সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ আগামী শনিবার। তার মধ্যেই সংযুক্ত মোর্চায় ব্যাপক জট পাকতে চলেছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দুর্গে জোটের জট এমন ভাবে পাকিয়েছে যে, চিন্তায় পড়েছেন দু’পক্ষের নেতারা।
মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে সিপিএম প্রার্থী মোদাস্সর হুসেন। জোটে আসনটি সিপিএমের পক্ষে গেলেও, সেখানে কংগ্রেস রেজাউল হককে প্রার্থী করেছে। গত বার সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস গোঁজ প্রার্থী দেওয়ায় তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলাম জিতে যান। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার জোট আলোচনার শুরুতেই সামশেরগঞ্জ আসনের জন্য নিজেদের দাবি জানিয়েছিল সিপিএম। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়েছিলেন অধীর। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন সামশেরগঞ্জ আসনে প্রার্থী দিতে। তাই সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছে রেজাউলকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোটে জট পাকছিল। নতুন করে নওদায় সংঘাত তৈরি হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে।
নওদার কংগ্রেস প্রার্থী পছন্দ নয় সিপিএমের। তাই সিপিএম প্রার্থী দিচ্ছে এই আসনে। নওদা বিধানসভায় সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী পছন্দ নয় স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের। তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েই থেমে থাকেননি, সরাসরি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। সোমবার সিপিএম মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সদস্য শিক্ষক শমীক মণ্ডলকে সামনে রেখে নওদার সিপিএম নেতা কর্মীরা ভোটে লড়বেন বলে জানিয়ে দিয়েছে । তাঁদের দাবি, দলের কাছে কাস্তে-হাতুড়ির প্রতীক চাইবেন। যদি না পাওয়া যায়, তা হলে নির্দল প্রার্থী হিসেবেই নওদা বিধানসভায় শমীককে নিয়ে ভোট যুদ্ধে নামবেন।
এই সিদ্ধান্ত যে দল বিরোধী তা স্বীকার করলেও সদ্য তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া মোশারফ হোসেন ওরফে মধুকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে চাইছে না সিপিএম। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য যে জোট, নওদায় সেই জোটের প্রার্থী ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। নওদায় সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী তথা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন বলেছেন, ‘‘এটা সামগ্রিক ভাবে সিপিএমের সিদ্ধান্ত নয়। স্থানীয় নেতৃত্বের ব্যক্তিগত মন্তব্য। মুর্শিদাবাদ জেলা সিপিএম অবশ্য নওদার সিপিএম নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করছে না। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসও জোটকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন।’’
পুরুলিয়া জেলায় আবার বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বেধেছে কংগ্রেসের। এখানে চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। জয়পুর ও বলরামপুর আসনটি নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে ফরওয়ার্ড ব্লকের। দীর্ঘদিন এই দু’টি আসনে প্রার্থী দিয়ে এসেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। ইতিমধ্যে লিফলেট বিলি করে তারা জানিয়ে দিয়েছে, জয়পুর ও বলরামপুরে বামফ্রন্টের কোনও প্রার্থী নেই। তাই ভোটাররা যেন ভোটের দিন নোটায় ভোট দেন।
এই সব ঘটনাপ্রবাহে জোটের জট ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এমনই পারস্পরিক দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জোট করেও ২৪টি আসনে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস।