যাতে কঠোর ভাবে কোভিড বিধি মানা হয় তার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে ভোট কর্মীদের।
করোনা আবহে ভোটের প্রচারে আগেই রাশ টেনেছিল নির্বাচন কমিশন। এ বার কমিশনের নজরে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র। সেখানেও যাতে কঠোর ভাবে কোভিড বিধি মানা হয় তার উপর জোর দিতে বলা হয়েছে ভোট কর্মীদের। কমিশন সূত্রে খবর, সপ্তম দফার ভোটে প্রতিটি বুথে নিরাপত্তার পাশাপাশি কোভিড বিধি পালনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে কমিশন।
২৬ এপ্রিল, সোমবার সপ্তম দফায় রাজ্যের ৫ জেলার ৩৪ আসনে ভোট গ্রহণ রয়েছে। এই দফায় মোট বুথের সংখ্যা ১২,০৬৮। এর মধ্যে রয়েছে ৯১২৪টি প্রধান এবং ২৯৪৪টি অতিরিক্ত বুথ। কোনও বুথে এক হাজারের বেশি ভোটার হলে অতিরিক্ত ভোটারদের জন্য আলাদা বুথ করা কথা আগেই জানিয়েছিল কমিশন। তাদের মতে, করোনা পরিস্থিতিতে ভোটের লাইনেও দূরত্ব-বিধি মেনে চলা দরকার। তাই একটি বুথে ভোটার বেশি হলে লাইনে অনেক ক্ষেত্রে দূরত্ব-বিধি মানা সম্ভব হয় না। আবার যেখানে দূরত্ব-বিধি মানা হয়, সেখানে সময় অনেক বেশি লাগে। সে কথা মাথায় রেখেই আলাদা বুথে ভোট নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিহার বিধানসভা ভোটেও এই মডেলই অনুসরণ করেছিল কমিশন। তবে তখন কোভিড পরিস্থিতি এখনকার মতো এত খারাপ ছিল না।
কমিশন ভোটের লাইনে দূরত্ব-বিধির কথা বললেও বিগত দফার ভোটগুলিতে অনেক বুথেই নূন্যতম দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে দেখা যায়নি ভোটারদের। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে মনে করছে কমিশন। এই দফায় কমিশনের দেওয়া কোভিডের সমস্ত গাইডলাইন মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিকের এক কর্তা জানান, সপ্তম দফায় কোভিড বিধিতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। প্রথমেই আমরা ভোট পরিচালনার কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের কারোর করোনা সংক্রমণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করব। করোনা ধরা পড়লেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকে শুরু করে রাজ্য পুলিশ, ভোট কর্মী, আধিকারিকরা, এমনকি পর্যবেক্ষকরাও ছাড় পাবেন না। এ ছাড়া বুথের ভিতরে যে সব পোলিং এজেন্ট থাকবেন তাঁদেরও শারীরিক তাপমাত্রা পরিমাপ করা হবে।
করোনা সংক্রমণের জন্য এই দফায় বিশেষ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন। ভোট গ্রহণের পূর্বে সমগ্র বুথ স্যানিটাইজেশন করা হবে। বাদ যাবে না ইভিএম, ভিভিপ্যাটও। বুথের মধ্যে যাঁরা থাকবেন তাঁদের সকলের মাস্ক ও গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক। ভোটের লাইনে মাস্ক ও দূরত্ব-বিধি মেনে চলার পাশাপাশি ভোটারদের জন্য থাকবে হাত শুদ্ধিকরণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এ ছাড়া ভোটারদের জন্যেও থাকবে গ্লাভস। অবশ্য আগের দফাগুলিতেও ভোটারদের জন্য গ্লাভস দেওয়া হচ্ছিল। এ বার তাতে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। বুথের মধ্যে রাখা হচ্ছে অতিরিক্ত মাস্কও। সবমিলিয়ে কঠোর করোনা বিধি পালনে গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। তবে এতে ভোটাররা যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন, তাঁদের সাহায্য করার জন্য থাকবেন ভোটের কাজে যুক্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার আশা কর্মী ও অন্যান্য সহায়ক কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে হু-হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। সংবিধান সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিলেও কোভিড নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেনি তারা। গত সপ্তাহে এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রোষের মুখে পড়েছিল কমিশন। তারপরই ভোট প্রচারে একাধিক বিধিনিষেধ জারি করে কমিশন। নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয় বড় সভা ও মিছিলের উপর। শুক্রবার হাইকোর্ট অবশ্য কমিশনের সদর্থক ভূমিকার কথা জানায়। সোমবার ওই মামলার ফের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে ভোটগ্রহণে আরও কঠোর কমিশন।