গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সদস্য সুব্রত ঠাকুর। সম্পর্কে তিনি বিজেপি-র সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের ভাই। মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের বড় ছেলে। গাইঘাটা কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করল বিজেপি। রাজ্যে ৩০টি আসনে মতুয়া ভোটারদের প্রাধান্য, লোকসভায় শান্তনুর জয়, বারবার নাগরিকত্ব নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে বার্তা দেওয়া এবং শেষ পর্যন্ত বিজেপি-র প্রার্থিতালিকায় সুব্রতর নাম— এই পাটিগণিতের ফল কী হবে, এখন তার দিকেই তাকিয়ে অনেকে। যা বোঝা যাবে ২ মে।
ঘটনাচক্রে, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে গাইঘাটা আসনে ৩৫ হাজার ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। দ্বিতীয় ঘটনাচক্রে বলছে, এ বার তৃণমূল ঠাকুরবাড়ির কাউকে প্রার্থী করেনি। সেই নিয়ে চাপা ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। মমতাবালাকে প্রার্থী করা হোক, এমন একটা দাবি উঠেছিল মতুয়াগড় থেকেই। কিন্তু সেই দাবিকে আমল দেয়নি ঘাসফুল শিবির। সেই সিদ্ধান্তে মতুয়াদের মধ্যে তৈরি ক্ষোভকেও কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের ব্যবধান, তৃণমূলকে নিয়ে মতুয়াদের অন্দরে ক্ষোভ, এই দুই অনুঘটককে মাথায় রেখেই সুব্রতকে প্রার্থী করা, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ঠিক এক মাস পর, অর্থাৎ ২২ এপ্রিল গাইঘাটায় নির্বাচন। সে দিনই বাক্সবন্দি হবে সুব্রত ভাগ্য।
পরিসংখ্যান দেখলেই বলা য়ায়, বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেতে বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা এলাকার ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের বড় ভূমিকা থাকতে পারে। তা ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর, হাবড়া, সন্দেশখালি, পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর, কালনা, রায়নাতেও মতুয়া ভোট ‘নির্ণায়ক শক্তি’। সব মিলিয়ে এমন আসনের সংখ্যা গোটা ৩০। উত্তরবঙ্গের মালদহ ও জলপাইগুড়ি জেলার অনেক বিধানসভা এলাকাতেও বড় সংখ্যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছেন। মতুয়া মহাসঙ্ঘের একাংশের দাবি, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত রাজ্যের ৮৯টি বিধানসভা এলাকায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেন। সেটা এখন বেড়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে মোট ১০২টি বিধানসভা এলাকায় পৌঁছেছে। তাই অমিত শাহের বেঁধে দেওয়া ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মতুয়া ভোট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ১৫০ থেকে ১৬০টি আসনে জয় পেতে পারে বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে তৈরি হয়েছিল সেই রিপোর্ট। সে নির্বাচনে বিজেপি-কে দু’হাত ভরে ভোট দিয়েছিলেন মতুয়ারা। সেই কারণেই বনগাঁ ও রানাঘাটে জয় পেয়েছিল বিজেপি। সেই ‘স্ট্রাইকরেট’ ধরে রাখতেই সুব্রতকে প্রার্থী করা হল, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সাংসদ হয়েছিলেন মঞ্জুলের দাদা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী মমতাবালাকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তখনই বিজেপি-র হয়ে লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমেছিলেন সুব্রত। কিন্তু সে বার ভাগ্য সহায় হয়নি। ঠাকুরবাড়ির বড় ছেলে পরাজিত হয়েছিলেন মমতাবালার কাছে। ২০১৯ সালে সেই মমতাবালাকেই হারিয়ে দেন ছোট ছেলে শান্তনু। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে দেখা যায়, বনগাঁ ও রানাঘাট কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৪টি বিধানসভার মধ্যে ১২টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। মাত্র ২টিতে তৃণমূল। যে কেন্দ্রে সুব্রতকে প্রার্থী করেছে বিজেপি, লোকসভা নির্বাচনের ফলে সেই গাইঘাটায় ৩৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল পদ্মশিবির। সবটাই মতুয়া ভোটের কল্যাণে। সেই কারণেই জেতা আসনে ঝুঁকি নিতে চাইলেন না মোদী-শাহরা।