—ফাইল চিত্র।
ফের ‘ক্ষুব্ধ’ বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। এর আগে তাঁর ‘ক্ষোভের’ কারণ ছিল, নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর না হওয়া। এ বার বিধানসভা ভোটের মুখে তাঁর ‘ক্ষোভের’ কারণ বিজেপির প্রার্থী তালিকায় তাঁর পছন্দের যথেষ্ট মতুয়া মুখ না থাকা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে রবিবার রাতে দেখা করে সেই ‘ক্ষোভ’ জানিয়েও এসেছেন তিনি।
পূর্ব মেদিনীপুর এবং কলকাতায় রবিবার তিনটি কর্মসূচি সেরে রাতে নিউ টাউনের একটি অভিজাত হোটেলে ছিলেন শাহ। রাতে সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন শান্তনু। বিজেপি সূত্রের খবর, শান্তনু চেয়েছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের অন্যত্রও বেশ কিছু আসনে দল তাঁর পছন্দের মতুয়া প্রার্থী দিক। সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। সেই সংক্রান্ত ক্ষোভ তিনি শাহকে জানিয়েছেন। শান্তনুর বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরও রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে বিজেপির কাছে ৩০টি আসন দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু একটিও পাওয়া যায়নি। বনগাঁ উত্তর, বাগদা এবং গাইঘাটা— এই তিনটি আসনের প্রার্থী বিজেপি এখনও ঘোষণা করেনি। বিজেপি সূত্রের খবর, অন্তত ওই তিনটি আসনে তাঁর পছন্দের মতুয়া প্রার্থী দেওয়ার জন্য রবিবার রাতে শাহকে অনুরোধ করেছেন শান্তনু। কিন্তু শাহ তাঁকেই গাইঘাটায় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। শান্তনু অবশ্য রাজি হননি।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, বনগাঁ উত্তর এবং বাগদা— এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং দুলাল বর যথাক্রমে তৃণমূল এবং কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসেছিলেন এবং দলের অন্দরের সমীকরণে তাঁরা শান্তনুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত। বিধানসভা ভোট ঘোষণার আগে শাহ যে-দিন ঠাকুরনগরে সভা করেন, সে দিন বিশ্বজিৎ সভাস্থলে ঢোকার সময় প্রায় ৪০ মিনিট তাঁকে দাঁড় করিয়ে রাখেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। পরে শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে সভাস্থলে ঢোকেন বিশ্বজিৎ। ঘটনার পিছনে শান্তনুর হাত ছিল বলে বিশ্বজিৎ অভিযোগ করেন। কিছু দিন আগে কলকাতার ধর্মতলায় মতুয়া সমাজের একটি সমাবেশে নাম না করে শান্তনুকে কটাক্ষ করেন দুলালও।
পক্ষান্তরে, শান্তনুও বনগাঁ উত্তর এবং বাগদায় নিজের পছন্দের কাউকে প্রার্থী করতে চান। কিন্তু ওই দুই কেন্দ্রে বর্তমান বিধায়ক বিশ্বজিৎ এবং দুলালের বদলে অন্য কাউকে প্রার্থী করা ‘ঝুঁকি’ হয়ে যেতে পারে বলে বিজেপির একাংশের মত। এই আবহে বিজেপি নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সোমবার ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে শান্তনুর সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্বজিৎ। দু’জনের বিরোধ মেটাতেই দলের এই উদ্যোগ বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা। শাহের সঙ্গে রবিবার রাতের বৈঠক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন শান্তনু বলেন, ‘‘আমি বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নই। তবে বনগাঁ মহকুমার যে তিনটি আসনে দল এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি, সেখানে মতুয়া সমাজ থেকে কাউকে প্রার্থী করার আবেদন জানিয়েছি।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, অশোক লাহিড়ী এবং জেনারেল সুব্রত সাহাও রবিবার রাতে শাহের সঙ্গে দেখা করেন। অশোকবাবুকে আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী করেও তুলে নেয় বিজেপি। কারণ এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, এখন এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় নতুন করে অশোকবাবুর নাম তুলে উত্তরবঙ্গের অন্য একটি আসনে তাঁকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে। সুব্রতবাবুর জন্য দক্ষিণবঙ্গের একটি আসন ভাবা হচ্ছে।