ফাইল চিত্র।
গত বছর মে মাসে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। ঝড়ের দাপটে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায়। ঝড়ে ক্ষতির দিন কয়েকের মধ্যে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিতর্কে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি। দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ সামনে এসেছিল দুই জেলার নানা জায়গা থেকে। ত্রাণের চাল-ত্রিপল নিয়ে দুর্নীতি থেকে শুরু করে গরিব মানুষের ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ ওঠে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে।
প্রচার পর্বে বার বার আমপান-দুর্নীতিকে তুলে ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, দুই জেলার আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে তৃণমূলকেই ঢেলে ভোট দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। সুবিধা করতে পারেনি বিজেপি।
দক্ষিণে গোসাবা, কুলতলি থেকে সাগর, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘিতে ঝড়ে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। পরে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল প্রায় প্রতিটি জায়গায়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে যাঁদের ক্ষতি হয়নি, তাঁদের টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শাসক দলের একাধিক নেতার পরিবারের লোকজনের নামেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, ত্রাণের চাল-ত্রিপল নিয়েও দুর্নীতি করেন নেতারা। এর প্রতিবাদে বহু জায়গায় বিক্ষোভ, আন্দোলন হয়। ক্রমাগত বিক্ষোভের জেরে কোথাও কোথাও টাকা ফেরত দিতে হয় নেতাদের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ— জেলায় প্রচারে এসে বার বারই তৃণমূলের এই দুর্নীতিকে আক্রমণ করেছেন তাঁরা। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেছিলেন, তৃণমূল নেতাদের আমপান-দুর্নীতি ভোটে তাঁদের সুবিধা করে দেবে। কিন্তু ভোটের ফল বেরোতে দেখা যাচ্ছে, আমপান বিধ্বস্ত কোনও এলাকাতেই বিজেপির ফল ভাল হয়নি। বরং সবগুলি কেন্দ্রই ধরে রেখেছে তৃণমূল।
কী বলছেন সাধারণ মানুষ?
পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা বিমল জানা বলেন, “এটা ঠিক যে আমপানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কিছু নেতা দুর্নীতি করেছেন। কিন্তু এই সরকার যে কাজ করেছে, সেটা মানতেই হবে। দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ খুবই উপকৃত। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধাও অনেকে পাচ্ছেন। বিজেপির থেকে এদেরই অনেক নিরাপদ মনে হয়েছে।”
উত্তর ২৪ পরগনায় বসিরহাটের হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, বাদুড়িয়া, স্বরূপনগরে ঝড়ের প্রভাব পড়েছিল। ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সোচ্চারও হয়েছিলেন এই সব এলাকার মানুষও। ব্লক দফতর ঘেরাও থেকে শুরু করে রাস্তা অবরোধ— কিছুই বাদ যায়নি সে সময়ে। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের সেই প্রতিবাদ ইভিএমে প্রতিফলিত হয়নি। সবগুলি কেন্দ্রেই জিতেছে তৃণমূল।
বাদুড়িয়ার গণপুর এলাকার বাসিন্দা রত্না মণ্ডল বলেন, “আমপানের টাকা না পাওয়ায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলাম। তবে এটাও ঠিক, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে সাইকেল, চাল, বিয়ের
টাকা-সহ নানা সাহায্য পেয়েছি। তাই ঠিক করি, মমতাকেই আবার জেতাতে হবে। নিচুতলার নেতারা আশা করি এ বার শুধরে যাবেন।” আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হিঙ্গলগঞ্জের স্বপন সাহা বলেন, “বিজেপি জিতলে সরকারের সমস্ত প্রকল্প থেকে বাদ যেতে পারি, সেই ভয়েই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছি।”