকে ‘যুদ্ধ’ হিসাবেই দেখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পুরুলিয়ার জোড়া জনসভা থেকে সেই মর্মেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ‘অভিমান’ ভুলে সকলকে লড়াইয়ে নেমে পড়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
ঝালদা থেকে বলরামপুর, দূরত্ব সড়কপথে ৫০ কিলোমিটারের সামান্য বেশি। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পর, সোমবার প্রথম জেলাসফরে এই দুই জায়গায় তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্য ছিল প্রায় একই সুরে বাঁধা। দুই সভাতেই বিজেপি-কে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, কর্মীদেরও চাঙ্গা হয়ে ওঠার বার্তা দিয়েছেন। সম্প্রতি নন্দীগ্রামে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বিরুলিয়া এলাকায় আহত হন মমতা। তাঁকে কলকাতায় নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাময়িক ভাবে ভোট প্রচারে ছেদ পড়লেও, দিন কয়েকের মধ্যেই হুইল চেয়ারে জেলা সফরে বেরোলেন মমতা।
বলরামপুরের সভায় মমতা বলেন, ‘‘অনেকে ভেবেছিলেন এই অবস্থায় হয়তো বেরোতে পারব না। চিকিৎসকরাও বলেছিলেন, আপনি ১৫ দিন উঠতে পারবেন না। আমি বলেছিলাম, চিকিৎসাটা করে দিন। বাকিটা সামলে নেব। দরকারে হুইল চেয়ারে বসেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাব। আমার শরীরে যন্ত্রণা নতুন নয়। হাজরায় মাথায় মারা হয়েছিল। মাথায় সেলাই রয়েছে। অস্ত্রোপচার হয়েছে। দু’হাতও ভাঙা। হাতেও অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচার হয়েছে চোখেও। মার খেতে খেতেই এই জায়গায় এসেছি। এটা নতুন কিছু নয়।’’ নিজের ‘লড়াই’-এর কথা তুলে ধরার পর দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রতি মমতার বার্তা, ‘‘আমি যদি ভাঙা পায়ে লড়তে পারি, তা হলে তোমরা কেন লড়তে পারবে না?’’ এর পরই তাঁর সংযোজন, ‘‘অভিমান করে ঘরে বসে থাকবেন না, বিজেপি-র বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করুন।’’ বিজেপি-র বিরুদ্ধে মহিলাদের একজোট হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন মমতা।
বলরামপুরের জনসভা থেকেও প্রায় একই সুরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রতি মমতার বার্তা, ‘‘ছাত্রযুবদের আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রতিটি আসনে জান লড়িয়ে দিতে হবে। যুদ্ধ যখন হয় তখন বসে থাকলে চলবে না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, নির্বাচনের সময় চোট পাওয়া পা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর বেরোতে পারবেন না। আর সেই সুযোগে আমরা ডুগডুগি বাজিয়ে নেব। কিন্তু জানে না, আমি ভাঙি তবু মচকাই না। যত ক্ষণ দেহে প্রাণ আছে, কথা বলার ক্ষমতা আছে, যত ক্ষণ শ্বাস থাকবে, কণ্ঠ চলবে, লড়াই চালিয়ে যাব। আমার কণ্ঠরোধ করার দুঃসাহস যেন কেউ না দেখায়।’’