নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরাও। —নিজস্ব চিত্র
নন্দীগ্রামে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার যে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট তলব করল নির্বাচন কমিশন। মমতা ‘জেড প্লাস’ ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পান। বস্তুত, ওই ঘটনার পর মমতার নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই দেহরক্ষী এবং রাজ্য সরকারের এসএসইউ-এর (স্পেশাল সিকিউরিটি ইউনিট) সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও। ওই নিরাপত্তারক্ষীরা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁকে চার-পাঁচ জন যুবক এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল বা সকলের সামনে গাড়ির দরজার ঘায়ে তাঁর পা জখম করল (এমনই অভিযোগ করেছেন মমতা), তা নিয়ে প্রত্যাশা মতোই কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা এবং রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের মতে, যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বড়সড় গাফিলতি দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে অবিলম্বে যাঁরা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ওই ইউনিটের প্রধান এখন আইপিএস অফিসার বিবেক সহায়। তাঁর আগে ওই পদে ছিলেন বিনীত গোয়েল। এবং তাঁরও আগে বীরেন্দ্র। ঘটনাচক্রে, যিনি মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্য পুলিশের ডিজি ছিলেন। নির্বাচন কমিশন যাঁকে মঙ্গলবার রাতে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
মমতা অভিযোগ করেছেন, ঘটনা ঘটার সময় জেলার পুলিশ সুপার বা কোনও পদস্থ অফিসার তাঁর কাছাকাছি ছিলেন না। নিরাপত্তা সংক্রান্ত অভিজ্ঞ অফিসারদের বক্তব্য, আদর্শ আচরণবিধি মোতাবেক জেলার পুলিশ সুপার বা তাঁর অধীনস্থ পদস্থ অফিসারদের সেখানে থাকার কথা নয়। মমতা যেহেতু বুধবারেই নন্দীগ্রাম থেকে মনোনয়ন দাখিল করে দিয়েছেন, তাই তিনি এখন সরকারি ভাবে ‘প্রার্থী’। ফলে আদর্শ আচরণবিধি অনুযায়ী জেলার পুলিশ সুপার বা ওই পদমর্যাদার কোনও অফিসার তাঁর আশেপাশে (পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ক্লোজ কর্ডন’) থাকতে পারেন না। থাকলে তাঁরা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার দায়ে পড়বেন। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন তাঁদের বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নেবে। ওই ছোট বলয়ে থাকার কোনও সরকারি অধিকার তাঁদের নেই। তাঁরা থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথের দায়িত্বে। রাজ্যের প্রাক্তন এবং প্রবীণ অফিসার পঙ্কজ দত্তের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসার বিবেক সহায় এবং সহকর্মীরা অত্যন্ত দায়িত্ব এবং নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করছেন। এই ঘটনার জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা উচিত। মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা তাঁর নিজেরই নিরাপত্তা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।’’ রাজ্যের প্রাক্তন আই জি (আই বি) পঙ্কজবাবুরও বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি চাল হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সুপার মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা বলয়ে থাকতে পারেন না।’’
তা হলে ওই বলয়ে থাকার অধিকার কাদের রয়েছে? পুলিশ সূত্রের দাবি, ওই বলয়ে থাকার অধিকার রয়েছে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরপিএফের দুই নিরাপত্তারক্ষীর। যাঁরা বহু বছর ধরেই মমতার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। অধিকার রয়েছে এসএসইউয়ের পদস্থ অফিসার এবং প্রধানের। এমনিতে ‘জেড ক্যাটিগরির’ নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন মমতা। সেই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে কী করে চার-পাঁচজন তাঁকে ধাক্কা মারল, সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশনও। রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছএ কমিশন। রাজ্যের এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তাঁর পা মচকে গিয়েছে। কিন্তু আরপিএফ এবং রাজ্যপুলিশের কর্মীরা তাঁকে বাইরে বেরোলেই ঘিরে রাখেন। সবাই তো ওঁর লোক! কে তাঁকে ধাক্কা মারল? সামনে থেকে না পিছন থেকে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে তদন্ত হওয়া উচিত!”